খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারকে প্রধান করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের অনুমোদন দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়, অচিরেই বিচার কাজ শুরু হবে : আইন উপদেষ্টা

হামলার ১১ দিন পর নির্মমতার বর্ণনা দিলেন হাফেজ ইব্রাহিম খলিল

একরামুল হোসেন লিপু

হাফেজ মোঃ ইব্রাহিম খলিল। বয়স ৪৫ বছর। বাড়ি দিঘলিয়া উপজেলার দেয়াড়া গ্রামে। পিতা মরহুম মোঃ সিরাজুল ইসলাম। পেশায় একজন ফার্নিচার ব্যবসায়ী। পরিবার নিয়ে বসবাস করেন দৌলতপুর থানার কার্তিককুল এলাকার মমিন ফকিরের বাড়িতে। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে হাফেজ মোঃ ইব্রাহিম খলিলকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে তার কাছে দুই লক্ষ টাকা দাবি করা হয়, বেদম প্রহার করে ভেঙ্গে দেয়া হয় তার ডান পায়ের রানের হাড্ডি। মারপিটের পর তাদের সহযোগী এক মেয়ের হাত ধরে মাফ চেয়ে বলতে বলে আমি তোমার কাছ থেকে যে এক লক্ষ টাকা নিয়েছি, তা এক মাসের মধ্যে ফেরত দিবো। এটা তারা মোবাইলে ভিডিও করে এবং তাকে হুমকি দিয়ে বলে তুই এই মারপিটের কথা পুলিশকে জানালে আমরা এই ভিডিও ভাইরাল করে দেবো।

তার ২টা মেয়ে এবং ১টা ছেলে কার্তিককুলের ঐ বাড়িতে একা থাকায় তাদের উপর কোন আক্রমণ হতে পারে, গুম হতে পারে, হত্যা হতে পারে, ভিডিও ভাইরাল এবং প্রতিপক্ষের হুমকির ভয়ে এবং আতঙ্কে থানা পুলিশ কিংবা সাংবাদিক কারোর কাছে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছিলেন না। অবশেষে ঘটনার ১১ দিন পর ২০ অক্টোবর হাসপাতালের বেডে শুয়ে এ প্রতিবেদকের কাছে ঐদিন তার উপর ঘটে যাওয়া ঘটনার আধোপান্ত বর্ণনা করেন।

হাফেজ মোঃ ইব্রাহিম খলিল বলেন, ৯ অক্টোবর খানজাহান আলী থানার ফুলবাড়িগেট এলাকা থেকে ব্যবসায়িক কারণে আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল সংলগ্ন আবাসিক এলাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিই। সন্ধা ৬ টার দিকে হাসপাতালের পশ্চিম পাশের গেটে নামার পর জনৈক এক মহিলা ফার্নিচার তৈরির কথা বলে আমাকে বলে আমি বয়রার দিকে যাবো। এই বলে আমাকে ইজিবাইকে উঠতে বলে। এরপর হাসপাতালের সামনের চৌরাস্তার মোড় থেকে তিন যুবক উক্ত ইজিবাইক উঠে চালককে মোস্তর মোড়ের দিকে যেতে বলে। অবস্থা বেগতিক দেখে আমি ইজিবাইক থেকে লাফ দিয়ে বাইরে এসে চিৎকার করে একজন পোশাকধারী পুলিশের সহায়তা চেয়েও পাইনি। এ সময় ঘটনাস্থলে ৩ মোটরসাইকেলে ছয় যুবক এসে ঐ তিন যুবকের সঙ্গে একত্রিত হয়ে আমাকে জোর পূর্বক বয়রা বাজােরের মেইন রোডের পূর্ব পাশে একটি বিল্ডিং এর চার তলায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তারা আমাকে বলে, তুই জমি জমার ব্যবসা করিস, মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিস, তোর কাছে ২ লক্ষ টাকা পায়, তুই এক জমি দুইবার বিক্রি করেছিস। টাকা দে।

এরপর তারা ৭/৮ জন মিলে আমাকে বেদম মারপিট করে। আমার মাথায় প্রচন্ড আঘাত করে। পিঠের উপর একই সঙ্গে ৭/৮ জন উঠে কিল, ঘুষ, লাথি মারতে থাকে। তারা পিটিয়ে আমার ডান পায়ের রানের হাড্ডি ভেঙ্গে দেয়। তারা আমার উপর যে বর্বরতা চালিয়েছে তা ইতিপূর্বে আমি কখনো দেখি নাই। এরপর তারা একটা মেয়ের হাত ধরে আমাকে মাফ চেয়ে বলতে বলে তোমার সাথে যে খারাপ ব্যবহার করেছি আর এক লাখ টাকা নিয়েছি, এই টাকা এক মাসের মধ্যে ফেরত দিবো। তাদের মধ্য থেকে একজন এ কথাগুলো মোবাইল ফোনে ভিডিও করে। ভিডিও ধারণ করার পর তারা আমাকে বলে তুমি যদি এই মারপিটের কথা পুলিশকে বলো, বিচারের আওতায় যাও, তাহলে এই ভিডিও আমরা ভাইরাল করে দেবো। এরপর তারা আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলে এখন তুমি যাও।আমি কিভাবে যাবো? আমার পা ভেঙ্গে গেছে। পা ভেঙেছে কনফার্ম হয়ে তাদের ভীতর থেকে দু’জন আমাকে ধরে নিচে নামিয়ে এনে বলে এখন তুই পঙ্গু হাসপাতালে যাবি, না আড়াইশো বেডে যাবি?

এখান থেকে আমি একটি ইজিবাইক ভাড়া করে ফুলবাড়িগেট শহিদ নাসির ফার্মেসিতে আসি এবং ডাঃ কাজী নেছার উদ্দিন আহমেদ মন্টুর শরণাপন্ন হয়। তিনি আমাকে দেখে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। ওখান থেকে আমি আমার আত্মীয় স্বজনদের সহায়তায় রাতেই খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হই। এক্সরে করার পর দেখতে পাই আমার ডান পায়ের রানের হাড্ডি ভেঙে গেছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আমার পায়ের অস্ত্রোপচার করতে বিলম্ব হবে জেনে আমি ১৩ অক্টোবর বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়। এখানে ১৭ অক্টোবর আমার পায়ের অস্ত্রোপচার করা হয়। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পুলিশের আইজি এবং র‍্যাবের নিকট তিনি তার উপর এ বর্বর হামলার বিচার দাবি করেছেন।

বর্তমানের হাফেজ মোঃ ইব্রাহিম খলিল উক্ত বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে এবং  মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানানা তিনি।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!