খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গ্রেপ্তার

১১ দিন ধরে বন্ধ সারাদেশে ট্রেন চলাচল, দুর্ভোগে যাত্রীরা

গেজেট ডেস্ক

ট্রেন চলাচল বন্ধ ১৭ জুলাই থেকে। কিন্তু কবে নাগাদ ট্রেন চলবে, এমনটাও নিশ্চিত বলতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ। গত ২ দিন আগে কম দূরত্বের মধ্যে ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, কম দূরত্বে চলাচল করা মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন চালানো হলে ঝুঁকি আরও বাড়বে।

এদিকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় প্রতিদিন রেলের ৪ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে। অপরদিকে যাত্রীদের অভিযোগ, দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসায় সড়কে যান চলাচল করলেও ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ট্রেন কবে চালাবে তাও বলা হচ্ছে না। এতে ট্রেনে যাতায়াতকারী হাজার হাজার যাত্রী সাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তারা মনে করেন, এটি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের চরম ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু নয়।

এ প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিম বলেন, ‘আমাদের কাছে যাত্রীদের নিরাপত্তা সবার আগে। ট্রেন নীরব, খাল-বিল, পাহাড়ঘেঁষা এলাকাজুড়ে চলে। বর্তমানে কারফিউ চলছে, একই সঙ্গে স্বাভাবিক অবস্থাও ফিরে আসেনি। এমন অবস্থায় ট্রেন চালানো খুবই ঝুঁকির-শঙ্কার। যাত্রী নিরাপত্তা ও রেল সম্পদ রক্ষায় দেশে পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে এলেই ট্রেন চালানো সম্ভব হবে।’

তিনি বলেন, এমনিতে রেলে ইঞ্জিন ও কোচ স্বল্পতা রয়েছে। এখন যদি ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চালানো হয় সেক্ষেত্রে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটলে এ সমস্যা আরও বাড়বে।

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘রেলওয়ে আইনশৃঙ্খল বাহিনী সতর্কাবস্থাতে আছে। কিন্তু ট্রেন চলে বিভিন্ন জেলাজুড়ে। জেলাভিত্তিকও নিরাপত্তা নিশ্চিত জরুরি। ডিসি, এসপিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যাত্রী ও রেলসম্পদ নিরাপত্তার বিষয়টি শতভাগ নিশ্চিত না হলে ট্রেন চালাতে পারছি না। রেল উন্নয়নে আমূল পরিবর্ত আসছে। রেলবহরে অত্যাধুনিক ট্রেন যুক্ত হচ্ছে, আধুনিক লাইন তৈরি হচ্ছে। এসব স্থাপনায় নাশকতার নীলনকশা তৈরি করছে জামায়াত, শিবির ও বিএনপির সন্ত্রাসীরা। ইতোমধ্যে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে ইঞ্জিন, কোচ, স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছে দেশবিরোধীরা।’

এদিকে শনিবার কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো স্টেশন চত্বর জনশূন্য অবস্থা। তবে নিরাপত্তায় স্টেশনে বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থাতে রয়েছে। দোকানপাট বন্ধ, নির্ধারিত স্থানে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ট্রেন। স্টেশন মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘প্রায় ১১ দিন ধরে ট্রেন চলাচল বন্ধ। কবে নাগাদ ট্রেন চলবে তাও বলা সম্ভব হচ্ছে না। গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলা মৈত্রী ও মিতালী এক্সপ্রেস ট্রেনের অগ্রিম কাটা টিকিট ফেরত নিয়ে সমপরিমাণ টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। বাকি ট্রেনের টিকিট ফেরত নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কাউন্টার এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাটা টিকিটের মূল্য এখনও পরিশোধ করা হচ্ছে না। ইন্টারনেট পুরোপুরি সচল না হলে মূল্য ফেরত সম্ভব হবে না।’

রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রোলিংস্টক) পার্থ সরকার বলেন, ইঞ্জিন-কোচের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বিভিন্ন সময় নাশকতাকারীরা ইঞ্জিন-কোচ জ্বালিয়েও দিয়েছে। এখন যে অবস্থায় চলছে, ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চালাতে গেলে ইঞ্জিন-কোচসহ রেল সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।

এমনিতেই রোলিংস্টক স্বল্পতায় ট্রেন চালাতে হিমশিম খেতে হয়। সরকার প্রয়োজনীয় ইঞ্জিন-কোচ সংগ্রহ করছে। সংগৃহীত ইঞ্জিন-কোচ ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ হলে চরম ক্ষতি হয়ে যাবে।

রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) মো. আরিফুজ্জামান আরিফ বলেন, ‘দেশের অধিকাংশ স্টেশন ডিজিটাল সিস্টেমে পরিচালিত হয়। টিকিট বিক্রি থেকে শুরু করে ট্রেন পরিচালনায় প্রায় ৯৫ শতাংশ কার্যক্রমই ইন্টারনেট-ডিজিটাল সিস্টেমের ওপর নির্ভরশীল। ইন্টারনেটসহ পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরলে ট্রেন চালানো নিয়ে ভাবা যাবে। এছাড়া ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চালানো মানে, যাত্রীসহ রেলের সম্পদ ক্ষয়ক্ষতি হওয়া।’

রেলওয়ে মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী  বলেন, ‘আমরা কিছুতেই ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চালাতে চাচ্ছি না। যাত্রী নিরাপত্তার দিকটি সবার আগে দেখতে হচ্ছে। এছাড়া ইঞ্জিন-কোচসহ রেলসম্পদ রক্ষায় পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে না এলে-ট্রেন চালানো চরম ঝুঁকির হবে।’

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!