খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ পৌষ, ১৪৩১ | ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  জাহাজে ৭ খুনে জড়িতদের বিচার দাবিতে সারাদেশে নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতি শুরু
  মারা গেছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং

খুলনায় সিএনজি, থ্রি হুইলার থেকে মাসে ৩৩ লাখ টাকা চাঁদাবাজি

নিজস্ব প্রতিবেদক

চাঁদার চাপে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন খুলনার থ্রি হুইলার, সিএনজি ও অটো রিক্সা চালকরা। খুলনার রূপসা ঘাট থেকে ফুলতলা বাজার পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার সড়কের ৯টি পয়েন্টে প্রতিদিন চাঁদা দিতে হচ্ছে তাদের। একজন চালককে দিনে নূন্যতম ৬৫ থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে হয়। মাসের শুরুতে দিতে হয় আরও ১০০ টাকা। চাঁদা দিতে দেরি হলে বা ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করলে শুনতে হয় গালাগাল, গাড়ি চালানো বন্ধের হুমকি।

সম্প্রতি যানবাহনগুলোতে ঘুরে ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য। সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর ডাকবাংলো মোড় ও দৌলতপুর স্ট্যান্ড কেন্দ্রিক দুটি শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা চাঁদার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের নির্ধারিত ব্যক্তিরাই ৯টি মোড়ে প্রকাশ্যেই চাঁদা তোলেন। প্রতি মাসে আদায় করা হয় ৩৩ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক আসার আগে নগরীর দূরে পথে যাতাযাতের একমাত্র যানবাহন ছিলো বেবী ট্যাক্সি। পরবর্তীতে বেবী ট্যাক্সি নিষিদ্ধ ঘোষণার পর থ্রি হুইলার, অটো রিক্সা চলাচল শুরু হয়। সিএনজি চালিত ও মাহেন্দ্র কোম্পানির থ্রি হুইলার সংখ্যায় বেশি চলায় যাত্রীরা এগুলোকে সিএনজি ও মাহেন্দ্র নামেই সম্বোধন করেন।

আগে ফুলতলা বাজার থেকে রূপসা ঘাট পর্যন্ত একাধিক নগর পরিবহন চলাচল করতো। দীর্ঘ কয়েকবছর ধরে বন্ধ গণপরিবহন। বিকল্প যান হিসেবে সেই জায়গা নিয়েছে থ্রি হুইলার। বর্তমানে প্রতিদিন এই রুটে ১ হাজার ৬০০ যান চলাচল করে।

চালকরা জানান, ফুলতলা থেকে আরেকটি থ্রি হইলারে ফেরার পথে দেখা গেল, ফুলতলা, শিরোমনি, ফুলবাড়িগেট, রেলিগেট, দৌলতপুর, নতুন রাস্তা, পাওয়ার হাউজ মোড়, ডাকবাংলো, রূপসা ঘাটে টাকা দেওয়া বাধ্যতামূলক। এর মধ্যে ফুলতলায় ১০ টাকা, যানবাহনটি যেই ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত (দৌলতপুর বা ডাকবাংলো) তার একটিতে ১৫ টাকা দিতে হয়। এর বাইরে সিরিয়াল দিতে যাত্রী উঠালে রূপসা বা যে কোনো স্টান্ডে দিতে হয় ১০ টাকা। টাকার রশিদ দিতে দেখা যায়নি কোথাও।

ইউনিয়নের নামে চাঁদা

খুলনায় অটোরিক্সা চালকদের ইউনিয়ন দুটি। দুটিরই বড় কমিটি থাকলেও সাধারণ সম্পাদকরাই এগুলো পরিচালনা করেন।
নগরীর ডাকবাংলো মোড়ে রয়েছে খুলনা জেলা বেবি ট্যাক্সি শ্রমিক ইউনিয়ন। এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সোনা জাতীয় শ্রমিক লীগ মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি।

চালকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন দৌলতপুর-খুলনা বেবী টেক্সি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা থ্রি হুইলার ড্রাইভার্স ইউনিয়ন। এই সংগঠনের অধীনে চলে প্রায় ১ হাজার ২০০ গাড়ি। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম পান্নু খানজাহান আলী শ্রমিক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি।
বিভিন্ন পয়েন্টে শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের জন্য যে জনবল নিয়োগ করা হয়েছে, তাদের বলা হয় স্ট্যাটার। দুই ইউনিয়নের হয়ে চাঁদা আদায়ে প্রায় ২৫/৩০ জনের মতো স্ট্যাটার আছেন।

সূত্রটি জানায়, দৌলতপুর ও ডাকবাংলো মোড়ে প্রতিদিন গাড়ি প্রতি আদায় করা ১০ টাকা সরাসরি ইউনিয়নের তহবিলে জমা হয়। সাধারণ সম্পাদকরা এই টাকা খরচ করেন। বিভিন্ন পয়েন্টে আদায় করা বাকি টাকা ইউনিয়নের নেতা এবং স্ট্যাটাররা ভাগ করে নেন। ১ হাজার ৬০০ গাড়িতে দৈনিক গড়ে ৬৫ টাকা হিসেবে প্রতি মাসে আদায় ৩১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এছাড়া মাসের শুরুতে এককালীন ১০০ টাকা হিসেবে আদায় করা হয় ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এই টাকাও ভাগ করে নেন ইউনিয়নের নেতারা।
এছাড়া নতুন কোনো গাড়ি নিবন্ধন করাতে হলে ইউনিয়নে ২ থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত টাকা দিতে হয়।

ইউনিয়ন নেতারা যা বললেন

ডাকবাংলো মোড়ের খুলনা জেলা বেবি ট্যাক্সি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সোনা বলেন, শ্রম অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে প্রতিদিন গাড়ি থেকে ১০ টাকা আদায় করা হয়। তা দিয়ে অফিস ভাড়া, কর্মচারীদের বেতন, অন্যান্য খরচ করা হয়। বাকি যে টাকা থাকে তা বিভিন্ন সময়ে শ্রমিকদের মৃত্যুকালীন ভাতা, ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ দেওয়া হয়। বিভিন্ন পয়েন্ট যে টাকা আদায় হয়, তা স্ট্যাটাররা ভাগ করে নেন। ওই টাকা ইউনিয়নে আসে না।

দৌলতপুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম পান্নু বলেন, একজন শ্রমিক মৃত্যুকালীন ভাতা পান ১০ হাজার টাকা। এর বাইরে অসুস্থ হলে, দুর্ঘটনা ঘটলে, বিভিন্ন সময় অনুদান দেওয়া হয়। বড় বড় দিবসে খরচ হয়-এই টাকা আসে কোথা থেকে? তিনি বলেন, ইউনিয়নের অধীনে ১ হাজার ২০০ গাড়ি থাকলেও প্রতিদিন ৩০০ জনের বেশি চাঁদার টাকা দেয় না। প্রতিদিন আদায় হয় মাত্র ৩ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে কী হয় ? প্রতিদিন অফিস খুললে ৫ হাজার টাকা খরচ।

জহিরুল ইসলাম পান্নু বলেন, চালকরা মিথ্যা তথ্য দিয়েছে, মোড়ে মোড়ে এতো টাকা আদায় হয় না। আর হলেও সেটা ইউনিয়নে আসে না। স্ট্যাটাররা ভাগ করে নেয়। তিনি বলেন, মোড়ে মোড়ে স্ট্যাটার না দিলে প্রতিদিন ওরা (চালকরা) মারামারি করে মাথা ফাটাবে।
দুই ইউনিয়ন নেতার কাছেই জানতে চাওয়া হয়, স্ট্যাটারদের নিয়োগ দেয় কারা ? দুই নেতা জানান, ইউনিয়নের পক্ষে তারা। তাহলে তাদের আদায় করা চাঁদার দায়িত্ব কাদের ওপর বর্তাবে- প্রশ্ন করা হলে দুই নেতা কোনো উত্তর দেননি।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!