গোটা এক সপ্তাহ যাবৎ অক্লান্ত পরিশ্রম শেষে সড়ক ছেড়ে ঘরে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। সোমবার ট্রাফিক পুলিশ সড়কে নেমে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর তারা ফিরে গেছে। যদিও তাদের দায়িত্ব পালনকালে সড়কে ফিরেছিল শৃঙ্খলা, মোটরসাইকেল চালকরা হেলমেট পরতে বাধ্য হয়েছিল ও শহরে রিকসা, ইজিবাইক নিয়ম মেনে চলাচল করেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ ও দেশত্যাগ করে। এরপর পুলিশ বিভাগের অধস্তন কর্মচারীরা ১১ দফা দাবিতে সারাদেশে ধর্মঘট শুরু করে। এ কারনে গোটা দেশেই থানা ও ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের কর্মকান্ড বন্ধ ছিল। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীরা গত ৬ আগস্ট থেকে সড়কে নামে। তারা যশোরসহ দেশের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে নেমে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। এ কাজে তাদের কোন অভিজ্ঞতা না থাকলেও তারা সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে ট্রাফিক বিভাগের যানবাহন চলাচলের কাজ নিয়ন্ত্রণ করেছে। তাদের এ কাজ দেশের সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে।
যশোর শহরে ট্রাফিক বিভাগের কাজে দায়িত্বরত ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির প্রেক্ষিতে মোটরসাইকেল চালকরা হেলমেট পরতে বাধ্য হয়েছেন। এমনকি তারা নিয়ম মেনেই সড়কে চলাচল করেছেন। একইসাথে রিকসা, ইজিবাইক, ভ্যানসহ অন্যান্য সকল যানবাহন চালকরা সড়কের মাঝখানের দাগ অতিক্রম করেননি। শহরে জ্যাম হলেও তারা নিয়ম মেনে সড়কে দাড়িয়ে অপেক্ষা করেছেন। এসব কারণে গত সাতদিনে শহরে তেমন গুরুতর যানজট দেখা যায়নি। এক প্রকার কঠোর হাতেই শিক্ষার্থীরা শহরের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেছে।
ছাত্রছাত্রীরা শহরের খাজুরা বাসস্ট্যান্ড, জেল রোড জেলখানা মোড়, বটতলামোড়, দড়াটানা, ঈদগাহমোড়, রেলগেট, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, চিত্রামোড়, চৌরাস্তা, বস্তাপট্টিমোড়, আরএন রোড, মনিহার বাসস্ট্যান্ড, চাঁচড়া চেকপোস্ট, ধর্মতলা ও পালবাড়ীমোড় এলাকায় ট্রাফিকিংয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছে। এসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিল স্কাউট, বিএনসিসি, রেডক্রিসেন্ট, তায়কোয়ান্দ সদস্য, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবকসহ বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রীরা।
সকাল থেকে ভরদুপুরে তীব্র রোদে দাড়িয়েও তারা এ দায়িত্ব গুরুত্বের সাথে পালন করেছে। রাত প্রায় ১০টা পর্যন্ত তাদের এ কাজ অব্যাহত ছিল। এ কাজ করার জন্য তাদের খাবারের কোন কমতি ছিল না। শহরবাসী খুশি হয়ে তাদেরকে উৎসাহ যোগাতে দুপুরের খাবার, পানীয়, ফলমূল, বাদাম, চানাচুর, মিষ্টি কিনে দিয়েছে। এমনকি কেউ কেউ বাড়ি থেকে রান্না করা খাবার নিয়ে তাদের কাছে পৌছে দিয়েছে। তারা সফল এ কাজ শেষে সোমবার বিকেলে সড়ক ছেড়ে ঘরে ফিরেছে। সন্ধ্যা থেকে শহরের সড়কগুলোতে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে ট্রাফিক পুলিশসহ আনসার সদস্যদের।
এদিকে, রোববার রাতে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন পুলিশের ১১ দফা দাবি মানার আশ্বাস দেবার পর কাজে যোগদান করেছেন পুলিশ সদস্যরা। সোমবার সকাল থেকেই যশোর ট্রাফিক পুলিশ বিভাগের সদস্যরা সড়কে নামতে শুরু করে। এসময় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা ও স্বাগতম জানান। এদিন বিকেল পর্যন্ত তারা শিক্ষার্থীদের সাথে একযোগে কাজ করার পর বিকেলে দায়িত্ব বুঝে নেন।
ট্রাফিক পুলিশ মাঠে নামায় তাদের স্বাগত জানিয়েছেন শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। আইরিন আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা গত ৫/৬ দিন সড়কে কাজ করেছি। আমরা প্রশিক্ষিত না হওয়ায় কাজ করতে বেগ পেতে হচ্ছিলো। ট্রাফিক পুলিশ নামায় আমরা খুশি। যাদের কাজ তাদেরই মানায়। সকলে ট্রাফিক আইন মেনে চলবে সেই প্রত্যাশা করি।
বিল্লাল হোসেন নামে এক পথচারী বলেন, শিক্ষার্থীরা দেখিয়ে দিয়েছে তাদের দ্বারা সবকিছু করা সম্ভব। তারা সড়কে নেমে যেভাবে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেছে ও মানুষকে নিয়ম মেনে চলতে শিখিয়েছে সেটা মনে রাখার মত। যদিও পুলিশ উঠে যাওয়ায় শহরে বেশ সমস্যার তৈরি হয়েছিলো। শিক্ষার্থীরা শেষ পর্যন্ত হাল ধরে সেটা নিয়ন্ত্রণ করেছে। সড়কে ট্রাফিক পুলিশ নামায় শৃঙ্খলা আরো ফিরে আসবে। তাদের স্বাগত জানাচ্ছি। ফিরোজ নামে এক গাড়ি চালক জানান, শিক্ষার্থীরা কড়াভাবে ট্রাফিক আইন ফলো করছিলো। যার ফলে সন্তানতুল্য হওয়ায় আমরা তাদের সব কথা মেনে সম্মান দিয়ে সড়কে গাড়ি চালিয়েছি। তারা দেখিয়ে দিয়েছে ছাত্রছাত্রী তরুণদের মাধ্যমে এই দেশে সবকিছু করা সম্ভব।
যশোর ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর শুভেন্দ কুমার মুন্সি বলেন, যশোর ট্রাফিকের ৮৬ জন সদস্য শহর ও জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তাদের দায়িত্ব পালনে কাজে নেমেছেন। এ কারণে শিক্ষার্থীরা বাড়ি ফিরে গেলেও তাদের কোন সমস্যা হবে না।
যশোর ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মাফুজুর রহমান বলেন, শহরের গুরুত্বপূর্ণ সকল মোড়েই ট্রাফিক পুলিশ রয়েছে। তারা সকালে শিক্ষার্থীদের সাথে একযোগে কাজ করেছে। প্রথম দিনে তারা আমাদের উৎসাহ যুগিয়েছে। কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই সকলে কাজ করছে। সাধারণ মানুষও আমাদের স্বাগত জানিয়েছে।
খুলনা গেজেট/কেডি