ইমরানের গাড়িবহর লাহোর থেকে উত্তরে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড ধরে ইসলামাবাদের দিকে এগিয়ে যাবে। এক সপ্তাহে ৩৮০ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে ৪ নভেম্বর ইসলামাবাদে পৌঁছাবে ইমরানের লং মার্চ। পথে বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করে সমর্থন জোরদার করবেন ইমরান।
হাজার হাজার সমর্থক নিয়ে রাজধানী ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পূর্বাঞ্চলীয় শহর লাহোরের লিবার্টি স্কোয়ার থেকে শুক্রবার ইমরানের গাড়ি ও ট্রাকের কাফেলা লং মার্চ শুরু করে। রাজধানীতে পৌঁছে শাহবাজ সরকারকে দ্রুত জাতীয় নির্বাচন দিতে চাপ দেবেন পিটিআই প্রধান।
সংসদীয় ভোটে এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ইমরান পাকিস্তানজুড়ে সমাবেশ করেছেন। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান এমন একটি সরকারের বিরোধীতা করছেন, যারা তার রেখে যাওয়া ভঙ্গুর অর্থনীতি থেকে দেশকে উদ্ধারে লড়াই করছে।
ইমরানের গাড়িবহর লাহোর থেকে উত্তরে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড ধরে ইসলামাবাদের দিকে এগিয়ে যাবে। এক সপ্তাহে ৩৮০ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দিয়ে ৪ নভেম্বর ইসলামাবাদে পৌঁছাবে ইমরানের লং মার্চ। পথে বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করে সমর্থন জোরদার করবেন ইমরান।
পিটিআই কর্মকর্তারা বলছেন, লং মার্চটি শাহদরা, গুজরানওয়ালা, শিয়ালকোট, গুজরাট, ঝিলাম এবং রাওয়ালপিন্ডিতে সমাবেশ করবে।
ইসলামাবাদ পৌঁছানোর আগে লাখ লাখ সমর্থক লং মার্চে যোগ দেবেন বলে ইমরান আশা করছেন। জানিয়েছেন, প্রশাসনের কাছে তিনি রাজধানীতে সমাবেশের অনুমতি চেয়েছেন।
লং মার্চ শুরুর আগে ইমরান বলেন, ‘আমি চাই আপনারা সবাই অংশগ্রহণ করুন। এটি রাজনীতি বা ব্যক্তিগত ফায়দার জন্য নয়… এটা সরকারকে পতনের আন্দোলনও নয়… এটি দেশের প্রকৃত স্বাধীনতা আনার লড়াই।’
পিটিআই সদস্যরা শুক্রবার সাংবাদিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের জোট সরকারের সঙ্গে তারা আলোচনায় বসতে চায়। তবে জন্য সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে হবে।
সরকার বলছে, আগামী বছরের অক্টোবরেই তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন হবে। জবানে ইমরান বলেছেন, তিনি আর অপেক্ষা করতে রাজি নন।
এমন আন্দোলন নতুন কিছু না
লাহোরে সমর্থকরা ‘ইমরান তেরে জাননিসার, বেসুমার, বেসুমার’ স্লোগানে লিবার্টি স্কোয়ারে সকাল থেকেই জড়ো হতে থাকে। এই স্লোগানের অর্থ- ‘ইমরান, অগণিত মানুষ আপনার জন্য তাদের জীবন দিতে রাজি।’
পাঞ্জাবের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশের টোবা টেক সিং শহরের দুই সন্তানের মা লায়লা। তিনি বলেন, ‘স্বামী, ৯ ও ১১ বছরের দুই সন্তান নিয়ে লং মার্চে যোগ দিতে লাহোরে এসেছি। নিরাপত্তা নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন নই। কারণ ইমরান আমার সন্তানদের একটি নিরাপদ ভবিষ্যতের জন্য লড়াই করছেন। লং মার্চ নিয়ে আমরা ইসলামাবাদ যাব, শেষ অবধি থাকব।’
শুক্রবার সকাল থেকে যখন ইমরানের সমর্থকরা লাহোরে জড়ো হচ্ছিলেন, ইসলামাবাদগামী ২৬০ কিলোমিটার (১৬০ মাইল) রাস্তায় তখন বিপুল পুলিশ মোতায়েন হচ্ছিল।
লং মার্চের কৌশলটি আগেও প্রয়োগ করেছেন ইমরান খান। মে মাসে ক্ষমতা হারানোর কয়েক সপ্তাহ পর একটি বিক্ষোভ সমাবেশ করেন পিটিআই প্রধান। ইমরানের মিছিলটি ইসলামাবাদের গুরুত্বপূর্ণ ‘রেড জোনে’ যাওয়ার সময় পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়ে তারা বিক্ষোভকারীদের দ্রুত ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার কোনো ধরনের ভুল করতে চাচ্ছেন না ইমরান। এবারের কর্মসূচি ঘোষণার পরপর সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়ে আসছেন তিনি। নিশ্চিত করেছেন ‘রেড জোনে’ প্রবেশ করবে না তার সমর্থকরা। আদালত এবং স্থানীয় প্রশাসনের অনুমোদিত এলাকায় অবস্থান নেবে তারা। তারপরও সহিংসতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।
জেনারেলদের সমর্থন জরুরি
রাজধানী ইসলামাবাদ চালায় ফেডারেল সরকার। তারা সতর্ক করে জানিয়েছে, কোনো ধরনের ঝালেমা বাঁধলে বল প্রয়োগ করতে দ্বিতীয়বার ভাববে না পুলিশ।
ইসলামাবাদের পাশের প্রদেশ পাঞ্জাব এবং খাইবার পাখতুনখোয়া শাসন করছে পিটিআই সরকার। এ কারণে প্রাদেশিক পুলিশের কাছ থেকে ইমরান সমর্থকরা সহায়তা পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে রাজধানীর নিরাপত্তা জোরদার এবং আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের ফলে সংঘর্ষ এড়ানো কঠিন হতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
জন্মের পর থেকে পাকিস্তান রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ অঘোষিতভাবে দেশটির সেনাবাহিনীর হাতে। তাদের সমর্থন ছাড়া পাকিস্তানের মসনদে কোনো সরকার থিতু হতে পারে না। তিন তিনবার সরাসরি দেশ শাসন করেছে সেনারা। আর প্রভাবশালী এই সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ইমরানের সম্পর্ক খুব একটা ভালো নয়।
এক সময় জেনারেলদের ঘনিষ্ঠ বিবেচিত হলেও, নিজের ক্ষমতাচ্যুতির পেছনে সামরিক বাহিনীর হাত আছে বলে অভিযোগ করে আসছেন ইমরান খান। যদিও সামরিক বাহিনীর দাবি, তারা রাজনীতিতে জড়াতে চায় না।