খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: প্রথম দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলল ২৫০, বাংলাদেশ পেল ৫ উইকেট

তীব্র শীতে স্কুল ছুটি : চার ঘণ্টায় তিন রকম নির্দেশনা, তবুও অস্পষ্টতা

গেজেট ডেস্ক

যেসব জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে, সেসব জেলার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ নিয়ে মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আলাদা আলাদা অফিস আদেশ জারি করে। একটি আদেশ চার ঘণ্টার মধ্যে তিন দফায় পরিবর্তন করেছে মাউশি।

প্রথম অফিস আদেশে বিকেলে মাউশি জানায়, শৈত্যপ্রবাহের কারণে যেসব জেলার তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে সেসব জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকবে।

ঘণ্টাখানেক পরেই মাউশি নির্দেশনাটি সংশোধন করে। সেখানে বলা হয়, যেসব জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামবে, সেসব জেলার স্কুল বন্ধ থাকবে। কিন্তু তা নিয়েও বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। কারণ সর্বোচ্চ তাপমাত্রার বিষয়টি অস্পষ্ট ছিল। এটি ২৪ ঘণ্টার গড় তাপমাত্রা নাকি নির্দিষ্ট সময়ের তাপমাত্রা সেটিও স্পষ্ট করে বলা ছিল না।

সর্বশেষ রাত সাড়ে ৮টার দিকে দ্বিতীয় দফা সংশোধনী দেয় মাউশি। এতে ‘সর্বোচ্চ তাপমাত্রা’ কথাটি বাদ দেওয়া হয়। বলা হয়, দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার নিচে নামলে আলোচনার মাধ্যমে স্কুল বন্ধ রাখা যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে কিছুটা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ নির্দেশনায় বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কথাটি না রাখা নিয়ে কথা হচ্ছে। মূল বিষয়টি হচ্ছে—তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অথবা এর নিচে নামলে এবং এ সংক্রান্ত প্রমাণক থাকলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা যাবে।’

তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ও বন্ধের নির্দেশতাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ও বন্ধের নির্দেশ
মাউশির সর্বশেষ অফিস আদেশে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন জেলায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহ চলছে। চলমান এ শৈত্যপ্রবাহে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যেসব জেলায় দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে (সংশ্লিষ্ট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী) নেমে যাবে, আঞ্চলিক পরিচালকেরা ওই সব জেলার শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ (দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর ওপরে না ওঠা পর্যন্ত) রাখার নির্দেশনা দেবেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশে ‘সর্বোচ্চ তাপমাত্রার’ কথাটি উল্লেখ রয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, যেসব জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে (আবহাওয়ার পূর্বাভাসের প্রমাণসহ) নেমে যাবে, সেসব জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শীতের তীব্রতা ও স্থানীয় বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিয়ে সাময়িকভাবে বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া যাবে। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় উপপরিচালকেরা ওই নির্দেশনা দিতে পারবেন। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা যাবে। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই আদেশ বলবৎ থাকবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অবশ্য রাতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, ‘দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অথবা এর নিচে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকবে।’

মাউশির সিদ্ধান্ত বদল, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে মাধ্যমিক স্কুল বন্ধমাউশির সিদ্ধান্ত বদল, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নামলে মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ
এর আগে গত জুনে টানা তাপপ্রবাহের কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ করতে হয়েছিল সরকারকে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ৪৩ বছরে কখনোই দেশের গড় তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। সাধারণত প্রতিবছর তাপমাত্রা গড়ে ১১ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে।

আবহাওয়া অফিস ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল কক্সবাজারে—২৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ ড. মোহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক  বলেন, ‘১৯৮১ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এ সময়ের মধ্যে কখনোই তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামেনি। শুধু ২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুরের তাপমাত্রা নেমেছিল ১০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সাধারণত তাপমাত্রা ১১ থেকে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে।’

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি তেঁতুলিয়ায় দেশের ইতিহাসের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৯৬৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি শ্রীমঙ্গলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। এ ছাড়া ২০২১ সালের জানুয়ারিতে তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

স্পষ্টত, এলাকাভিত্তিক তাপমাত্রা বিবেচনায় নিলে সরকারের এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে জটিলতা তৈরি হবে। এখানে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাস নাকি এক সপ্তাহের পূর্বাভাস, নাকি দৈনিক রেকর্ডকৃত তাপমাত্রা বিবেচনায় নেওয়া হবে সেটি স্পষ্ট নয়। যদি দৈনিক রেকর্ডকৃত তাপমাত্রা বিবেচনায় নেওয়া হয় তাহলে প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষার্থী বা অভিভাবকদের কীভাবে সিদ্ধান্তটি জানানো হবে তা নিয়ে কর্তৃপক্ষ কিছু বলেনি।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!