খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মানবতাবিরোধী অপরাধ : চিফ প্রসিকিউটর দেশে না থাকায় ফখরুজ্জামান ও সাত্তারের জামিন শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল আপিল বিভাগ
  আজ থেকে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ শুরু
  অ্যান্টিগা টেস্ট: শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ২২৫ রান, হাতে ৩ উইকেট
রোগীদের একটি বড় অংশের সেবা নিতে হয় বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতালে

সামেক হাসপাতালে জনবল সংকট চরমে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার সাত উপজেলার ২২ লাখ মানুষের আধুনিক চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসাস্থল সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ ( সামেক) হাসপাতাল। কিন্তু প্রয়োজনীয় জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীদের একটি বড় অংশই এখান থেকে সেবা গ্রহণ করতে পারছে না। ফলে বাধ্য হয়ে মোটা অংকের টাকা খরচ করে তাদেরকে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গেল দুই বছর করোনার মধ্যেও এই হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা রোগীদের ভালো সেবা দিয়ে সুনাম অর্জন করেছেন। বর্তমানে প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পার্শ্ববর্তী জেলা খুলনা ও যশোরের কয়েকটি উপজেলার রোগীরাও এখানে আসছেন চিকিৎসা নিতে। কিন্তু, জনবল সংকটের কারণে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে এখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকরা । প্রয়োজনীয় জনবল সংকটের কারনে চিকিৎসকরা সময় মতো রোগীদের চিকিৎসা দিতে না পারায় বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে রোগীদের। এতে করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ রোগীরা।

সর্বাধুনিক সুবিধা সংবলিত সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন, আইসিইউ, সিসি ইউ, বান ইউনিটসহ অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি রয়েছে। এরপরও জনবল সংকট থাকায় সেবা প্রত্যাশী অধিকাংশ রোগীদের চিকিৎসা নিতে হয় বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে। রোগীর চাপ বাড়ায় গেল বছর তড়িঘড়ি করে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। অথচ এখন পর্যন্ত হাসপাতালটিতে বাড়ানো হয়নি জনবল।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সামেক হাসপাতালে বর্তমানে সৃজিত পদ সংখ্যা ১৬৫টি। এর মধ্যে ৬৩টি চিকিৎসক পদ শূন্য রয়েছে। এ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারী পদ শূন্য আছে আরও ৭৬টি। জনবল সংকট থাকায় হাসপাতালে স্থাপিত অত্যাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম গুলো ঠিকমতো ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। চার বছর পর মাত্র ১৬৫টি পদ সৃষ্টি হয়েছে। এত কম জনবল দিয়ে এত বড় হাসপাতাল পরিচালনা করা খুবই কষ্টের ব্যাপার।

অসুস্থ মাকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা আমিরুল জানান, ‘তার বৃদ্ধা মা কয়েকমাস ধরে অসুস্থতায় ভুগছেন। অবস্থার অবনতি হলে গেল কয়েকদিন আগে তাকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু নিয়মিত ডাক্তার দেখতে আসেন না। মাঝে মাঝে ইর্ন্টান ডাক্তাররা এসে রোগী দেখে যান।

স্থানীয়রা বলেন, জেলাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর ২০১৭ সালে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে ২৫০ শয্যা নিয়ে চালু করলেও বর্তমানে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে হাসপাতালটি। তবে জনবল সংকটের কারণে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ফলে সামেক হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীদের একটি অংশকে মোটা অংকের টাকা খরচ করে বাধ্য হয়ে শহরের বিভিন্ন বে-সরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে হয়।
স্থানীয়রা বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ, সিসিইউ, সর্বাধুনিক অপারেশন থিয়েটারসহ বিশ্বমানের সব যন্ত্রপাতি দ্বারা সজ্জিত করা হয়েছে। কিন্তু ইনস্টুমেন্ট কেয়ারটেকার, ইটিজি টেকনিশিয়ান, ইসিজি, ইকো টেকনিশিয়ান, ডাইলাসিস টেকনিশিয়ানসহ গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য কোনো জনবল নেই। ফলে দীর্ঘদিন পড়ে থেকে নষ্ট হওয়ার পথে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা অধিকাংশ যন্ত্রপাতি।
সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. কুদরত-ই-খোদা বলেন, বর্তমানে সিনিয়র, জুনিয়র এবং সহকারী সার্জনসহ মোট ৯৯টি চিকিৎসক কর্মকর্তা পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৩৬ জন চিকিৎসক। তবে নার্সের কোনো সংকট নেই। এছাড়া কর্মকর্তা কর্মচারীর শূন্য পদ ৭৬জন। আউটসোর্সিং কর্মচারী রয়েছেন মাত্র ৭৬জন। এত অল্প সংখ্যাক জনবল দিয়ে এত বড় হাসপাতালে সেবা দিতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের। তার ওপর গত বছর জরুরি বিভাগ চালু করা হয়েছে। কিন্তু, বার্ন ইউনিট, ক্যান্সার ইউনিট, নিউরো মেডিসিন, নিউরো সার্জারি, সাইক্যটরি ইউনিটগুলো জনবল সংকটের কারণে চালু করা সম্ভব হয়নি। তবে আশা, করছি দ্রুত এই সংকট নিরসন হবে।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!