খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনা, বরিশালে আজ বৃষ্টি হতে পারে

স্কুলছাত্র নিরব হত্যায় অভিযুক্তদের আদালতে দায় স্বীকার

ডুমুরিয়ার এসিজিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নিরব মন্ডল হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে আসামিরা। তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২ এর বিচারক রনক জাহান তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

আদালতের সূত্র জানায়, শুক্রবার বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ৫ জন আসামি পর্যায়ক্রমে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জাবানবন্দি প্রদান করে। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় আসামীদের শনিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) সংশোধানাগারে পাঠানো হবে।

 আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে যে তথ্য পেল পুলিশ :  গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা দেড় মাস আগে ভারতের জনপ্রিয় সিরিয়াল ক্রাইম পেট্রোল দেখে অপহরণের বিষয়ে তামিল নেয়। এ সময় থেকে তারা নিবর মন্ডলকে টার্গেট করে। সুযোগ খুঁজতে থাকে কিভাবে নিরবকে অপহরণ করা যায়। তারা ৫ জনের একটি টিম গঠন করে। সে সময় থেকে তাদের কি ভুমিকা থাকবে তা তারা সিদ্ধান্ত নিতে থাকে। আসামি হিরক স্বরসতী পূজার আগে ও পরে নিরবকে অপহরণের টার্গেট নেয়। কিন্তু প্রথম ধাপে সে সফল হতে পারেনি। এরপর দায়িত্ব নেয় পিয়াল কিন্তু সেও ব্যর্থ হয়।

সর্বশেষ তাকে বৃহস্পতিবার মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নিরব মন্ডলকে ডেকে নেয় আসামিরা। এর আগে হত্যাকাণ্ডের স্থানে অভিযুক্ত স্কুলছাত্র পিতু বাড়ি থেকে নাইলনের রশি, তালা ও চাবি নিয়ে অবস্থান করতে থাকে। অপেক্ষার  পর নিরবকে স্কুলের পাশে ওই পরিত্যাক্ত ভবনে নেওয়ার সাথে সাথে  পিতু বা দ্বিপ গলায় রশি পরিয়ে দেয় নিরবের গলায়। কিছু বুঝে ওঠার আগে গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করা হয়। মরার আগে নিরব সমস্ত শরীর নাড়া দিলে ভয় পেয়ে যায় আসামিরা। পিতু গলার দড়ি খুলে দেয় আর পিয়াল নিরবকে ধরে রখে। নিরবের মৃত্যুর পর বাবা শেখর মন্ডলকে ফোন দেয় পিতু ।এ সময় পাশে দাঁড়িয়ে ছিল সোহেল।  তাঁরা নিরবের বাবার কাছে  ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে । এরপর নিরবের বাবা ও আসামিদের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে আসামি সোহেল ব্যবহৃত ফোনের ইনকামিং কল বন্ধ করে রাখে। তারা ওই ভবনের পেছনের রাস্তা তালা দিয়ে রেখে চলে যায়। তাদের ধারণা ছিল, শুক্র, শনি ও রবিবার (মাঘী পূর্ণিমা) স্কুল ছুটি। এই তিন দিনের মধ্যে তাঁরা সকল আলামত নষ্ট করে ফেলে দেবে। যাতে স্কুলে এমন ঘটনা ঘটেছে, কেউ টের না পায়।   কিন্তু তা হয়ে উঠেনি। ঘটনার পর রাত ১১ টার দিকে তারা আবারও নিরবের বাবার ব্যবহৃত ফোনে কল করে মুক্তিপন দাবি করে। আর ওই ফোন কলের সূত্র ধরেই পুলিশের জালে আটকা পড়ে অভিযুক্তরা। পুলিশ তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে প্রথমে সোহেলকে আটক করে। পরবর্তীতে অপর অভিযুক্তদের একে একে গ্রেপ্তার করে। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে আদালতেও  ঘটনার আদ্যপান্ত বর্ণনা দেয় অপরাধীরা।

ডুমুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ সেখ কনি মিয়া বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের নিজের দায় স্বীকার করে আসামিরা। পরবর্তীতে আদালতে স্বীকারোক্তি দেওয়ার কথা তাদের জানালে তারা দিতে রাজি হয়। বিকেল ৪ টার দিকে তাদের আদালতে নেওয়া হয়। পরে ক্রমান্বয়ে তারা আদালতে জবানবন্দি দিতে থাকে।

অপহরণ করার পর গলায় রশি পেচিয়ে উচিয়ে শ্বাসরোধ করা সপ্তম শ্রেণির ছাত্র নীরব মণ্ডল খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গুটুদিয়া পূর্বপাড়া এলাকার পান-সুপারি ব্যবসায়ী শেখর মণ্ডলের ছেলে। বৃহস্পতিবার তাঁকে দেড়টার দিকে অপহরণ ও বেলা ৩টার দিকে গুটুদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি পরিত্যাক্ত কক্ষে হত্যা করা হয়।

হত্যায় জড়িতরা হচ্ছে গুটুদিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র সোহেল মোল্লা(১৫), হীরক রায়(১৫) ও পিতু মণ্ডল(১৪), দশম শ্রেণির ছাত্র পিয়াল রায়(১৫) ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র দ্বীপ মণ্ডল(১৩)। এর মধ্যে পিয়ালের বাড়ি ডুমুরিয়ার ভান্ডারপাড়া তেলিগাতি এলাকায় এবং অন্য চারজনের বাড়ি গুটুদিয়া এলাকায়।

খুলনা গেজেট/এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!