খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাবেক বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম মারা গেছেন
  ভারতে হাসপাতালে আগুন লেগে ১০ শিশুর মৃত্যু

হামলার পর ৪৫ পোশাক কারখানা বন্ধ, র‍্যাবের গাড়িতে আগুন

গেজেট ডেস্ক

সাভার ও আশুলিয়ায় নানামুখী উদ্যোগেও থামছে না শ্রমিক অসন্তোষ। রোববারও কয়েকটি পোশাক কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ওই এলাকার ৪৫টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে মালিক কর্তৃপক্ষ।

আশুলিয়ায় আলিফ ভিলেজ লিমিটেড গ্রুপের তিনটি তৈরি পোশাক কারখানায় ব্যাপক হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। হামলাকারীদের অনেকে মুখোশ পরিহিত ছিল। দুপুরে আশুলিয়া ইউনিয়নের টঙ্গাবাড়ি এলাকার আলিফ ভিলেজ লিমিটেডের আলিফ এমব্রয়ডারি ভিলেজ লিমিটেড, লাম মিম অ্যাপারেলস লিমিটেড ও লাম মিম অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৪০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়।

এ ছাড়া গতকাল সন্ধ্যায় আশুলিয়ার শিমুলতলীতে ইউফোরিয়া নামে একটি কারখানায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। কারখানার কয়েকজন কর্মীকে তারা মারধর করেন। সেখানে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের সঙ্গে যৌথ বাহিনীর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পর র‍্যাবের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নির্মল চন্দ্র।

শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে গত কয়েক দিন নানা উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ)। কারখানার মালিক, শ্রমিক নেতা ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়। এ ছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের নিয়েও হয় সমন্বয় সভা। পুরো আশুলিয়ায় নেওয়া হয়েছিল ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এর পরও আশুলিয়া শিল্প এলাকায় শ্রমিক অসন্তোষ থামানো যাচ্ছে না।

অন্যান্য দিনের মতো গতকালও সকালে বেশ কয়েকটি কারখানায় যোগ দিয়ে এক পর্যায়ে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান শ্রমিকরা। কারখানার ভেতর তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শ্রমিক নেতারা বলছেন, অন্যায্য আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা শ্রমিক নয়। কারা আন্দোলন করছে, তাদের খুঁজে বের করা দরকার। মালিকপক্ষ বলছে, যৌথ বাহিনীর বারবার আশ্বাস দিলেও পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি না হওয়ায় তাদের মধ্যে হতাশা রয়েছে।

শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, সকালে নির্ধারিত সময়ে শ্রমিকরা কারখানায় উপস্থিত হন। আল মুসলিম, মণ্ডল ও নিউ এজ গ্রুপের শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায় না হওয়ায় কাজ বন্ধ করে বসে থাকায় কারখানাগুলো ছুটি দেওয়া হয়। এ ছাড়া আশপাশের কারখানা ছুটির বিষয়টি জানার পর নিরাপত্তার স্বার্থে বেশ কিছু কারখানায় ছুটি ঘোষণা করা হয়।

পোশাক কারখানায় নারী শ্রমিকের চেয়ে পুরুষ বেশি নিয়োগ দিতে হবে– প্রধান এ দাবিসহ আরও কিছু দাবি নিয়ে ১০ দিন ধরে অসন্তোষ চলছে শিল্পাঞ্চলে। পোশাক কারখানায় পুরুষের চেয়ে নারী শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। তবে গত কয়েক বছরে নারী শ্রমিকের হার অনেক কমেছে। গবেষণা সংস্থা ম্যাপড ইন বাংলাদেশের (এমআইবি) পরিসংখ্যান বলছে, পোশাক খাতে নারী শ্রমিকের হার এখন ৫৭ শতাংশে নেমে এসেছে। একসময় এ হার প্রায় ৮০ শতাংশ ছিল।

যৌথ বাহিনী বারবার আশ্বাস দিলেও কেন পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না– জানতে চাইলে বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল  বলেন, সমন্বয়ে বড় ঘাটতি রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন বলতে এখন কিছুই নেই। আগে এ ধরনের পরিস্থিতিতে পুলিশ ও শিল্প পুলিশকে কখনও আইনি, কখনও কৌশলগত ব্যবস্থা নিতে দেখা গেছে। এখন সেটা একেবারেই নেই। শ্রমিক নেতাদের কথা শুনছে না আন্দোলনকারীরা। রাজনৈতিক বৈরিতাও তৈরি হয়েছে। মোটামুটি এসব কারণেই পরিস্থিতি আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।

শ্রমিক নেতাদের মধ্যে বাংলাদেশ অ্যাপারেলস ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের গত সাড়ে ১৫ বছরে পোশাক খাতে মজুরি ইস্যু ছাড়া অন্য কোনো ইস্যুতে আন্দোলন হয়নি। এখন মজুরির বাইরে নানা ইস্যু নিয়ে আন্দোলন প্রমাণ করে, এর পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। আবার কোনো কোনো কারখানায় কিছু কিছু সমস্যা রয়েছে। সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। তাঁর মতে, গত সাড়ে ১৫ বছর একপক্ষ কারখানা থেকে ঝুট, কাটপিস, স্টকলটসহ নানা দিক থেকে সুবিধা ভোগ করেছে। এখন নতুন পক্ষ তৈরি হয়েছে। দু’পক্ষের স্বার্থের দ্বন্দ্বেও শ্রমিকদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব চলছে শ্রমিক আন্দোলনের নামে। এদিকে সরকার পতনের পর পোশাক কারখানা এলাকার যে সন্ত্রাসীরা এলাকাছাড়া হয়েছিল, তাদের অনেকে আবার ফিরে এসেছে।

আলিফ ভিলেজ লিমিটেড গ্রুপের আশুলিয়া জোনের ম্যানেজার এইচআর অ্যাডমিন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স মো. রেফাই সিদ্দিক বলেন, রোববার সকাল থেকেই তাদের তিনটি তৈরি পোশাক কারখানায় ১৫ শতাধিক শ্রমিক কাজে যোগ দেন। পরে সকাল ১০টার দিকে ২০০ থেকে ৩০০ লোক মুখে মাস্ক পরে লাঠিসোটা নিয়ে হঠাৎ তাদের তিন কারখানায় একযোগে হামলা করে। এ সময় মুখোশধারী দুর্বৃত্তরা কারখানাগুলোর মূল গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। কারখানার গ্লাস, ডিজিটাল মেশিন, কম্পিউটার, ফায়ার কন্ট্রোল প্যানেল, বিদ্যুতের সাব-স্টেশন, মেডিকেল সরঞ্জাম, সিসি টিভি, এয়ার কন্ডিশনার, বাগানসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর করে। এ সময় ভাঙচুরে বাধা দেওয়ায় কারখানার নিরাপত্তাকর্মীসহ ২০ জনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে কারখানা থেকে মূল্যবান পোশাক, ল্যাপটপ, মোটরসাইকেল ও মেশিনপত্র লুটপাট করে পালিয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টার হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটে কারখানার মালিক, শ্রমিক ও নিরাপত্তাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কারখানার যে ডিজিটাল মেশিন দিয়ে এমব্রয়ডারি ও প্রিন্ট করা হয়, সেই মেশিনগুলো ভেঙে ফেলায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে কারখানা তিনটির। কারখানার উৎপাদন চালু করতে মেশিনগুলো আনতে ছয় থেকে আট মাস লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

কারখানায় হামলা-ভাঙচুরে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিন কারখানায় এমন হামলার খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জড়িত সন্দেহ কাউকে আটক করতে পারেননি।

এ ব্যাপারে আলিফ ভিলেজ লিমিটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ আকতার হোসেন রানা জানান, তিনি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছেন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!