খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে বিপন্ন প্রাণি ডলফিনের জীববৈচিত্র সংরক্ষণে গবেষণা কার্যক্রম। এক বছর মেয়াদী এই গবেষণায় সুন্দরবন সংলগ্ন ও উপকূলীয় নদীতে ডলফিনের বিচরণক্ষেত্র সনাক্তকরণ, তার হুমকির কারণসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ডলফিনের জীববৈচিত্র সংরক্ষণ, তার অবাধ বিচরণ ও নিরাপদ প্রজননের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকরী কৌশল ও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে খুলনা কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় গবেষণাটি পরিচালনা করবেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডলফিন গবেষণা টিম। আজ রোববার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক অবহিতকরণ কর্মশালায় (ইনসেপশন ওয়ার্কশপ) গবেষকবৃন্দ এই তথ্য প্রকাশ করেন।
কর্মশালায় প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রকল্পটির মূখ্য গবেষক এবং টিম লিডার প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ ইউসুফ আলী। তিনি বলেন, পৃথিবীর জলবায়ুর পরিবর্তন, নদীতে পলি জমাট, পানির অভাবে নদীর নাব্যতা হ্রাস, নদী দূষণ, বেআইনি জালে মৎস্য আহরণ এবং নদীর তীরে অপরিকল্পিত শিল্পায়নের কারণে ডলফিন আজ হুমকির সম্মুখীন। অথচ মিঠা পানি ও লবণাক্ত পানির ডলফিনের জন্য ‘হটস্পট‘ হিসাবে বাংলাদেশ পৃথিবীতে প্রসিদ্ধ। আমাদের এই দেশের অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় নদীতে গাঙ্গেয় ডলফিন (যা শুশুক বা শোশ নামে পরিচিত), ইরাবতি ডলফিন, ইন্ডো-প্যাসিফিক হাম্পব্যাক, ফিনলেছ পরপয়েজ, ইন্ডো-প্যাসিফিক বটলনোজ ডলফিন, স্পিনার ডলফিন,স্পটেড ডলফিনসহ ১০ প্রজাতিরও বেশী ডলফিন পাওয়া যায়। কিন্তু অত্যন্ত দঃখের বিষয়, জলজ বাস্তুসংস্থান বা ইকোসিস্টেমের সৌন্দর্য এই প্রাণীটি আজ বিভিন্ন কারণে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বিলুপ্তির আসল কারণসমূহ সনাক্ত করে এর জীববৈচিত্র সংরক্ষণ আশু প্রয়োজন।
ড. ইউসুফ আরো জানান, এই গবেষণাকর্মে ডলফিন ও মাছের ঝাঁক সনাক্তকরণে আধুনিক সরঞ্জাম যেমন ফিশ ফাইন্ডার, ইকো-সাউন্ডার ও সাউন্ড নেভিগেশন এন্ড রেঞ্জিং (সোনার) সিস্টেম ব্যবহার করা হবে।
অবহিতিকরণ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার প্রফেসর খান মোঃ গোলাম কুদ্দুস। তিনি বলেন, ডলফিন এখন বিপন্ন প্রজাতির প্রাণির তালিকায়। পরিবেশ ও জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে ডলফিনসহ বিভিন্ন প্রাণি ও উদ্ভিদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তিনি সুন্দরবন সন্নিহিত এলাকায় ডলফিন নিয়ে গবেষণায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিমকে ধন্যবাদ জানান। তিনি আশা করেন- এর ফলে আমরা একটি ধারণা পাবো, যার মাধ্যমে সরকার প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।
সভাপতিত্ব করেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ এন্ড মেরিণ রিসোর্স টেকনোলজী ডিসিপ্লিনের প্রধান প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ আব্দুর রউফ। ডলফিনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে আলোচনা করেন মৎস্য বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডঃ নাজমুল আহসান, প্রফেসর ডঃ খন্দকার আনিছুল হক, প্রফেসর ডঃ হাসানুজ্জামান এবং মৎস্য কর্মকর্তাবৃন্দ। গবেষণা প্রকল্পটিতে সহযোগী গবেষক হিসেবে আছেন প্রফেসর ডঃ মোঃ গোলাম সারোয়ার ও প্রফেসর ডঃ খন্দকার আনিছুল হক।
গবেষণাটির প্রকল্প পরিচালক আবু সায়েদ মোঃ মনজুর আলম আশা ব্যাক্ত করেন যে, এই গবেষনাটি খুবই সময়োপযোগী যা বিপন্ন প্রাণি ডলফিনের জীববৈচিত্র সংরক্ষণে কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।