চাকরির জন্য নেওয়া ঘুষের সাড়ে ৯ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এবং কুড়িগ্রাম-৪ আসনের এমপি জাকির হোসেন। রোববার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে মন্ত্রীর এক ঘনিষ্ঠজন ভুক্তভোগী আবু সুফিয়ানের কাছে টাকা ফেরত দেন। তবে চাকরি পেতে যারা টাকা দিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ফেরত দেওয়া টাকা ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে।
এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে পাওনাদারদের মন্ত্রীর বাসায় ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়। ওইদিন ভুক্তভোগী তিনজনের মধ্যে দুজন মন্ত্রীর বাসা থেকে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে যান। আবু সুফিয়ান নামের একজন প্রাণ বাঁচাতে মন্ত্রীর বাসার দেওয়াল টপকে ডিবি কার্যালয়ে ঢুকে পড়েন। এ সময় তাকে আটক করেন ডিবি সদস্যরা।
সবশেষ গত শুক্রবার আবু সুফিয়ানকে ছেড়ে দেয় ডিবি পুলিশ। এর মধ্যে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনেরা আবু সুফিয়ানের সঙ্গে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করেন। পরে আবু সুফিয়ানের কাছে যে পরিমাণ টাকার ডকুমেন্ট রয়েছে সেই পরিমাণ টাকা ফেরত দেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। দেনদরবার শেষে শনিবার সকাল ১১টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে এক কর্মকর্তার রুমে যান মন্ত্রীর দুজন প্রতিনিধি। দুজনের মধ্যে একজন উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। ১১টার কিছু সময় পর সেখানে যান আবু সুফিয়ানসহ দুজন। আবু সুফিয়ান প্রবেশ করার পর মন্ত্রীর পাঠানো সেই সরকারি কর্মকর্তা দ্রুত সেখান থেকে বের হয়ে যান।
কিছু সময় কথা বলার পর ডিবির ওই কর্মকর্তা মন্ত্রীর অপর প্রতিনিধিকে আবু সুফিয়ানের টাকা বুঝিয়ে দিতে বলেন। এর আগে একটি কালো রঙের কাগজের শপিং ব্যাগে সাড়ে ৯ লাখ টাকা সেখানে টেবিলের ওপর রাখেন মন্ত্রীর প্রতিনিধি। পরে ওই ব্যাগ আবু সুফিয়ানের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
টাকা লেনদেনের পর আবু সুফিয়ানকে একটি অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে বলা হয়। তখন উপস্থিত অন্যদের সামনে ‘আমি পাওনা টাকা বুঝিয়া পেলাম’ লিখে স্বাক্ষর করেন আবু সুফিয়ান।
তবে টাকা দেওয়ার পর আবু সুফিয়ানকে অপেক্ষা করতে বলা হয়। এ সময় তার সঙ্গে থাকা অপরজনকে চলে যেতে বলেন ওই ডিবি কর্মকর্তা। এজন্য দুপুর ১২টার দিকে তিনি বের হয়ে যান। তবে চাকরি পেতে যারা টাকা দিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ফেরত দেওয়া টাকা ডিবি কার্যালয়ে রেখে যেতে বলা হয়। তখন সাড়ে ৯ লাখ টাকা ডিবির ওই কর্মকর্তার জিম্মায় রেখে আবু সুফিয়ান বের হয়ে যান।
এ বিষয়ে ডিবির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ ফজলে এলাহীর কাছে জানতে চাইলে তিনি কালবেলাকে জানান, যারা আবু সুফিয়ানের মাধ্যমে টাকা দিয়েছিলেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে এবং তারা যেন টাকা বুঝে পান সেটা নিশ্চিত করা হবে। আবু সুফিয়ানকে ওইসব ব্যক্তিদের নাম ও ফোন নম্বর দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে আবু সুফিয়ান কালবেলাকে বলেন, ওনারা আমাকে বলেছেন, দুয়েক দিন পরে এসে টাকা নিয়ে যাবেন।
খুলনা গেজেট/ এএজে