বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জের নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নে সীমানা নির্ধারণ নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। অস্থায়ী ভিত্তিতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আইন অনুযায়ী সিমানা নির্ধারণ ব্যতিত অনুষ্ঠান না করার নির্দেশনা দিয়েছেন বাগেরহাট জেলা বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারি জজ আদালত।
নিশানাবাড়িয়া ইউনিয়নের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বাচ্চু। গত ৯ মে ২০২১ বাগেরহাট জেলা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে এ মামলাটি দায়ের করেছেন। যার নং-দেওয়ানী ৮৬/২০২১। মামলার বিবাদী করা হয়েছে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক, জেলা নির্বাচন অফিসার, মোড়েলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারি জজ আদালত গত ২২ আগষ্ট এ আদেশ দেন।
মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, মোড়েলগঞ্জ উপজেলার ১৩ নং নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের অর্ন্তগত ধানসাগর গ্রামে ৩নং ওযার্ডে সীমানা নির্ধারণ পূর্বক গেজেট প্রকাশের পূর্বেই উক্ত ইউনিয়নের নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। এস.এ রেকর্ডের ম্যাপ অনুযায়ী ধানসাগর মৌজায় ৬ নং সিটের ম্যাপে নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রায় ২৭ একর ফসলী জমি এস.এ ৩৯৪২, ৩৯৪৪, ৪৬৪১, ৩৯৪০, ৩৯৪৬, ৩৯৫২, ২১২৩, ৩৯৫০সহ একাধিক দাগে জমি চুড়ান্ত নিষ্পত্তি না করে দেড় শতাধিক ভোটার কেটে নেওয়া হয়েছে সিমানন্তবর্তী শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নে। মামলার বাদি ইউপি চেয়ারম্যান তার নিজ ইউনিয়নের সীমানা নিষ্পতির দাবি করেন।
এদিকে সরেজমিনে ধানসাগর গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দা কৃষক রতন কুমার বেপারী (৫০), তার বৃদ্ধ মাতা আরতি রানী(৮০), হারুন হাওলাদার (৫০), কাদের গাজী (৬০), মজিবর হাওলাদার (৬২), সুলতান হাওলাদার (৬৫), উত্তম বেপারী (৫০), নাসির হাওলাদার (৫২), জাফর ফরাজী (৫৫), মনির গাজী (৫২), নুর ইসলাম হাওলাদার (৫২), মজিবর হাওলাদার(৫৩), শাহ আলম হাওলাদার (৬৬)সহ একাধিক বাসিন্দারা জানান, ১৫-২০ বছর পূর্বে তারা নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ভোটার ছিলেন। ২/৩ বার ভোট দিয়েছেন তারা। ২০০৭ সালের দিকে তৎকালিন দুই ইউনিয়নের টানা হেচরা ও ইউনিয়ন পরিষদের কোন সহযোগিতা না পাওয়ার কারনে তাদের ভোটার কেটে নিয়ে যায় ধানসাগর ইউনিয়নের তখনকার চেয়ারম্যান। এখন তারা ধানসাগর ইউনিয়ন পরিষদের তাদের খানার ট্যাস্ক দিচ্ছেন এবং সরকারি সুযোগ সুবিধা গ্রহন করছেন।
এ সর্ম্পকে নিশানবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বাচ্চু বলেন, ধানসাগর গ্রামের ম্যাপ অনুযায়ী ২৭ একর ফসলী জমি, দেড় শতাধিক ভোটার, ধানসাগর ইউনাইটেট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জমি, জহুর আলী বাজার, স্থানীয় জামে সমজিদ নিয়ম বর্হিভূত ১৫-২০ বছর পূর্বে কর্তন করে নিয়েছে শরণখোলার ধানসাগর ইউনিয়ন। এখনও ওই বাসিন্দারা তাদের ফসলী জমি খাজনা প্রদান করছেন নিশানবাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে। জমি বিক্রয়ে দলীল রেজিষ্ট্রেশন করতে হচ্ছে মোড়েলগঞ্জ উপজেলা সাবরেজিষ্টি অফিসে। অথচ তাদের হোল্ডিং ট্যাক্স নিচ্ছেন ধানসাগর ইউনিয়ন পরিষদ। মামলার আবেদনটি কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি হিসেবে ইউনিয়নের চুড়ান্ত সিমানা নির্ধারন করে গেজেট প্রকাশের দাবিতে করছেন এ মামলা তিনি।
এ বিষয়ে সিমান্তবর্তী শরণখোলা উপজেলার ধানসাগর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মইনুল হোসেন টিপু বলেন, ধানসাগর গ্রামের কিছু সংখ্যক বাসিন্দা ভোটার হয়েছে তার ইউনিয়নে। নির্দিষ্ট তাদের সংখ্যা কতো তা তিনি বলতে পারেনি। ইতোপূর্বে এ সব ভোটাররা নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নে ভোটার ছিলেন কিনা তিনি অবহিত নন। তৎকালিন চেয়ারম্যানই বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।
বাগেরহাট জেলা নির্বাচন অফিসার ফরাজী বেনজির আহমেদ বলেন, জেলার বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ আদালত থেকে নির্দেশনার কপি পেয়েছি। তাৎক্ষনিক কপিটি ঢাকা নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে মোড়েলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কপি পেয়েছেন। জবারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা। উচ্চ আদালতে আপিল কবরেন বলে এ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
খুলনা গেজেট/এএ