খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

সুপারির চারা বিক্রি করে ভাগ্যবদল ইসহাক আলীর

শেখ সৈয়দ আলী, ফকিরহাট

বাগেরহাট জেলার ঐতিহ্য পান, সুপারি, নারকেল দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। ফকিরহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের খান জাহান আলী নার্সারির পরিচালক মাওলানা মোঃ ইসহাক আলী। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উন্নত জাতের সিঙ্গাপুর ও বার্মিজ জাতের সুপারির চারা উৎপাদন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন বলে তিনি জানান।

তার উৎপাদিত নার্সারির সুপারির চারা স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। মাওলানা মোঃ ইসহাক আলীর মতো ওই এলাকার অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে এ নার্সারিতে।

মাওলানা মোঃ ইসহাক আলী বলেন, এ বছর সালে ৮ খন্ড জমিতে সুপারির নার্সারি করি। বীজ, সেচ, পরিচর্যা ও পরিবহন শ্রমিকসহ মোট ব্যয় হয় প্রায় ১০ লাখ টাকা ওই চারা বিক্রি করে প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় হয় হবে বলে জানান।’

তিনি বলেন, একটি সুপারির চারা উৎপাদনে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ টাকা। সেই চারা ১২ থেকে ২৪ মাসের মাথায় বিক্রি হয়। প্রতি পিচ ৫০-৬০ টাকায়।’

তিনি দেশের বিভিন্ন জায়গা গিয়ে উন্নত জাতের সুপারির বীজ কালেকশন করেন এবং পুরানো চাষীদের পরামর্শে সুপারির চারা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নেন ইসহাক আলী।

সরেজমিনে চারা বাগানে কাজ করতে দেখা যায় তাকে। সেখানে মাটির বেডে বীজ বপন ও বেড প্রস্ততের কাজ করছিলেন তিনি। পরপর বপন করা হয় সুপারির বীজ। সেই বীজ থেকে চারা হয়। ওই চারা ছয় মাস থেকে এক বছরের মাথায় বিক্রি শুরু করা হয়।

এই কৃষক বলেন, ‘নার্সারি একটি লাভজনক ব্যবসা। এতে কোনও লোকসান নেই যদি বুঝে সঠিক নিয়মে বীজ বপন করা যায়।

এলাকাবাসী জানান, নার্সারি করে ইসহাক ব্যাপক লাভবান হয়েছে সেই সাথে এলাকায় প্রতিদিন বিভিন্ন জায়গা থোকে চারা নিতে আসেন।

সুপারির নার্সারি ইসহাক আলীর ৮ টি বাগানে এলাকার বেকার শ্রমিকদের কাজের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ জন শ্রমিক তার নার্সারিতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।

শ্রমিক মোঃ রফিকুল ইসলাম (৫৫ ) বলেন, ‘আগে ভাবতে হতো, কার বাড়িতে কাজ করবো; কীভাবে বাজার খরচের টাকা পাবো। কিন্তু এখন আর সেটা নিয়ে ভাবতে হয় না। প্রতিদিন কাজ পাই। সন্ধ্যা হলে হাজিরার টাকা নিয়ে বাজার থেকে চাল-ডাল কিনে বাড়ি নিয়ে যাই।

ওই বাগানের শ্রমিক মোঃ জাকির বিশ্বাস ( ৫০) একই কথা বললেন।

মোঃ ইসহাক আলী বলেন, ‘দক্ষিণবঙ্গের বাগেরহাট জেলায় অতিথি আপ্যায়নে পান সুপারির বিকল্প নেই। বিশেষ করে বিয়ে বাড়ি, মুখেভাতসহ নানা অনুষ্ঠানে পান সুপারি লাগেই। তাই এই অঞ্চলে সুপারি চাষ লাভজনক। খুচরা ক্রেতাদের পাশাপাশি পাইকাররা আমার এখান থেকে সুপারির চারা কিনে নিয়ে যান।

৪নং ফকিরহাট সদর ইউপি চেয়ারম্যান শিরিনা আক্তার বলেন, দেশী সুপারির জন্য আমাদের এলাকা বেশ পরিচিতি রয়েছে এখন উন্নত জাতের সুপারির চারা রোপণ করে আর্থিক সুফল ভোগ করছে এলাকার মানুষ। এখন অনেকে আর্থিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গ্রামের মানুষ সুপারি, মেহগনি, আম, জাম, লেবু, লিচু, কামরাঙ্গা, পেয়ারা, নারিকেলসহ বিভিন্ন গাছের নার্সারি করছে। অনেকে বিভিন্ন প্রজাতির ফল ও ফুলের নার্সারি করছে। এতে করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে তারা।

ফকিরহাট উপজেলার সিনিয়র কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, ছোট বড় কয়েকটি নার্সারি রয়েছে এ উপজেলাতে। সামাজিক বনায়ন পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি পান সুপারি নারকেল মানুষকে আর্থক স্বচ্ছলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সুপারির নার্সারি সংখ্যা বাণিজ্যিকভাবে বাড়াতে মাঠপর্যায়ে কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তারা নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন বলে তিনি জানান।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!