খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ২ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৫৮

স্বামী-স্ত্রীর কান্ড দেখে হেসেছিলেন আল্লাহ

মুফতি সাআদ আহমাদ

(১) -শোন, এই লোক কিন্তু আল্লাহর নবীর মেহমান। যেভাবেই হোক তার যথেষ্ট যত্ন-খাতির করা চাই। এতে যেন কোন ত্রুটি না হয়।

-বুঝলাম নবীর মেহমান কিন্তু বাসায় কিছু থাকলে তবেই তো। বাচ্চাদের কিছু খাবার ছাড়াতো কিছুই নেই।

মদীনার এক ছোট্ট কুঠিরে স্বামী স্ত্রীর মাঝে এসব কথা হচ্ছিল। আর এসব দেখে মিটি মিটি হাসছিলেন আরসে আজীমের মালিক।

(২) রাতে কোথা থেকে এক লোক নবীজি সা. এর কাছে এসেছেন। এই রাতে তার ফিরে যাওয়াও সম্ভব নয়। তাই আজকের রাতটা মদীনাতেই কাটাতে হবে। নবীজি মেহমানের ব্যাপারে বরাবরই বড় সচেতন। মেহমানকে খুশী করা যে আল্লাহকে খুশী করা। চাই সে কাফেরই হোক না কেন। নবীজি মেহমানের কদর করার ব্যাপারে সামান্য কসুর করতেন না।

নবীজি সা. প্রথমে তিনি নিজের স্ত্রীদের কাছে লোক পাঠালেন। কোন ঘরে খাবারের ব্যবস্থা আছে কিনা? তখন নবীজির নয় জন স্ত্রী। কিন্তু কি আশ্চর্য! সবকয়টি ঘর থেকে একই খবর আসল, “আমাদের কাছে পানি ছাড়া কিছু নেই”

মেহমানের কথা যদি বাদও দেই তবু ঘরে যে মানুষটি আছে তার রাত কাটানোর উপায় কি? নয় ঘরের মানুষ আর নবীজি সা. সহ দশ জনের রাতের ব্যবস্থা কেবল পানি। দোজাহানের বাদশাহর ঘরের এই অবস্থা! অবস্য তাদের জন্য এমনটা নতুন কিছু নয়। নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপার।

কিন্তু মেহমানের একটা ব্যবস্থা না করে তো নবীজি স্থির হতে স্বস্তি পাচ্ছেন না। সারা রাত লোকটা উপোস কাটাবে? ভাবতেই নবীজি অস্থির হয়ে উঠলেন। উপস্থিত সাহাবী রাদিয়াল্লাহ আনহুমকে একত্র করলেন। বললেন, আমার এই মেহমানকে আজ রাতের জন্য কে মেহমানদারী করাতে পারবে?

নবীজির চেহারার অস্থিরতা আর ভাষার গাম্ভীর্যতায় তার মনের অবস্থা বুঝে নিতে সাহাবীদের বেশী বেগ পেতে হল না। তবে বাসায় পর্যাপ্ত খাবার আছে কি নেই। আবার এই রাতে খাবার প্রস্তুত করাও তো বেশ ঝামেলার বিষয়। কিন্তু নবীর ইশারায় জান উৎসর্গকারী সাহাবীদের জন্য এসব সাত-পাঁচ ভাবার সময় কোথায়? শুধু নবীজির মুখ থেকে বলার অপেক্ষা মাত্র। একজন আনসারী সাহাবী সাথেসাথে দাড়িয়ে বললেন, আমিই তার দায়িত্ব নিলাম ইয়া রাসুলুল্লাহ।

(৩) নবীজির মেহমানকে সাথে নিয়ে ঘরে প্রবেশ করলেন আনসারী। স্ত্রীকে লক্ষ্য করে বললেন, -শোন, এই লোক কিন্তু আল্লাহর নবীর মেহমান। যেভাবেই হোক তার যথেষ্ট যত্ন খাতির করা চাই। এতে যেন কোন ত্রুটি না হয়।

স্ত্রী ঘরের অবস্থা তুলে ধরে বললেন, ‘‘বাচ্চাদের কিছু খাবার ছাড়াতো কিছুই নেই। এখন উপায়?’’ স্ত্রীর চোখে মুখে প্রশ্নের ছাপ।

উপায় তো একটাই। নিজেরা উপোস কাটাবো আর মেহমানকে আমাদের খাবারগুলো খাইয়ে দিব। খুব স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিলেন সাহাবী।

তাহলে বাচ্চাদের কি হবে? প্রশ্ন করলেন সাহাবীর স্ত্রী।

সাহাবী বললেন- শোন, বাচ্চাদের রাতটুকুর জন্য ভুলিয়ে ভালিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দাও। ওদেরটা সকালে দেখা যাবে।

স্ত্রী বললেন- কিন্তু মেহমান কি আমাদের রেখে খানা খেতে রাজি হবেন? তিনি তো আমাদেরও খানায় শরিক করতে চাইবেন।

সাহাবী বললেন- আমি শিখিয়ে দিচ্ছি শোন, তুমি খাবার প্রস্তুত কর। যখন মেহমান খানা খাওয়া শুরু করবেন, তুমি বাতিটা ঠিক করার ভান করে তা নিভেয়ে দিবে। এমন কি খাওয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত এই অভিনয় করতেই থাকবে।
এদিকে আমি মেহমানের সাথে খানায় শরীক থাকবো আর মুখে চাপুর-চুপুর সব্দ করে যাব। যাতে মেহমান মনে করে, আমি তো খাচ্ছি। তখন সে নির্দিধায় খাবার গ্রহণ করবে। এভাবে তাকে সবটুকু খাওয়ানো হবে এবং সে কোন সংকোচবোধও করবে না।

(৪) পরিকল্পনাটি স্ত্রীর খুব পছন্দ হয়েছে। সুতরাং যথারীতি কাজ শুরু হল। বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে স্ত্রী মেহমানের জন্য খাবার প্রস্তুত করলেন। আর বাতি ঠিক করতে গিয়ে ঘর অন্ধকার করে রাখলেন। ঘন কালো আধারে একে অপরের চোখের আড়াল হয়ে রইলো। আনসারীর চাপুর-চুপুর শব্দের তালে মেহমান সবটুকু খাবার খেয়ে নিলো।

রাতের আধারে মেহমান কিছু যানতে না পারলেও তিনি তো ঠিকই জেনেছেন যিনি আধারেও দেখেন আলোতেও দেখেন। নিকোশ কালো আধারে ঘটে যাওয়া মেহমানদারীর এই দৃষ্টান্ত মহান আল্লাহর বড্ড পছন্দ হয়েছে। নবীর মেহমানের সাথে স্বামী-স্ত্রীর এই কান্ডে তিনিতো হেসেই ফেলেছেন। রাত ফুরানোর আগেই এই সংবাদ জিবরাইলের মাধ্যমে পৌছে দিলেন তার প্রিয় হাবীব সা. এর কাছে।

পর দিন সকালে আনসারী মেহমানকে নিয়ে নবীজির খেদমতে হাজির হলেন। সাহাবী মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই নবীজি তাকে আরশের হাসির খবর শুনালেন। বললেন, তোমাদের দুজনের কান্ডে তো আল্লাহ খুশিতে হেসে ফেলেছেন এবং তোমাদের শানে কুরআনের আয়াত নাজিল করেছেন, (আপনার সাহাবীগন তো) নিজেরা ক্ষুধার্ত থাকা সত্যেও অপরকে প্রাধান্য দেয়। (সুরা হাসর-৯) (সহীহ বুখারীর ৩৭৯৮ নং হাদীস অবলম্বনে)

 

(লেখক-মুফতি সাআদ আহমাদ, শিক্ষক ইমদাদুল উলুম রশিদিয়া মাদারাসা, ফুলবড়িগেট, খুলনা)

খুলনা গেজেট/ এস আই

 

 

 

 




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!