খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রীতি ম্যাচ : মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারাল বাংলাদেশ, সিরিজ শেষ হলো ১-১ সামতায়
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ

‘হামাসের সঙ্গে মাটির ওপরে যুদ্ধ করে ইসরাইল জিততে পারবে না’

গেজেট ডেস্ক

গাজায় স্থল হামলার ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে ইসরাইলের সেনাবাহিনী। তবে শুধু মাটির ওপরে যুদ্ধ করে ইসরাইল জিততে পারবে না। গাজার মাটির তলায় শত শত কিলোমিটার বিস্তৃত টানেল বা সুড়ঙ্গে যুদ্ধের জন্য সজ্জিত আছে হামাস যোদ্ধারা। এমনটাই মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকদের মতে, বছরের পর বছর ধরে গোপনে প্রশিক্ষণ নিয়ে ইরান ও আরব বিশ্বের সহায়তায় বিশেষ সক্ষমতা অর্জন করেছে হামাস। ২০০৭ সাল থেকে গাজার নিয়ন্ত্রণ রাখা হামাস গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণে মরণপণ আক্রমণ চালায়।

হামাসের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের একজন আলী বারাকা যেমন বলছেন- ‘প্রয়োজনই উদ্ভাবনের জননী।’ তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ইরান থেকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা পেয়েছে তারা। এর সঙ্গে সহায়তা করছে লেবাননের হিজঙবুল্লাহর মতো দলগুলোও, গাজায় নিজেদের শক্তিবৃদ্ধি করছে তারাও।’

আলী বারাকার শেকড়ও লেবাননে। তিনি জানান, বাইরে থেকে অস্ত্র আমদানি করা ছিল খুব কঠিন একটি ব্যাপার। গত নয় বছর ধরে স্থানীয়ভাবেই অস্ত্র উৎপাদন করেছেন তারা। ২০০৮ সালের যুদ্ধে গাজা থেকে হামাস যেসব রকেট ছুড়েছিল সেগুলো সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার যেতে পারত। ২০২১ সাল নাগাদ তাদের রকেটগুলো ২৩০ কিলোমিটার যাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে।

২০২০ সালে করা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ফিলিস্তিনের সংগঠনগুলোকে ইরান বার্ষিক ১০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়ে থাকে। এর ভেতর হামাস, ইসলামিক জিহাদ ও পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন রয়েছে। হামাসের সক্ষমতা সম্পর্কে জানতে ১১ জনের সঙ্গে কথা বলেছে রয়টার্স, যাদের মধ্যে হামাসের নেতা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সামরিক বিশেষজ্ঞরা আছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাজা উপত্যকায় হামাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র দাবি করে, তারা একটি ছোটখাটো সামরিক বাহিনী। হামাসের একটি সামরিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র আছে, যেখানে সাইবার নিরাপত্তা ও নৌপথে অভিযানের বিষয়ে বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷ এর সামরিক শাখায় রয়েছে ৪০ হাজার সদস্য। গ্লোবালসিকিউরিটি.অর্গ জানাচ্ছে, নব্বই দশকে হামাসের যোদ্ধার সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের কম।

২০০০ সালের পর থেকে সংগঠনটি গাজার মাটির নিচে টানেল বা সুড়ঙ্গ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। এর ফলে যোদ্ধাদের পালিয়ে যাওয়া, স্থানীয় বাসা-বাড়িতে অস্ত্র তৈরির কারখানা ও বাইরে থেকে অস্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে সুবিধা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একটি সূত্র রয়টার্সকে জানায়, দলটি বেশ ভালো পরিমাণে বোমা, মর্টার শেল, রকেট, ট্যাংক ও বিমান বিধ্বংসী মিসাইল তৈরি ও মজুদ করেছে। হামাসের এই উত্তরোত্তর শক্তিবৃদ্ধির ফলাফল দেখা গেছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। ২০০৮ সালের অভিযানের সময় ইসরাইলের নয়জন সেনা নিহত হয়েছিল, ২০১৪ সালে সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬ জনে।

এর আগে গাজায় যুদ্ধ হয় ২০২১ সালে। তখন হামাস ও এর সহযোগি ইসলামিক জিহাদ গ্রুপ তাদের অন্তত ৪০ ভাগ রকেট অক্ষত রাখতে পেরেছিল।

জিউইশ ইন্সটিটউট ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি অব আমেরিকা জানায়, যুদ্ধের আগে তাদের রকেট ছিল ২৩ হাজার। এর মধ্যে ১১,৭৫০টি রকেট তারা রক্ষা করতে পেরেছিল। ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ইসরাইলের বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত হামাস। ইসরায়েল, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, মিশর ও জাপান একে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে হামাস ইরানকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে ইসরাইলকে বিপুল সংখ্যক সৈন্য দিয়ে ঘিরে ফেলা যায়।

হামাসের পাশাপাশি ফিলিস্তিনের অন্যান্য দল এবং লেবাননের হিজবুল্লাহও যুক্ত রয়েছে এই পরিকল্পনায়। ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইসরাইলের দখলদারিত্ব অবসানে আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রতিরোধ গড়তে চায় তারা।

এই দলের নেতারা মধ্যপ্রাচ্যের লেবানন ও কাতারের মতো দেশগুলোতেও ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছেন, তবে এদের মূল ভিত্তি গাজায়। গাজার অধিবাসীদের তারা আহ্বান জানিয়েছেন, ইসরায়েলের হুমকিতে যেন তারা গাজা ত্যাগ না করে। ইতোমধ্যে সেখানে ইসরাইলের বোমা হামলায় ২৮০০ এর বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।

গত ৭ অক্টোবর, গত ৫০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হয় ইসরাইলে। হামাস এদিন হাজারো রকেট নিক্ষেপ করে সীমান্তের বেড়া ভেঙে ইসরাইলে ঢুকে সামরিক ও বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। এই হামলায় ১ হাজার ৩০০ এর মতো ইসরাইলি নিহত হন এবং প্রায় ২০০ জনকে জিম্মি করে গাজায় ধরে আনা হয়।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!