বাগেরহাটের চিতলমারীতে হঠাৎ টমোটের দরপতনে চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। এ বছর টমেটোর উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা এ নিয়ে চাষিদের মাঝে সংশয় দেখা দিয়েছে। তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেটকে দায়ী করলেও পাইকাররা বলছেন ভিন্ন কথা। মাত্র দশদিনের ব্যবধানে ৪০ টাকার টমেটো রোববার (১৭ জানুয়ারী) সন্ধ্যায় প্রতি কেজি ৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে পূনরায় দেনাগ্রস্থ হবেন বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
চিতলমারী উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে, এ বছর এ উপজেলায় মোট এক হাজার ৫২৫ একর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। এরমধ্যে হাইটম জাত ৫৭৩ একর, বিউটিফুল-১ জাত ৯৯ একর, লাভলী ১৩১ একর, চক্র ৯৪ একর, পানপাতা ২২১ একর, বিজলী ১২ একর, বিউটিফুল-২ জাত ২৪৭ একর, বিপুল প্লাস ৭০ একর, মেজর ৯৭ একর, বাহুবলী-২ জাত ৭০ একর ও অন্যান্য ২০ একর জাতের টমেটো। প্রথম দিকে বৃষ্টির কারণে অনেক টমেটো চাষির ২-৩ বারও চারা রোপণ করতে হয়েছে। এছাড়াও তারা এবছর নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে টমেটো চাষ করেছেন। প্রতিকুল আবহাওয়াকে মোকাবেলা করে টমেটোর বাম্পার ফলন ফলিয়েছেন। আর এই বাম্পার ফলনকে ঘিরে এ উপজেলার ১৫ হাজার চাষি ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখেছিলেন। প্রথম দিকে প্রতিমন টমেটো দুই হাজার ৮০০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। মাত্র দশদিন আগে প্রতি কেজি টমেটো ৪০ টাকা দরে বিক্রি হলেও রোববার সন্ধ্যায় তা প্রতি কেজি সর্বোচ্চ ৬ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
দূর্গাপুর মোড়ে আড়তে বিক্রি করতে আসা শান্তিপুর গ্রামের টমেটো চাষি শংকর বিশ্বাস, অধির বিশ্বাস, সন্তোষপুর গ্রামের সুব্রত মলঙ্গী, কালশিরা গ্রামের বিপ্লব বিশ্বাস, সুরশাইল গ্রামের শুধাংশু মন্ডল ও পাটরপাড়া গ্রামের মামুন তালুকদার জানান, হঠাৎ টমোটের দরপতনে তারা চরম বিপাকে পড়েছেন। এ বছর টমেটোর উৎপাদন খরচ উঠবে কিনা এ নিয়েও তারা দুঃচিন্তায় আছেন। তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে সিন্ডিকেটকে দায়ী করেছেন। তাদের ভাষায়, সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় পাইকারী ক্রেতারা মিলে চাষীদের ঠকাচ্ছেন।
পাইকারী ক্রেতা মনি মোল্লা ও মোঃ রুহুল আমিনসহ অনেকে জানান, দেশের যে সব অঞ্চলে চিতলমারীর টমেটোর চাহিদা ছিল, সেই সব এলাকায় তাদের উৎপাদিত টমেটো বাজারে উঠেছে। তাই এ অঞ্চলের টমেটোর চাহিদা কমেছে। ফলে এই দরপতন।
চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার বলেন, সারাদেশে কমবেশী টমেটো পাকতে শুরু করেছে। আগাম যত সময় ছিল তত সময় চাষিরা বেশী দাম পেয়েছে। এছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে কোল্ড স্টোর থাকলে চাষীরা টমেটো সংরক্ষণ করে পরে বেশী দামে বিক্রি করতে পারত। চাটনী, জুস উৎপাদন কোম্পানী এগিয়ে আসলেও স্থানীয় চাষীরা ভাল দাম পেত।
খুলনা গেজেট/এ হোসেন