মিয়ানমারে সাধারণ নির্বাচনে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চি’র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) নিরঙ্কুশ বিজয়ের পথে রয়েছে। ফলে দেশটিতে আবারও সু চি’র এনএলডি সরকার গঠন করতে যাচ্ছে।
নতুন সরকার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তরিক হবে কি না, সেদিকে ঢাকার বিশেষ নজর রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার মনে করে, মিয়ানমারে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে সংলাপ ফের শুরু করা সম্ভব হবে। যদিও পর্যবেক্ষকরা বিষয়টি নিয়ে খুবই সতর্ক। তারা বলছেন, এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা যাবে না। নতুন সরকার কী দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে তা জানতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সোমবার আশা প্রকাশ করেছেন যে, মিয়ানমারে নতুন সরকার গঠনের পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় আলোচনা পুনরায় শুরু করা হবে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা ইতিবাচক রয়েছি’। তিন দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে এ সংলাপ বেইজিংয়ে হওয়ার কথা রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে আস্থার অভাব রয়েছে যা মিয়ানমারকে দূর করতে হবে।
মিয়ানমারের তরফে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণের লক্ষ্যে রাখাইন রাজ্যের অবস্থা সম্পর্কে একটা পুস্তিকা তারা প্রকাশ করেছে। মিয়ানমারের নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে জানতে চাইলে দেশটির প্রভাবশালী পত্রিকা মিজিমা সম্পাদক সোয়ে মিন্ট ইয়াঙ্গুন থেকে টেলিফোনে সোমবার যুগান্তরকে বলেন, অং সান সু চি’র এনএলডি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাচ্ছেন।
আনুষ্ঠানিক ফলাফল পেতে আরও ২-৩ দিন লাগবে। তবে পার্টির অভ্যন্তরে ফলাফল সংগ্রহ করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে দলটি অবিস্মরণীয় বিজয়ের দাবি করছে জানিয়ে সোয়ে মিন্ট বলেন, সু চি আবারও সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন। ইয়াঙ্গুন থেকে মিয়ানমারের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন এমন একজন বিদেশি কূটনীতিক টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেছেন, এনএলডি গতবারের চেয়ে ভালো ফলাফল করবে বলে মনে হচ্ছে। মিয়ানমারের উচ্চ ও নিুকক্ষ মিলিয়ে ৪৭৬ আসনের মধ্যে গত বছর ৩৯০ আসন পেয়েছিল এনএলডি। অপরদিকে সেনা সমর্থিত ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি গত বছর ৪১ আসন পেয়েছিল।
এ বছর তারা খুব খারাপ ফল করছে। মিয়ানমারে ২৫ শতাংশ আসন সেনাবাহিনীর জন্য সংরক্ষিত। সরকারের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে সেনাবাহিনী। তারা প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র এবং অভিবাসন ও জনসংখ্যাবিষয়ক মন্ত্রণালয় পেয়ে থাকে। ফলে সু চি সরকার গঠন করলেও আদতে এনএলডি ও সেনাবাহিনীর মধ্যে কোয়ালিশন করে দেশ পরিচালনা করা হয়ে থাকে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে নতুন সরকার কী পদক্ষেপ নেয় তা এখনও স্পষ্ট নয়।
দৃশ্যত মিয়ানমারে একই দল ক্ষমতায় থাকায় রোহিঙ্গাদের প্রশ্নে একই নীতি বহাল থাকবে বলে মনে হচ্ছে। বাস্তবতা হল, মিয়ানমার মুখে প্রত্যাবাসনের কথা বললেও আন্তরিক কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এবার আরও জোরালো ম্যান্ডেট পাওয়ায় তাদের নির্বিকার ভাব বহাল থাকবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন মিয়ানমারে কোনো পপুলার বিষয় নয়। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতেও এটা উল্লেখ ছিল না। সরকারের অগ্রাধিকারে ছিল না। ফলে তাদের ফেরত নিলে জনপ্রিয়তা হারাবে। তাই তারা ধীরে চলো নীতি বহাল রাখতে পারে। তবে দেশের ভেতরে জনপ্রিয়তা পেলেও রোহিঙ্গা প্রশ্নে সু চি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচিত। তাই সু চি’র বিজয় রোহিঙ্গা প্রশ্নে মন্দের ভালো। কেননা ইউএসডিপি রোহিঙ্গা প্রশ্নে আরও কট্টর।
মিয়ানমারে নতুন সরকারের আমলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব কিনা জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত আশরাফ উদ দৌলা গণমাধ্যমকে বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সু চি’র হাতেও নয়, বাংলাদেশের হাতেও নয়, আমেরিকার হাতেও নয়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ভারত ও চীনের হাতে।
এ ব্যাপারে একই মত পোষণ করেন আরেক সাবেক রাষ্ট্রদূত আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, নির্বাচনের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব পড়বে না।
মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নিতে চাইবে না। কারণ তারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হলেও তাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নেই। চীন ও ভারত চাপ দিলে ফেরত নিতে পারে।
খুলনা গেজেট/কেএম