খুলনা, বাংলাদেশ | ৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৮ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ১৬ ডিসেম্বর ঘিরে কোনো ধরণের হামলার শঙ্কা নেই : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  মহাখালীতে সড়ক-রেললাইন অবরোধ শিক্ষার্থীদের, সারা দেশের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন চলাচল বন্ধ

১১ বছরেও ন্যায় বিচায় পায়নি ফেলানীর বাবা-মা

গেজেট ডেস্ক

সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ায় হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর অতিবাহিত হলেও আজও ন্যায্যবিচারের আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম ও মা জাহানারা বেগম।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ’র গুলিতে নির্মমভাবে নিহত ফেলানী হত্যার বিচারহীনতায় পরিবার ও স্বজনরা।

নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও আশা ছাড়েননি, ন্যায্য বিচারের আশায় বুক বেঁধে আছেন তারা।

যা হয়েছিলো সেদিন

সেদিন ছিল হার কাঁপানো প্রচন্ড শীত আর কুয়াশার মধ্যে ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরবেলা কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে ভারত থেকে নিজ জন্মভূমিতে ফেরার পথে বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হয় কিশোরী ফেলানী। ভারত থেকে বাবার হাত ধরে সীমান্ত অতিক্রমের সময় ১৪ বছর বয়সী কিশোরী ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করেছিল বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ।

এরপর মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা মরদেহ প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুঁলে ছিল। মরদেহ কাঁটাতারের বেড়া থেকে নামিয়ে আইনি প্রক্রিয়া শেষে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ফেলানীর মরদেহ হস্তান্তর করেছিল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে। মৃত্যুর তিনদিন পর নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামে ফেলানীর মরদেহ সমাহিত করা হয়েছিল।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠলে ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার কার্য্য শুরু হয়। বিচার কার্য্য পরিচালনার পর এই কোর্ট ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করে রায় দেয়।

ফেলানীর মা জাহানারা বেগম মেয়ে হত্যার বিচার চেয়ে মানবাধিকার সংস্থাসহ বহুজনের কাছে গিয়েও ১১ বছরে কাঙ্ক্ষিত বিচার পাননি।

ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা নিয়ে ফেলানীর বাবা নুর ইসলাম দুইবার কুচবিহারে গিয়ে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ কর্তৃক ফেলানীকে নৃশংসভাবে গুলি করে হত্যাকাণ্ডের সাক্ষ্য দিয়েছি। তারপরও ন্যায্য বিচার পায়নি। ন্যায্য বিচার পাওয়ার জন্য ভারতের সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদন দাখিল করেছেন। শুনানি হচ্ছে না।

ভারতের কোচবিহারে বিএসএফ এর জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে সাক্ষী দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মরদেহ গ্রহণকারী মামা আবু হানিফ। তাকে সহযোগিতা করতে দু’বারই নিযুক্ত হয়ে বিএসএফ এর কোর্টে গিয়েছিলেন কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর এস এম আব্রাহাম লিংকন।

এই রায়ের পর ঐ বছরের ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ  ‘মাসুম’ ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করলে ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়।

২০১৬ এবং ১৭ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি শুনানি দিন ধার্য হলেও হয়নি শুনানি। পরবর্তীতে আরও কয়েকদফা শুনানির দিন ধার্য থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা আজো সম্পন্ন হয়নি।

এর আগে ২০১৩ সালের ২৭ আগস্ট ফেলানীর পিতা নুর ইসলাম ও বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বাদি হয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট আবেদন করেছিলেন। এই দু’টি রিটের শুনানি এক সাথে হওয়ার কথা ছিল।

কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর ও ফেলানী হত্যা মামলার বাংলাদেশ পক্ষের আইনজীবী এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, একাধিকবার মামলার তারিখ পরিবর্তনের পর ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল। ভারতের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এন ভি রামানা ও বিচারপতি মোহন এম সান্তনা গৌদ্ধারকে নিয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চে শুনানির জন্য আইটেম নম্বর-৩ হিসেবে তালিকাভুক্ত থাকলেও শেষ পর্যন্ত হয়নি। অথচ সুপ্রিম কোর্ট থেকে বিবাদীদের শোকজ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা শোকজের জবাব দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে শুনানি হয়নি।
বর্তমানে কার্যতালিকা থেকে বাদ পড়ে আছে রিটটি। করোনার কারণে রিটটির সর্বশেষ অবস্থাও এখন জানা যাচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্স কোর্টে বাদি ছিল বিএসএফ, আসামিও ছিল বিএসএফ এবং বিচারকও ছিল বিএসএফ। ফলে ন্যায্য বিচার পাওয়া যায়নি। সুপ্রিম কোর্টে ন্যায্যবিচার পাওয়া যাবে। আর এই রিট নিস্পত্তি করতে সুপ্রিম কোর্ট যে পর্যবেক্ষণ দিবেন তাতে দু’দেশের সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক প্রভাব রাখবে বলে প্রত্যাশা করছি।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!