খুব বেশি স্মৃতি নেই তার সাথে আমার। বিট কাভার করার কারণে দেখা হতো নিয়মিত। সালাম দিলে হাসিমুখেই উত্তর দিতেন।
পছন্দের ছোট তালিকায় তিনি না থাকলেও অপছন্দের তালিকায় ছিলেন না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পর পেশাগত কারণে দেখা হওয়ার পরিমান বেড়ে যায়।
এক ঈদের ২/১ দিন আগে মিন্টো রোডের সরকারি বাসায় গেলাম। ঈদের ছুটিতে কয়েকটি নিউজ করে রাখতে সাক্ষাৎকার নিতে গেলাম।
বড় রুমটায় লোকজন ভরা। সাহারা আপার সহায়তাকারীরা সবাই অনকে দিনের পরিচিত, তাই বসার জায়গা পেতে অগ্রাধিকার পেলাম।
দর্শনার্থীদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন, সমাধানও করছিলেন। এর মাঝেই আমাকে দেখে অপেক্ষার ইশারা করলেন।
মানুষের ভিড় যেনো কমছিলই না,” দীপ অনেক ক্ষন বসে আছে” বলে বার বার তাড়া দিচ্ছিলেন শেষ করার জন্য। যদিও আমার তাড়া ছিল না।
সাহারা আপার গানম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সাবেক নিরাপত্তা কর্মী। বিটের সবার খুব কাছের মানুষ ছিলেন তিনি। মন্ত্রীর কথায় দ্রুত রুম প্রায় খালি করে সাক্ষাৎকার নেয়ার ব্যবস্থা করলেন। একটু বড় সাক্ষাৎকার ছিল। শেষ হবার চলে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আপা বসতে বললেন।
কেমন যেনো উসখুস করছেন। সবাইকে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বললেন। গানম্যান সবাইকে রুম থেকে বের করে দিলেন। সবাই বের হবার পর গানম্যান কে বললেন দরজা আটকিয়ে তাকে বাইরে যেতে। একটু অবাক হলাম, কিছু বুঝতে পারলাছিলাম না।
ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে হাত মুঠো করে বের করে আমার হাতের মুঠোর ভেতর ভাজ করা কিছু টাকা দিলেন।
” তুমি আসবা, তাই আগেই এটা আলাদা করে রেখেছিলাম, আর কারো সামনে দেয়াটা ঠিক হবে না, তাই সবাইকে বের করে দিলাম” – আপা এক নিশ্বাসে বলে গেলেন।
একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম কিছু সময়ের জন্য। আত্মস্থ হয়ে বললাম, আপা এটা আপনি রেখে দেন, আমার লাগবে না।
দেড়/ দুই হাজার টাকা হবে। আপা হয়তো ভাবলেন কম হয়ে গেছে। ” তুমি তো জানো, আমার অন্যকোন ইনকাম নাই, এটা আমার বেতনের টাকা থেকে ঈদে কিছু কেনার জন্য দিলাম”।
” আপা আমি তো ভালো টাকা বেতন পাই।”- বুঝাবার চেষ্টা করছিলাম।
“কখনো তো কিছু দেয়া হয় না। সব সময় আসো।” এবার কিছুটা ধমকের সুরে” রাখো “।
টাকাটা নেয়ার কোন ইচ্ছাই ছিল না। কিন্তু আমি নিলাম। এই যুগে একজন মন্ত্রী তার বেতনের টাকা থেকে কিছু টাকা আমার জন্য অতি যত্ন করে রেখেছেন – এই ভালোবাসাকে আমি ঠেলতে পারি নাই।
আপার টাকাটা পকেটে রেখে ওয়ালেটটা বের করে এক হাজার টাকা হাতে নিয়ে বললাম – আপা একটা শাড়ি কিনবেন ঈদে।
সারামুখে যেনো তার হাসি খেলে গেলো। ফিরিয়ে দিয়ে বললেন, সামনের ঈদে নেবো। এখন যাও অনেক লোক বাইরে আছে। আমি বিদায় নিলাম। শাড়ি আর সাহারা আপাকে দেয়া হয় নাই।
সাহারা খাতুনের মিটিংয়ে ঘুমিয়ে পড়া নিয়ে অনেকেই ট্রল করেছেন। একবার ভাবুন তো ছাত্রজীবন থেকে জীবনের শেষ ক্ষন পর্যন্ত আদর্শচ্যুত হন নাই। বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা – এই তিনের সাথে নিজেকে চিরজীবনের জন্য বেধে রেখেছিলেন।
আর একটা গুন বাংলাদেশে বিরল, যা তার ছিল। বার বার এমপি, মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। কিন্তু দূর্নীতিমুক্ত ছিলেন তিনি। এমন রাজনীতিক আসলেই এখন বিরল।
সাহারা খাতুনরা স্ট্যান্ডবাজি করেন না, ক্যামেরায় মুখ দেখানোর প্রতিযোগিতায় নামেন না, সাংবাদিক পালেন না, তাই সব সময় পিছনের সারিতে থাকেন।
চলমান রাজনীতির সাথে একটু যেনো বেমানান। অতি সাধারণ জীবনযাপন। প্রচারের আলো থেকে সযতেœ দূরে সরিয়ে রাখতেন নিজেকে।
সাহারা খাতুনই সত্যিকারের রাজনীতিকের ছবি।
আপনার আত্মার শান্তি কামনা করি।
(ফেসবুক ওয়াল থেকে)
খুলনা গেজেট/এমএম