কোনো অন্যায় ঘটলে মানুষ হিসেবেই আমাদের কর্তব্য হচ্ছে সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। প্রতিকার চাওয়া। অপরাধীর সাজা দাবি করা। প্রতিবাদের জন্য ভিক্টিম বা অন্যায়কারীর মুখ চেনার বা পক্ষ জানার দরকার নেই।
অন্যায়ের পর দেখবেন, অপরাধী সপক্ষের হলে কিছু লোক চুপ মেরে যায়, প্রতিবাদ করেনা। এই চুপ থাকাটাও অন্যায়। তার চেয়েও বড় অন্যায় হচ্ছে, কিছু লোক ভিক্টিমের অতীত নিয়ে নানান রকম কেচ্ছা-কাহিনী ফেঁদে নেমে পড়ে। এদের উদ্দেশ্য, প্রতিবাদকে দুর্বল করা, অন্যায়কে ন্যায্যতা দেয়া এবং অপরাধীকে রক্ষা করা।
আমাদের দেশে অন্যায়-অপরাধের দৌরাত্ম্য ভয়াবহ ভাবে বেড়ে যাবার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে, পক্ষ বুঝে অন্যায়ের প্রতিবাদ এবং ‘ভিক্টিম-ব্লেমিং’।
আমরা দেখে আসছি, ভিক্টিম যদি ঐ মতের হয় আর অত্যাচারী যদি এই ক্যাম্পের হয় তাহলে প্রতিবাদ করা যাবেনা, বরং খুশি হয়ে ভিক্টিমের বিরুদ্ধে ট্রল করতে হবে, গল্প ফাঁদতে হবে। এভাবেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষের সহজাত প্রতিবাদকে দুর্বল ও বিভক্ত করে অত্যাচার-অবিচার, অন্যায়-অনাচারকে দুর্দমনীয় করে ফেলা হয়েছে। এই ধারা থেকে না বেরুলে আজ আমি ভিক্টিম হচ্ছি, কাল তুমি হবে এটা নিশ্চিত।
রাজনৈতিক বিশ্বাস ও মতামতের কারণে আমি নিজেও এদেশে সরকারি ও প্রশাসনিক সন্ত্রাসের একজন ভিক্টিম। অপরিসীম অন্যায়-অবিচারের শিকার হয়ে চলেছি দীর্ঘদিন ধরে। আমার বিশ্বাস ও মতের কারণে পরিচিতদের একটা বড় অংশ প্রতিবাদ করেনি, পক্ষে দাঁড়ায়নি, সহানুভূতি পর্যন্ত জানায়নি। বরং অন্যায়কে সমর্থন দিয়ে, মদত যুগিয়ে উল্লাস করেছে কেউ কেউ। তাই বলে আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করা থেকে বিরত থাকবো না। মুখ চিনে বা পক্ষ বুঝে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবো না। এমনকি আমার প্রতি অবিচারকে যারা সমর্থন করেছে তারাও কোনো কারণে অন্যায়ভাবে ভিক্টিম হলে আমি তারও প্রতিবাদ করবো।
আমি অন্তর থেকে বিশ্বাস করি, সিলেক্টিভ জাস্টিস, পার্শিয়াল জাস্টিস মানেই ইনজাস্টিস। এগুলোও অন্যায়-অবিচার-অনাচার। সমাজকে এ থেকে মুক্ত করতে না পারলে নৈরাজ্যই হবে আমাদের অবশ্যম্ভাবী গন্তব্য।
লেখক : সাংবাদিক।
খুলনা গেজেট/কেএম