নতুন করে দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং যুক্তি উপস্থাপন শেষে হল-মার্ক কেলেঙ্কারির এক মামলার রায়ের তারিখ দিয়েছে আদালত।ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে হল-মার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. তানভীর মাহমুদসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় কী রায় হবে, তা জানা যাবে ১৯ মার্চ।
ঢাকার প্রথম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আবুল কাশেম মঙ্গলবার রায়ের এই তারিখ ঠিক করে দেন।
এর আগে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ২৮ জানুয়ারি বিচারক এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য ২৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করে দিয়েছিলেন। কিন্তু দুদকের আইনজীবী মীর আহম্মেদ আলী সালাম সেদিন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণকারী দুই হাকিমের সাক্ষ্য নেওয়ার জন্য নতুন করে আবেদন করেন। বিচারক তা মঞ্জুর করে ৪ মার্চ সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন রাখেন। সে অনুযায়ী ৪ মার্চ আদালতে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দেন এক যুগ আগে মহানগর হাকিমের দায়িত্বে থাকা সাইফুর রহমান ও কেশব রায় চৌধুরী। সে সময় তারা তিনজন আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেছিলেন। তাদের মধ্যে কেশব রায় চৌধুরী এখন ঢাকার একজন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ। আর সাইফুর রহমান হাই কোর্টের রেজিস্ট্রার হিসাবে কর্মরত।
৪ মার্চ সাক্ষ্য শেষে তাদের জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। এরপর আদালত আত্মপক্ষ সমর্থন ও যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ১২ মার্চ তারিখ ঠিক করে দেয়। সে অনুযায় মঙ্গলবার রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে রায় ঘোষণার জন্য ১৯ মার্চ তারিখ দিলেন বিচারক।
এক যুগ আগে সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের ঘটনায় হল-মার্ক গ্রুপের মালিক, কর্মকর্তা এবং সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা হয়। রায়ের পর্যায় থেকে ফের সাক্ষ্যগ্রহণে যাওয়া এ মামলা তারই একটি।
এ মামলার ১৯ আসামির মধ্যে হল-মার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী ও কোম্পানির চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, জেনারেল ম্যানেজার তুষার আহমেদ, সেনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জিএম মীর মহিদুর রহমান, উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. সফিজউদ্দিন আহমেদ, ডিএমডি মাইনুল হক (বর্তমানে ওএসডি), এজিএম মো. কামরুল হোসেন খান (সাময়িক বরখাস্ত) ও নকশী নিটের এমডি মো. আবদুল মালেক কারাগারে।
জামিনে রয়েছে দুই উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শেখ আলতাফ হোসেন (সাময়িক বরখাস্ত) ও সাভারের হেমায়েতপুরের তেঁতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জামাল উদ্দিন সরকার।
এছাড়া প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, সেনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জিএম ননী গোপাল নাথ (বর্তমানে ওএসডি), প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, সহকারী উপমহাব্যবস্থাপক মো. সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মীর জাকারিয়া, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, ডিএমডি (ওএসডি) সোনালী ব্যাংক মো. আতিকুর রহমান ও সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার বর্তমান জ্যেষ্ঠ নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুন্নেসা মেরি পলাতক রয়েছেন।
অস্তিত্বহীন ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের নামে প্রায় ৫২৬ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ২০১২ সালের ৪ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলা করে দুদক।
তদন্ত শেষে দুদক অভিযোগপত্র দিলে ২০১৬ সালের ২৭ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচারের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এ বদলির আদেশ দেন মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা।
দুদকের আইনজীবী মীর আহম্মেদ সালাম জানান, এ আদালতে দুদকের দায়ের করা এ মামলাসহ দুনীতির ১১টি মামলা রয়েছে। এর আগে ৫ ও ৬ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে হল-মার্ক কেলেঙ্কারির কয়েকটি মামলার রায় হয়েছে, তবে সেসব মামলায় তানভীর মাহমুদ বা জেসমিন ইসলাম আসামি ছিলেন না।
খুলনা গেজেট/এমএম