ভারতে বন্যার অজুহাত দেখিয়ে দেশে পেঁয়াজের বাজারে ফের অস্থিরতা তৈরি করেছে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও কারসাজি করে প্রতি কেজি দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৭ দিনের ব্যবধানে সর্বোচ্চ ২০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে রাজধানীর খুচরা বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে ক্রেতার সর্বোচ্চ ১০০ টাকা খরচ করতে হচ্ছে। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ক্রেতারা ঠকতেই থাকবেন।
এদিকে গত কয়েক মাস ধরে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট পেঁয়াজের মূল্য নিয়ে কারসাজি করছে। সম্প্রতি সেই চক্র অতি মুনাফা করতে পেঁয়াজ কেজি ১০০ টাকার উপরে বিক্রি করে। ফলে মূল্য নিয়ন্ত্রণে ৫ জুন কৃষি মন্ত্রণালয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিলে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৮০ টাকায় নেমে আসে। এছাড়া মূল্য আরও ভোক্তা সহনীয় করতে ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু বাজারে সরকার নির্ধারিত দাম মানা হচ্ছে না। গত এক সপ্তাহ আগে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮০ টাকা বিক্রি হলেও বুধবার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, সরকার শুধু পণ্যের দাম নির্ধারণ করলেই হবে না। মূল্য কার্যকরে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এটা বলছি না যে সরকার বাজার তদারকি কাজ করছে না। বলতে চাচ্ছি সংস্থাগুলো যে পদক্ষেপ নিচ্ছে তা যথেষ্ট নয়। কোনো না কোনো ফাঁক আছে। চাইলে সব সমাধান করা যায়। কিন্তু তা হচ্ছে না।
সোমবার সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত বছর ঠিক একই সময়ের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১১১ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ শতাংশ।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকা। যা সাত দিন আগে ৮০ টাকা ছিল। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা। যা সাত দিন আগে ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে রাজধানীর সর্ববৃহৎ পাইকারি আড়ত শ্যাম বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. আমিন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে দেশে টানা বৃষ্টি ও ভারতে বন্যায় পেঁয়াজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এমন গুজব ও অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। যে কারণে দাম বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে পেঁয়াজের দাম বাড়ার কথা নয়। তদরকি সংস্থার এসব বিষয় এখনই দেখা উচিত। তা না হয়, বড় বড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট পেঁয়াজের দাম আরও বাড়াবে। সব মিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভোক্তা।
এদিকে পেঁয়াজ কিনতে আসা মো. জিহাদুল ইসলাম বলেন, বাজারে এমন কি হয়েছে যে, সাত দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের কেজি আবারও ২০ টাকা বাড়ানো হয়েছে? বাজারে পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। দেশি ও আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারের সব দোকানে আছে। ক্রেতার চাহিদা মতোই বিক্রেতারা বিক্রি করছে। কিন্তু বেশি দাম রাখছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মন্ডল বলেন, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে সারা দেশের বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন অনিয়মে অসাধুদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
বুধবার (১১ অক্টোবর) সারা দেশে পেঁয়াজ, ডিম, আলুসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে তদারকি করা হয়েছে। তবে পেঁয়াজের দাম যেহেতু হঠাৎ করে বেড়েছে, তাই কেন দাম বাড়ল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/কেডি