(পূর্ব প্রকাশের পর)
রাজনৈতিক উন্নয়নের ধারা
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণীত হয়। এখন পর্যন্ত সর্বমোট ১৭টি সংশোধনী আনা হয়েছে এ সংবিধানে। যদিও স্বাধীনতা উত্তর রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সমাজতান্ত্রিক চেতনায় উজ্জীবিত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন এক সমাজতান্ত্রিক দেশ গঠন করতে এবং তারই নিমিত্তে তিনি বাকশাল প্রতিষ্ঠিত করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯১ সাল অবধি বাংলাদেশের রাজনীতির অভিজ্ঞতা হল স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের শাসন ব্যবস্থার। যাইহোক, বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থার সরকার পদ্ধতি প্রচলিত আছে। রাষ্ট্রযন্ত্রের তিনটি শাখা: সংসদ, প্রশাসন এবং বিচার ব্যবস্থা। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ এক কক্ষবিশিষ্ট। এতে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ৩০০ জন সদস্য ছাড়াও নারীদের জন্য ৫০টি সংরক্ষিত আসন আছে। প্রতিটি সংসদের নির্ধারিত মেয়াদকাল ৫ বছর। বাংলাদেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল হল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল।
এছাড়াও, জাতীয় পার্টি রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ১৮ বছর বা তদুর্ধ্ব সব নাগরিকের ভোটাধিকার রয়েছে। বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসনে কোনো নির্বাচিত কর্মকর্তা নেই; সরকার নিযুক্ত প্রশাসকদের অধীনে এসব অঞ্চল পরিচালিত হয়ে থাকে। ইউনিয়ন বা পৌরসভার ওয়ার্ডগুলোতে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতি রয়েছে। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের আইন অনুযায়ী ইউনিয়ন পর্যায়ে মহিলাদের জন্য ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করা হয়। এছাড়া শহরাঞ্চলে ১২টি সিটি কর্পোরেশন (ঢাকা-উত্তর, ঢাকা-দক্ষিণ, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, সিলেট, বরিশাল, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ) এবং ৩৩০টি পৌরসভা রয়েছে। এগুলোর সবগুলোতেই জনগণের ভোটে মেয়র ও জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়। এ ছাড়াও দেশ পরিচালনার জন্য বর্তমান সরকারের কাছে আছে বিভিন্ন পদস্ত বিশাল এক কর্মী বাহিনী যাদের সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা
বর্তমান বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর অর্থনৈতিক দেশ থেকে শিল্প নির্ভর দেশে উন্নীত হওয়ার চেষ্টায় রত। গত দশকে মাইক্রোক্রেডিট এবং গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশের কারণে দেশটি জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশের উপরে রেকর্ড করেছে (চিত্র ২)। যদিও বাংলাদেশিদের পঞ্চাশ ভাগ কৃষিক্ষেত্রে কর্মরত আছেন, তবুও রফতানি আয়ের তিন চতুর্থাংশ তৈরি পোশাক উৎপাদন থেকে আসে। যাইহোক, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক আগ্রগতির আলোচনার শুরুতেই চলে আসে জিডিপির প্রসঙ্গ। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে বাংলাদেশের মাথাপিছু ছিল ১২.৫৯৯২ মার্কিন ডলার। ২০২০ সালের আগষ্ট মাসে মাথাপিছু বেড়ে ২০৬৪ ডলারে এসে দাঁড়ায়, যেখানে ১ ডলার= ৮৪ টাকা। এরপর আসে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ যা এখন ৩১.৯০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
বাংলাদেশের অর্থনীতির এ ক্রমবর্ধমান ধারা পর্যালোচনা করে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক এক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ‘ক্রেডিট সুইসের’ বৈশ্বিক সম্পদ প্রতিবেদন ২০১৮ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ২,৩৩২ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছিল। যেখানে ২০০০ সালে বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ ছিল ১,১৩৮ মার্কিন ডলার। আবার, এ প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০০ সালের বাংলাদেশের মানুষের সম্পদের সর্বমোট মূল্যমান সম্পদের পরিমাণ ছিল ৭,৮০০ কোটি মার্কিন ডলার যা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৮-এ ২৪,০০০ কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছিল। এ ক্রমবর্ধমান ধারা এখনও অব্যাহত আছে। আবার, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক খানা জরীপ অনুযায়ী সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ মানুষের আয় দেশের সর্বমোট জাতিও আয়ের মাত্র ০.২৩ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত করে যে আয়বণ্টনের অসমতা গত এক দশকে বৃদ্ধি পেয়েছে, কেননা ২০০০ সালে দেশের সর্বমোট আয়ে সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ মানুষের অংশ ছিল ০.৭৮ শতাংশ। একইভাবে দেশের সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ মানুষের আয় ২০০০ সালে মোট জাতীয় আয়ের ২৪.৬১ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২৭.৮৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। দেশের অন্যতম অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী আয় বণ্টনের অসমতার সূচক গিনিসহগের (GINI coefficient) মান বৃদ্ধি পেয়ে ০.৪৮ এ পৌঁছেছে।
অপরদিকে, একটু অতীত অধ্যায় পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, ১৯৮০’র দশক থেকে শিল্প ও সেবা খাতের ব্যাপক সম্প্রসারণ সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি অদ্যাবধি কৃষিনির্ভর। কারণ দেশের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ এখনও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষিজীবী। দেশের প্রধান কৃষিজ ফসলের মধ্যে রয়েছে ধান, পাট এবং চা। দেশে আউশ, আমন, বোরো এবং ইরি ধান উৎপন্ন হয়ে থাকে। পাট, যা বাংলাদেশের ‘সোনালী আঁশ’ নামে পরিচিত, এক সময় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান উৎস ছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার অধিকাংশ আসে রফতানিকৃত তৈরি পোশাক থেকে এবং অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার বেশিরভাগ ব্যয় হয় একই খাতের জন্য কাঁচামাল আমদানীতে। এজন্য এই শিল্প খাতকে বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফ লাইনও বলা হয়। সস্তা শ্রম ও অন্যান্য সুবিধার কারণে ১৯৮০-র দশকের শুরু থেকে এই খাতে যথেষ্ট বৈদেশিক ও স্থানীয় বিনিয়োগ হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তৈরী পোশাক রপ্তানীর পরিমাণ ছিল ২৮ দশমিক ১৫ বিলিয়ন কোটি মার্কিন ডলার। বর্তমানে এ খাতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, যাদের ৯০%-ই নারী শ্রমিক। পোশাক শিল্পের পর রেমিট্যান্স হল বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উৎস। অর্থ মন্ত্রনালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২০ সালে অভ্যন্তরীণ রেমিটেন্সের প্রবাহ বেড়েছে ২১.৪৭৪ বিলিয়ন ডলার। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশীরা দেশে পাঠানো অর্থের পরিমাণ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ২.০৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছিল, যা আগের মাসে ২৭.৫২ মিলিয়ন ডলার কমেছে। অন্যান্য লাভজনক শিল্পগুলির মধ্যে ওষুধ শিল্প, শিপ বিল্ডিং শিল্প, তথ্য প্রযুক্তি, চামড়া শিল্প, ইস্পাত শিল্প এবং হালকা প্রকৌশল শিল্পগুলি অন্যতম।
যদিও একসময় নানা অর্থনৈতিকসূচকে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অবস্থান পেছনের সারিতে ছিল, তবে বিশ্ব ব্যাংকের ২০০৫ সালের দেশভিত্তিক আলোচনায় এদেশের শিক্ষা, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য সামাজিক খাতে উন্নয়নের প্রশংসা করা হয়েছে। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতিবছর বাংলাদেশ গড়ে ৫% থেকে ৬.২% শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে এসেছে। মধ্যবিত্ত ও ভোক্তা শ্রেণীর প্রসারণ ঘটেছে দ্রুত। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে গোল্ডম্যান স্যাক্স-এর বিশ্লেষণে বাংলাদেশকে আগামী ১১ দেশর মধ্যে গণ্য করা হয়েছে। বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে সারা দেশে চালু হওয়া ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচী।
দেশের শিল্প ও রফতানির উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা (ইপিজেড) স্থাপন করেছে। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বা বেজা এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। বর্তমানে যার সংখ্যা সারকারি ৮ টি এবং বেসরকারি ২ টি। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এই সংখ্যাটি হতে যাচ্ছে ৮৮ টি। বেজা এখনও অবধি ৫৯ টি সরকারী ও ২৯ টি বেসরকারী অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন পেয়েছে। এই অনুমোদিত ইপিজেডগুলির জন্য সম্ভাব্যতা অধ্যয়ন, জমি অধিগ্রহণ এবং অঞ্চল নির্দিষ্ট সামাজিক এবং পরিবেশগত উদ্যোগগুলি সনাক্তকরণ চলছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে, সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাকে উন্নত করতে যমুনা নদীর উপরে ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতু ১৯৯৮ সালের জুন মাসে উদ্বোধন করা হয় যা রাজধানী ঢাকাকে উত্তরবঙ্গের সাথে সরাসরি সংযুক্ত করে। এছাড়াও ৬.১ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ চলছে যার মাধ্যমে ভবিষ্যতে রাজধানী ঢাকা ও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশ সংযুক্ত হবে। অন্যান্য বৃহৎ সড়ক সেতু হচ্ছে: জাপান-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু, মেঘনা-গোমতী সেতু, বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য মৈত্রী সেতু, ত্বরা সেতু, চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু ১, চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু ২, শীতলক্ষ্যা সেতু, কর্ণফুলি সেতু ইত্যাদি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের সময় বাংলাদেশে রেলপথ ছিলো ২৮৫৭ কিলোমিটার।
২০০৮-২০০৯ সালের হিসাব মতে, বাংলাদেশে রেলপথ ছিল ২৮৩৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশকে ট্রান্স এশীয় রেলওয়ে জালের সঙ্গে সংযোজনের জন্য চট্টগ্রামের দোহাজারি থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ অবধি ১২৮ কিলোমিটার রেলসড়ক স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই রেলসড়ক মিয়ানমারের গুনদুম রেলস্টেশনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। এছাড়াও বর্তমান সরকার রেলসেবা খাতে উন্নয়নের প্রচেষ্টায় রত আছে। এছাড়াও,বাংলাদেশে প্রায় ৮৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ অভ্যন্তরীণ নাব্য জলপথ রয়েছে। এর মধ্যে ৫৪০০ কিলোমিটার সারা বছর নৌচলাচলের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। অবশিষ্ট প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার শুধু বর্ষাকালে ব্যবহৃত হয়। উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বাংলাদেশ সরকার পানিপথে পণ্য পরিবহনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যার লক্ষ্যে অবৈধ নদী-খাল দখল, নদী খনন,এবং নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। নিঃসন্দেহে,সমুদ্রবন্দর একটি দেশের রফতানি ও আমদানি বাণিজ্যের দুয়ার হিসেবে পরিচিত। বর্তমান বাংলাদেশ ৪ টি সমুদ্র বন্দরের মালিক হতে যাচ্ছে, যার মধ্যে মাতারব বাড়ি এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর হতে যাচ্ছে গভীর সমুদ্র বন্দর। যাইহোক বর্তমানে, দেশের রফতানি ও আমদানি বাণিজ্যের সিংহভাগ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর, মোংলা সমুদ্র বন্দর ও বেনাপোল স্থলবন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। বিশ্ব অর্থনীতি এবং রাজনীতিতে বন্দর কৌশল (port strategy)খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। যার উদাহরণ আমারা দেখতে পায়, হংকং, মালয়েশিয়া, সিংগাপুরের মত দেশগুলির দিকে তাকিয়ে। এছাড়াও খুব দ্রুত বাংলাদেশ রুপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বাংলাদেশ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে এসেছে আমুল পরিবর্তন। বর্তমানে দেশের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের আয় ১০০ কোটি ডলার। ২০২১ সাল নাগাদ এ আয় ৫০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রযুক্তির বিকেন্দ্রীকরণের জন্য দেশব্যাপী ২৮টি হাইটেক পার্ক করা হয়েছে। নতুন দশকের শুরুতেই ফাইভ-জি প্রযুক্তি মানুষের কাছে চলে আসবে। এ প্রযুক্তির হাতে ধরেই আসবে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স, রোবোটিকস ও বিগ ডেটা এনালাইসিসের মতো নানা কাজ। দেশের বাইরে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন সফটওয়্যার নির্মাতারা। বাংলাদেশের অনেক অভিনব উদ্যোগ দেশের বাইরেও সমাদৃত ও পুরস্কৃত হয়েছে। তথ্য ও প্রযুক্তির এই অভূতপূর্ব উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের করোনাভাইরাস এর মত মহামারি মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। করোনা মহামারি অর্থনৈতিক অভিঘাত মোকাবিলায় সরকার বিভিন্ন ক্যাটাগরির শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের জন্য ৭২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। দ্রুততার সাথে প্রণোদনা ঘোষণা এবং বাস্তবায়নের ফলে দেশের শিল্পখাত ক্রমেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। তৈরি পোশাক এবং ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পখাতকে শক্তিশালী করে কর্মসংস্থান ও রপ্তানি বৃদ্ধির সুযোগ করে দিতে হবে। করোনা মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা ও কর্মোদ্যেগ বিশ্বখ্যাত দ্যা ইকোনমিস্ট, ফোর্বস, ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হয়েছে। দ্যা ইকোনমিস্ট এর গত ২ মে ২০২০ গবেষণামূলক এক প্রতিবেদনে ৪টি মানদণ্ডের ভিত্তিতে ৬৬টি উদীয়মান সফল অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান নবম। এই সকল উন্নয়ন অগ্রগতি বিশ্লেষণে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস (পিডবিউসি)এর গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে ২০৫০ সালে বিশ্বের ২৩ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। আর এভাবে এগোলে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার হবে বিশ্বের ২৮ তম। এজন্য বাংলাদেশকে এখন বলা হয় ‘পরবর্তী এশিয়ান বাঘ।’ (চলবে)
(লেখক : অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়)
খুলনা গেজেট/কেএম