বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথমবারের মত একজন সেনা কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে যিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে গত সাত বছরের বেশি সময় ধরে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে কোমায় রয়েছেন।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজার চাকরির মেয়াদের শেষ দিন ১২ অক্টোবরে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তাঁকে কর্নেল র্যাংকে উন্নীত করা হয়। তার পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে হাসপাতালের কক্ষেই সম্পন্ন হয় পদোন্নতির আনুষ্ঠানিকতা।
২০১৩ সালের মার্চ মাসে হার্ট অ্যাটাকের পর থেকেই কোমায় চলে যান তিনি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তার অসুস্থতাকে বলা হয় ‘হাইপোস্কিক স্কিমিক ইনজুরি টু ব্রেইন ইফেক্টস।’ চিকিৎসকরা বলছেন যে তার মস্তিষ্কের নিচের অংশ ভালো আছে, কিন্তু মস্তিষ্কের যে অংশ মানুষের চিন্তা-চেতনার সাথে জড়িত, ওই অংশের কোষগুলো সুস্থ হয়নি।
অসুস্থ হওয়ার পর থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে আছেন তিনি। এর মধ্যে এই কর্মকর্তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত তার শারীরিক অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি।
দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার রাজা ২৩ জুন ১৯৮৯ সালে সাঁজোয়া বাহিনীতে কমিশন পাওয়ার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ২০১৩ সালে হার্ট অ্যাটাক করার আগে ছিলেন শিক্ষা পরিচালকের পদে। প্রায় ৩২ বছরের চাকরি জীবনে তিনি জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনেও ছিলেন – সেখানে বিশেষ অবদানের জন্য পান ‘পিস মেডেল।’ এছাড়া সেনাবাহিনীর একাধিক প্রশিক্ষণ স্কুলের রণকৌশল প্রশিক্ষক ছিলেন তিনি।
সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে বইও লিখেছেন দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ার। সেনাবাহিনীর ইতিহাস এবং প্রখ্যাত কর্মকর্তাদের জীবনী ছাড়া তিনি নিজের পূর্বসূরি হাছন রাজাকে নিয়েও বই লিখেছেন।
দেওয়ান মোহাম্মদ তাছাওয়ারের স্ত্রী মোসলেহা মুনিরা রাজা স্বামীর অসুস্থ থাকাকালীন পুরো সময় চিকিৎসায় সহায়তা করায় এবং পদোন্নতি দেয়ায় সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, “প্রমোশনের ঠিক এক মাস আগে আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে যান। আমাদের সবার মনে এক রকম আশা ছিল যে তার পদোন্নতি হওয়ার পরেই যেন তিনি অবসরে যান।” “বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার অবসরের দিন তাকে যেভাবে সম্মানিত করেছে, সে জন্য সেনাবাহিনীর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ”, বলেন মোসলেহা মুনিরা। খবর বিবিসি
খুলনা গেজেট/কেএম