খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  হাইব্রিড মডেলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, রাজি পাকিস্তান; ভারতের ম্যাচ দুবাইয়ে : বিসিবিআই সূত্র
  গুমের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২২ সদস্য চাকরিচ্যুত, গুম কমিশনের সুপারিশে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে

হামলার বিচার ও জীবনের নিরাপত্তায় পিসি কলেজ ছাত্রীর সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক, বাগেরহাট

বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি)সরদার ইয়াছির আরাফাত নোমান ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানী, মারধর ও জীবনের নিরাপত্তার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক শিক্ষার্থী।

মঙ্গলবার (৪ ‍জানুয়ারি) দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলন করেন বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজের স্নাতক (সম্মান) ইংরেজী ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসী। এসময় তার শ্বাশুড়ী বাগেরহাট শহরের দশানী ক্রস রোড এলাকার বাসিন্দা রেহেনা চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।

জান্নাতুল ফেরদৌসী ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগ নেতা হাসান চৌধুরী নয়নের স্ত্রী। হাসান চৌধুরী নয়ন সরকারি পিসি কলেজের ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

জান্নাতুল ফেরদৌসী বলেন, ২৯ ডিসেম্বর বাগেরহাট সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে আমার জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষ করে স্বামীর (হাসান চৌধুরী নয়ন) সাথে রিকশাযোগে এসএসসি ও এইচএসসি পাসের মূল সনদ আনতে সরকারি পিসি কলেজে যাই। কলেজ চত্বরে প্রবেশের পর সরদার ইয়াছির আরাফাত নোমানের অনুসারী আব্দুর রহমান শাহ, কাওসার, ইকবাল, বিতাসসহ কয়েকজন রিক্সা অবরোধ করে, কলেজে কেন প্রবেশ করেছি জানতে চায় তারা। আমি বলি মার্কশীট নিতে এসেছি। এই কথা শুনে তারা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। তখন আমরা অতিদ্রুত রিক্সা নিয়ে কলেজ ত্যাগের চেষ্টা করি। এসময় ওরা রিক্সার পিছনের হুড ও আমার বোরকা টেনে ছিড়ে ফেলে। আমার শরীরেও হাত দেয় তারা। এক পর্যায়ে রিক্সাওয়ালা দ্রুত রিক্সা টান দিলে তারা রিক্সার পিছনে ইটের টুকরা ছোড়ে।

রিক্সা নিয়ে বাসার সামনে আসার পূর্বে তিনটি মোটরসাইকেলে আব্দুর রহমান শাহ, কাওসার, আরমানসহ কয়েকজন চলে আসে। তারা আমার ও আমার স্বামীর উপর হামলা করে। সিজারিয়ান রোগী হওয়ায় আমাকে মারধর না করতে হামলাকারীদের উপর অনুরোধ করেন আমার স্বামী। আমাদের ডাক চিৎকারে স্থানীয় লোকজন চলে আসলে হামলাকারীদের হাতে থাকা রামদা দিয়ে আমাদের ভয় দেখায়। এসবের মধ্যে ভিপি সরদার ইয়াছির আরাফাত নোমান ঘটনাস্থলে আসে।তখন আমি ও আমার শ্বাশুরী তার পা জড়িয়ে ধরে আমার স্বামীর প্রাণ ভিক্ষা চাই। এতেও নোমান ভাইয়ের মন গলেনি। তখন আমার বুকের উপর লাথি মেরে বলে, ‘রক্ষিতা তুই চুপ কর। তোর স্বামীকে মারার জন্যই আমি এসেছি।’ সেও আমার স্বামীকে মারধর করতে শুরু করে। নোমান ও তার লোকদের মারধরে আমার স্বামীর ডান পা ভেঙ্গে যায়। এছাড়া আমার স্বামীর হাত ও মাথায় মারাত্মক আঘাত লাগে। এক পর্যায়ে তারা আমার স্বামীর ফোন, ব্যাগে থাকা নগদ টাকা ও আমার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ছিড়ে নেয় তারা।

জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, এসবের মাঝে রাস্তা দিয়ে পুলিশের গাড়ি যাচ্ছিল। সেখান থেকে পুলিশ নোমানকে ধরে নিয়ে যায়। এবং আহত অবস্থায় আমার স্বামী, শ্বাশুড়ী ও আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমার স্বামী এখনও বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পরবর্তীতে আমি বাগেরহাট মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিলেও এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। বরং ওই দিন বিকেলেই অজানা কারণে নোমানসহ অন্যদের ছেড়ে দেয় পুলিশ।

জান্নাতুল ফেরদৌস আরও বলেন, ঘটনার পর থেকে আমার একধরণের নজর দারির মধ্যে রয়েছে। যেখানে যাইনা কেন আমাদের উপর নজর রাখছেন তারা। যেকোন ভাবে আমাকে চেপে যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। আমরা যদি নোমানের বিরুদ্ধে কোন কথা বলি তাহলে আমাদের মেরে ফেলারও হুমকি দিচ্ছে।

২০০৮ সাল থেকে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কলেজে ইয়াবা ব্যবসা, নতুন শিক্ষার্থীদের মারধর, চাঁদাবাজি, সুন্দরী শিক্ষার্থীদেরকে যৌন নির্যাতনসহ নানা অপরাধ করেন নোমান ও তার অনুসারীরা। এসবের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাদের উপরও অত্যাচার করেন ভিপি নোমান।

বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময় ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের জীবনের নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছি।

আহত ছাত্রলীগ নেতা হাসান চৌধুরী নয়নের মা রেহেনা চৌধুরী বলেন, আমার একটা মাত্র ছেলে। আমার ছেলের জীবন এখন সংকটে। আপনারা আমার ছেলেকে বাঁচান এই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এই নারী।

এবিষয়ে সরদার ইয়াছির আরাফাত নোমান বলেন, পিসি কলেজে মাদক, শিক্ষার্থীদের হয়রানী এবং বিভিন্ন অপকর্মের সাথে যুক্ত ছিলো নয়ন। এ কারনে শিক্ষার্থীরা তাকে কলেজ থেকে বের করে দেয়। ইদানিং সে আবার কলেজে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছিলো। তখন কিছু শিক্ষার্থীর সাথে তার হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তাকে কোনো মারধর করা হয়নি। আর শিক্ষার্থীদের সাথে হাতাহাতির সাথে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আজিজুল ইসলাম বলেন, জান্নাতুল ফেরদৌসের অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!