খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ইসি গঠনে সার্চ কমিটির ১০ জনের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে প্রদান
  সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের তিন সহযোগী গ্রেপ্তার
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১০৩৪
  যাত্রাবাড়িতে ব্যাটারিচালিত অটো রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষে দুই পুলিশ আহত

স্বপ্নের রেলস্টেশনের পর্দা উঠবে আজ

গেজেট ডেস্ক

বৃটিশ-পাকিস্তান পিরিয়ড ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের স্বপ্ন দেশের সর্বদক্ষিণ জেলার সাথে সরাসরি রেল সংযোগ। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে বহু সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। কিন্তু কোনো সরকারই কক্সবাজারে রেল সংযোগের বিষয়ে মাথা ঘামায়নি। তবে, ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পরই রেল সংযোগে সারাদেশের সাথে কক্সবাজারকে যুক্ত করতে প্রকল্প হাতে নেয় আওয়ামী লীগ।

সেই প্রকল্পের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকমানের আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে পর্যটন শহর কক্সবাজারে। এই স্টেশনে রয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত সবধরনের ব্যবস্থা। শুধু রেল যোগাযোগের জন্য নয়, পর্যটনের নতুন অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচ্য হচ্ছে দেশের একমাত্র আইকনিক এই রেলস্টেশন, এমনটি অভিমত কক্সবাজারের সচেতন মহলের।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পালা শেষ হচ্ছে আজ শনিবার (১১ নভেম্বর)। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলস্টেশন ও দোহাজারী-কক্সবাজার নবনির্মিত রেললাইনের উদ্বোধন করবেন আজ। শুধু রেলপথ ও আইকনিক রেললাইন স্টেশন নয়, এ দিন সমাপ্ত হওয়া ১৩টি প্রকল্প উদ্বোধন এবং ৩টি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য ফলক তৈরি করা হয়েছে। উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তরযোগ্য প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ৫৫ হাজার কোটি টাকা।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরে ঝিলংজায় ২৯ একর জমিতে দুইশ ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে চোখ ধাঁধানো রেলওয়ে স্টেশন। মূল স্থাপনাটি যেন সমুদ্রের ঝিনুকেরই বিমূর্ত রূপ। ছাদটি স্টিলের তৈরি ক্যানোপি, আর চতুর্পাশে রয়েছে কাঁচের দেয়াল। দিনের আলো সরাসরি প্রবেশ করবে স্টেশনের ভেতরে। অত্যাধুনিক নির্মাণশৈলী ও পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যও এতে দৃশ্যমান।

প্রখ্যাত স্থপতি মোহাম্মদ ফয়েজ উল্লাহর স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান ভলিউমজিরো লিমিটেড এর স্থাপত্য নকশা করেছে বলে জানা গেছে।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের পরিচালক মো. সুবক্তগীন গণমাধ্যমকে বলেছেন, ছয়তলার এই স্টেশনে রয়েছে চলন্ত সিঁড়ি, মালামাল রাখার লকার, হোটেল, রেস্তোরাঁ, শপিংমলসহ আধুনিক সব সুবিধা। ৪৬ হাজার মানুষের ধারণ ক্ষমতা সম্বলিত স্টেশনটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এতে আছে কনভেনশন হল, ট্যুরিস্ট ইনফরমেশন বুথ, এটিএম বুথ, এমনকি প্রার্থনার স্থানও। স্টেশনে ফুড কোর্ট, হোটেল ও শপিং কমপ্লেক্সের বিষয়টি বাইরের এজেন্সি দ্বারা টেন্ডারিংয়ের মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে।

ভবন ও আশপাশের রেলপথ নির্মাণ কাজের প্রকৌশলী এনামুল হক সরকার এনাম বলেন, অবকাঠামোসহ আইকনিক স্টেশন ভবন পর্যটক বরণে পুরোপুরী প্রস্তুত। সামগ্রিকভাবে প্রায় ৯২শতাংশ কাজ শেষ। রেলপথের সক্ষমতা যাচাইয়ে ৫ নভেম্বর পরিদর্শন রেল এসে ঘুরে গেছে। ১১ নভেম্বর উদ্বোধনের জন্য স্টেশনে এসেছে আধুনিক সুবিধার একটি ট্রেন। উদ্বোধনের পরপরই সম্ভব না হলেও মাস দেড়েক পর বাণিজ্যিকভাবে কক্সবাজারে রেল যোগাযোগ শুরু করা যাবে বলে। তবে কার্যাদেশ অনুসারে চলতি অর্থবছরের শেষসময়ে কাজ পুরোপুরি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

দোহাজারী-কক্সবাজার ও মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১০ শুরু হয়ে ২০১৩ সালে শেষ হবার কথা ছিল। তবে, ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল একনেকে অনুমোদিত হয় এবং এ লাইনে ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। কিন্তু জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালে সংশোধিত প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকায়। এই বাজেটে এডিবি ঋণ দেয় ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা আর বাকি চার হাজার ৯১৯ কোটি সাত লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে।

একনেক অনুমোদনের পর, প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০১০ সালের ১ জুলাই-২০২২ সালের ৩০ জুন ধরা হয়। এ রেলপথ নির্মাণে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলায় এক হাজার ৩৬৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে ঠিকাদারকে বুঝিয়ে দিতে বিলম্ব হয়। প্রকল্পের ১৬৫ একর সংরক্ষিত বনাঞ্চল ডি-রিজার্ভকরণসহ প্রকল্পে ব্যবহারে অনুমতি পেতে কালক্ষেপণ হয়। ২০১৯ সালের শেষাংশে শুরু হয় সংরক্ষিত বনাঞ্চলভুক্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকার গাছপালা কাটা ও ভৌত কাজ। পিজিসিবি, বিপিডিবি ও বিআইবি’র বৈদ্যুতিক টাওয়ার ও পোল স্থানান্তরে চারদফা বৈঠক হয় আন্তঃমন্ত্রণালয়ে। এসবের সাথে যোগ হয় করোনা মহামারি। ২০২০ সালে প্রায় দেড়মাস বন্ধ থাকায় প্রকল্পের কাজে বিঘ্ন ঘটে। বিশ্বব্যাপী লকডাউনের কারণে আমদানিকৃত বিভিন্ন মালামাল সঠিক সময়ে দেশে এসে পৌঁছেনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে সবকাজ শেষ হতে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এই সময়ের আগেই আজ ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজার রেলপথ ও আইকনিক রেল স্টেশন উদ্বোধন করবেন।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!