খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৩ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৮৮৬

সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে অবৈধভাবে মাছ শিকার বেড়েছে

রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা

পশ্চিম বনবিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে অবৈধভাবে মাছ শিকারের অভিযোগ উঠেছে। বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট স্টেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে জেলেরা ওই অভায়রণ্য এলাকায় অবাধে বিচরণ করে মাছ ও কাঁকড়া শিকার করছে। এতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে সুন্দরবনের মাছের প্রজননক্ষেত্র গুলো। তবে বন বিভাগের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকায় মাছ ধারার অপরাধে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন জেলেকে আটক করা হয়েছে।

জানা যায়, সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন টহল ফাঁড়ি গুলোর অধীনে বেশ কয়েকটি খাল মাছের প্রজননক্ষেত্র হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও মাছের প্রজননের জন্য এসব খাল গুলোকে সুন্দরবনের অভায়রণ্য হিসাবে চিহিৃত করে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষনা পূর্বক সেখানে বনজীবিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন গহীন সুন্দরবনের দোবেকী, পুষ্পকাটি, নোটাবেকী, মান্দারবাড়ীয়া ও হলদেবুনিয়া বন টহল ফাঁড়িরর অধীনে বেশ কিছু খাল রয়েছে, যা অভয়ারণ্য ঘোষিত। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও মাছের প্রজননের জন্য এসব খাল ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাছ ধরা, গোলপাতা ও কাঠ কাটা, মধু আহরণসহ সব ধরনের বনজ দ্রব্য আহরণ বন বিভাগের পক্ষ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

বন বিভাগের পক্ষ থেকে নিষেধ থাকলেও সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে বেশ কয়েকটি জেলে গোষ্টি। অভিযোগ রয়েছে অর্থের বিনিময় বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট এলাকার টহল ফাঁড়ির কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তারা সুন্দরবনের ওই সব অভায়রণ্য এলাকায় অবাধে বিচরণ করে মাছ ও কাঁকড়া শিকার করছে। মাঝে মধ্যে বনবিভাগের অভিযানে কিছু জেলারা আটক হলেও অধিকাংশ জেলেরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে।
স্থানীয় কয়েকজন জেলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুন্দরবনে মাছ ধরার জন্য শ্যামনগরের আবু সালেহের ২২টি নৌকা, তন্ময় কোম্পানির ১৭টি, শরীফ ডাক্তারের ৫০টি, বুলগুলির ২২টি, নূরুজ্জামানের ১০টি, আব্দুর রহিমের ১০টি, ইসমাইল সানার ৪০টি, জামাল মোল্লার ৩০টি, শহীদুল্লাহ মোল্লার ৩৫টি, আবুল কোম্পানির ১৫টি, ওয়াজ কুরুনীর ৪টি, বাবুর ৫টি, শহীদের ৪টি, সুখবর মোল্লার ১৫টিসহ বিভিন্ন জেলে কোম্পানির কয়েকশ’ নৌকা রয়েছে। যাদের অনেকেই অবৈধভাবে সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকার নিয়মিত মাছ ধরে থাকে। এসব মাছ ট্রলার যোগে এনে শ্যামনগরের কলবাড়ী, সোনার মোড়, নওয়াবেকী, নূরনগর ও কয়রাসহ বিভিন্ন মাছের আড়তে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। অভয়ারণ্যে মাছ না ধরা প্রতিশুতি দিয়ে বনবিভাগের কাছ থেকে পাশ নিলেও তারা গোপনে অবৈধভাবে অভয়ারণ্যে প্রবেশ করছে।

সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকায় মাছ ধরার অপরাধে গত ১৩ অক্টোবর ভোরে বনবিভাগের টহলরত বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা সুন্দরবনের পুষ্পকাঠি সংলগ্ন মাইটার খাল থেকে মালামালসহ ৫ জেলেকে আটক করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে জব্দ করা হয় তিনটি নৌকা, জাল, ড্রাম ও আহরিত মাছ।

আটককৃত জেলেরা হলেন, সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের চাঁদনীমুখা গ্রামের রুহুল কুদ্দুস মোড়লের ছেলে কামরুল ইসলাম, কামরুল ইসলামের ছেলে আল মামুন, মৃত ফজের আলীর ছেলে আজিয়ার রহমান, আমিন মোড়লের ছেলে আবুল কালাম মোড়ল ও কয়রা উপজেলা ঘড়িলাল গ্রামের নুর ইসলাম মোল্যার ছেলে আলগীর হোসেন।

এ ব্যাপারে বিপিন হালদার নামে এক জেলে বলেন, অভয়ারণ্যে মাছ ধরতে কিছু বাড়তি টাকা খরচ হয়। কিন্তু অল্প সময়ে অনেক মাছ পাওয়া যায়। বড়িগোয়ালিনীর জেলে হাকিম গাজী বলেন, বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করতে পারলে বেশি লাভবান হওয়া যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জেলে জানান, বন্ধ বাদায় ঢুকতে গেলে ফরেস্টদের প্রতি নৌকায় গোন প্রতি (১৫ দিনে) ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। এছাড়া স্মার্ট পেট্রোল টিমের সামনে পড়লে তাদেরকেও টাকা দিতে হয়।

এ বিষয়ে বুড়িগোয়লিনী ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা নুরুল আলম বলেন, এসব অভিযোগ সঠিক নয়। আমাদের জানা মতে, সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকায় মাছধরার মত কোনো জেলের নৌকা নেই। সেখানে কোন জেলেকে ঢুকতে দেয়া হয়না।
তবে, পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ.কে.এম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকায় মাছ সম্পূর্ন নিষেধ। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও মাছের প্রজননের জন্য অভায়রণ্য হিসাবে চিহিৃত সুন্দরবনের খাল গুলোতে বনবিভাগের নিয়মিত নজরদারি থাকে। সেখানে অবৈধভাবে প্রবেশ করে কেউ মাছ ও কাঁকড়া শিকার করতে পারে না। তিনি জেলেদের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, বনকর্মীরা কেউ কোনোভাবেই এর সঙ্গে জড়িত নন। এসব অভয়ারণ্য এলাকায় যারা মাছ ধরেন, তারা অবৈধভাবেই বনে প্রবেশ করে থাকে। সংরক্ষিত এলাকায় মাছ ধরার অপরাধে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন জেলেকে আটক করে বন আইনে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। সুন্দরবনে অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সংরক্ষিত এলাকায় মাছ শিকার বন্ধে বনবিভাগের লোকজন সব সময় তৎপর রয়েছে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!