বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের চন্ডিপুর দাউরা খালের ওপরের পুলটি ভেঙে গেছে দীর্ঘদিন হলো। সেতু ভেঙে পড়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন উপজেলার অন্তত ১০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দারা অস্থায়ীভাবে সুপারি বাঁশ ও গাছ ব্যবহার করে ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি আংশিকভাবে মেরামত করে গ্রামবাসীরা ব্যবহার করছিল। তবে সেটিও ভেঙে যাওয়ায় সেতুটি দিয়ে সব ধরণের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) প্রায় ২০ বছর আগে প্রত্যন্ত চন্ডিপুর গ্রামে দৌরা খালের ওপর লোহার কাঠামোর সেতুটি নির্মাণ করেছিল। প্রায় চার বছর আগে বন্যায় লোহার সেতুটি আংশিক ভেঙে পড়ে। পরে চন্ডিপুর, জামুয়া, কাছিকাটা ও চরগোপালপুর গ্রামসহ ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের বিকল্প না পেয়ে সুপারি গাছ ও বাঁশ দিয়ে অস্থায়ীভাবে সেতুটি মেরামত করে চলছিল। সেই সেতুটিও গত মাসে পুরোপুরি ভেঙে পড়ে।
ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা বিশেষ করে বিভিন্ন স্কুল-মাদরাসার শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছোট ছোট নৌকায় করে খাল পারাপার করতে বাধ্য হচ্ছে।
চন্ডিপুর গ্রামের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী আমেনা খাতুন ও তানিয়া খাতুন বলেন, আমাগো স্কুকে যেতে ভয় করে। কয়েকদিন আগে আমাদের এক বন্ধু নৌকা দিয়ে পড়ে গেছিল। নৌকার মাঝি তাকে টেনে তুলিছে সব বই-খাতা ভিজে গেছে। সরকারকে বলি আমাগো পুলটা ঠিক করে দেন।
কামাল জমাদ্দার জানান, গত মাসে সেতুটি পুরোপুরি ভেঙে পড়ার পর থেকে আশপাশের প্রায় ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। যোগাযোগের অন্য কোনো বিকল্প না থাকায় গ্রামবাসীরা তাদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য নৌকা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন।
৬০ বছরের বৃদ্ধা আব্দুর রব বলেন, নৌকাই পারাপার হতে পারি না। কেউ অসুস্থ হলে নৌকায় পার করতে হয় মেলা কষ্ট হয়। আমাগো ব্রিজ টা ঠিক করে দেন।
স্থানীয় শিক্ষক রমজান শেখ বলেন, ছোট ছোট বাচ্চা-কাচ্চাদের স্কুলে যেতে ভীষণ কষ্ট হয়। কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পুলটি ঠিক করে দেওয়া হোক। তাহলে উপকৃত হবে শিক্ষার্থীসহ কয়েক হাজার মানুষ।
চিংড়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় (ইউপি) সদস্য জামাল শেখ বলেন, বিষয়টি তিনি অনেক আগেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, কিন্তু এখনো সেতুটি সংস্কারের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
চিংড়াখালী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলী আক্কাস বুলু বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে একাধিকবার পুলটি সংস্কার করা হয়েছিল। বর্তমানে পুলটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। পুলটি আবার নির্মাণের জন্য স্থানীয় এমপিসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।
এ সর্ম্পকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শাহ-ই আলম বাচ্চু বলেন, দাউরা চন্ডিপুর সংযোগ খালে পুলটি একবার উপজেলা পরিষদের এডিপির বরাদ্দের মাধ্যমে নির্মাণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ভেঙে যায়। এ খবর শুনে নির্বাহী কর্মকর্তা,ভাইস চেয়ারম্যানসহ আমি সরেজমিনে গিয়েছিলাম। তখনকার কাজটি নিয়েও কথা উঠেছে। পুনরায় নতুন করে আর কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
বাগেরহাট এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শরীফুজ্জামান বলেন, তারা মাটি পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় সব কাজ পরিচালনা করলেও অর্থের অভাবে চলতি অর্থবছরে সেতুটি নির্মাণ করা যাচ্ছে না।
খুলনা গেজেট/ টিএ