বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় দ্বিখণ্ডিত লাশ উদ্ধার হওয়া সাংবাদিক মনজুরুল ইসলামের (৪৯) মৃত্যু কীভাবে হয়েছে, এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। লাশ উদ্ধারের পর প্রাথমিকভাবে পুলিশ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের কথা বললেও স্বজনেরা অভিযোগ করেছিলেন, পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো থানায় কোনো মামলা হয়নি।
আদমদীঘির মুরইল বাজারের জয় ফিলিং স্টেশনের পূর্ব পাশে গত বুধবার রাতে সাংবাদিক মনজুরুলের দ্বিখণ্ডিত লাশ পড়ে ছিল। স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে খবর পেয়ে তাঁর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মনজুরুল দৈনিক ভোরের কাগজ-এর উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি আদমদীঘি উপজেলার উজ্জলতা গ্রামের মরহুম মোহাম্মাদ আলী মাস্টারের ছেলে।
নিহত সাংবাদিকের ভাই মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার মৃত্যু এমন হতে পারে না। মনজুরুলকে অবশ্যই কেউ হত্যা করেছে। কারণ, তাঁর শরীরের জামাকাপড় স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল। এ ছাড়া শরীরের মাঝখানে কেটে যাওয়া অংশ ছাড়া অন্য কোথাও কোনো ক্ষত নেই।
মামলার বিষয়ে মোশাররফ হোসেন বলেন, এ ঘটনায় তাঁদের মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) থানায় গিয়ে মামলা করবেন। তবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত থানায় কেউ মামলা করতে আসেননি।
আদমদীঘি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজেশ কুমার চক্রবর্তী বলেন, মনজুরুলের মৃত্যুর বিষয়টি পুলিশ গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করলে পুলিশ মামলা নেবে।
লাশ হস্তান্তরের পর গতকাল সন্ধ্যার পরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মনজুরুলকে দাফন করা হয়। পেশায় সাংবাদিক হলেও মনজুরুলের তেমন কোনো শত্রু ছিল না বলে জানান স্বজন ও এলাকাবাসী। আজ দুপুরে মনজুরুলের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের মাতম করতে দেখা যায়। তাঁর স্ত্রী ও দুই বোন আহাজারি করছিলেন।
নিহত মনজুরুলের স্ত্রী রেনুকা পারভীন বলেন, ‘আমার স্বামী সাংবাদিক হলেও তাঁর কোনো শত্রু ছিল না। তিনি অত্যন্ত সাদামাটা একজন মানুষ ছিলেন। এ ছাড়া আমাদের পরিবারেও কোনো সমস্যা নেই। কী কারণে তাঁকে এমন নির্মম মৃত্যুর শিকার হতে হলো বুঝতে পারছি না।’
সাংবাদিক মনজুরুলের দুই বোন রীনা ও রেবেকা দাবি করেন, পুলিশ যেন তাঁর ভাইয়ের হত্যাকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসে। আদমদীঘি প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজার রহমানও একই সুরে বলেন, মনজুরুল সাদামাটা জীবনযাপন করতেন। কীভাবে তাঁর এমন নির্মম মৃত্যু হলো, কেউ বুঝতে পারছেন না।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সাংবাদিক মনজুরুল বুধবার রাত ১০টা পর্যন্ত গ্রামে একটি ক্লাবের অনুষ্ঠানে ছিলেন। সেখানে রাতের খাবার খেয়ে মোটরসাইকেলে তাঁর এক আত্মীয়কে দুপচাঁচিয়া উপজেলার গোবিন্দপুর গ্রামে রেখে বাড়িতে ফিরছিলেন। পথে রাত ১১টার দিকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। স্থানীয় লোকজন সড়কে মনজুরুলের দ্বিখণ্ডিত লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা তাঁর লাশ উদ্ধার করে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। এ সময় তাঁর মোটরসাইকেলটি সড়কের পাশে পড়ে ছিল।
খুলনা গেজেট/ এএজে