খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ পৌষ, ১৪৩১ | ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ময়মনসিংহে ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে একই পরিবারের ৪ জন নিহত
  নিখোঁজের ৪২ ঘণ্টা পর কাপ্তাইয়ের কর্ণফুলী নদী থেকে দুই পর্যটকের মরদেহ উদ্ধার

সাতক্ষীরা-১ আসন : আ.লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, ফুরফুরে জাপা প্রার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝুকির মধ্যে রয়েছেন সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ স্বপন। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে এই আসনে ভাগ্য খুলতে পারে জাতীয় পার্টির প্রাার্থী, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ দিদার বখতের।

নৌকার প্রর্থীসহ সাতক্ষীরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের চার জন প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচন যতোই ঘনিয়ে আসছে ততোই আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রুপ নিচ্ছে। ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের মধ্যে ভাগাভাগি হচ্ছে নৌকার ভোট। আর সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে জাতীয় পার্টি। যে কারণে দিন দিন বাড়ছে লাঙ্গলের ভোট। এই আসনে বিভিন্ন দল ও স্বতন্ত্র মিলে ১০ জন প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ স্বপন ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী সৈয়দ দিদার বখতের মধ্যেই, এমনটি ধারনা সাধারন মানুষের। ফলে শেষ হাঁসিটা কে হাঁসবে, লাঙ্গল না নৌকার প্রার্থী ভোটারদের মধ্যে তানিয়ে চলছে এখন চুলচেরা বিশ্লেষন।

তালা ও কলারোয়া উপজেলার ২৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) নির্বাচনী আসন। আসনটিতে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৩ জন। আর দুইটি উপজেলা মিলে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৬৮টি। বিগত ১৪ ও ১৮ সালের নির্বাচনে এই আসনে মহাজোটের শরীক বাংলাদেশের ওয়ার্কস পার্টির প্রার্থী এড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ’র হাতে নৌকা প্রতীক তুলে দেয়া হয়। ফলে পরপর দুই বার নৌকা প্রতীক নিয়ে এমপি নির্বাচিত হন তিনি। এতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আ’লীগের নেতাকর্মীদেরকে কোনঠাসা করে সাংগঠনিকভাবে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করা সহ নানা অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।

সেকারণে এবার আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা-কর্মীদের শান্ত করতে এই আসনে নৌকার প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন হন সেই নৌকার মাঝি। এতেও খুশি নয় দলের অনেকেই। চরম ক্ষুব্ধ দলের একাংশের নেতা-কর্মীরা। দলীয়ভাবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকায় এই আসনের সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান, তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নূরুল ইসলাম ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এস এম মুজিবর রহমান (সরদার মুজিব) প্রার্থী হন। যদিও প্রার্থীতা প্রত্যাহারের দু’দিন পর ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান অসুস্থ্যতার কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষনা দেন। বাকী দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী মাঠে আছেন বেশ কোমর বেঁধে। জোরেশোরে চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা।

এদিকে, এড. মুুস্তফা লুৎফুল্লাহ এই আসন থেকে এবার ওয়ার্কস পাটির দলীয় প্রার্থী হওয়ার পর তিনিও নির্বাচনের মাঠে থাকবেন না বলে ঘোষনা দিয়েছেন। দলীয় সিদ্ধান্ত ও কৌশলগত কারণে তিনি ভোটের মাঠ ছেড়েছেন আগেই। তবে এখনও প্রকাশ্যে কাউকে সমর্থন দেননি তিনি।

অপরদিকে নির্বাচনে স্বতন্ত্র হিসাবে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকায় দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা পড়েছে বিপাকে। তারা কোন প্রার্থীকে ভোট দেবে বা বেঁছে নেবে তানিয়ে অনেকেই ভূগছে সিদ্ধান্তহীনতায়।

তালার ধানদিয়া এলাকার ভোটার বিশ্বনাথ মন্ডল বলেন, জাতীয় পার্টির একটি ভোটব্যাংক রয়েছে এই আসনটিতে। এলাকায় যথেষ্ট সুনাম, জনপ্রিয়তাও রয়েছে দিদার বখতের। এরশাদ সরকারের আমলে এই আসন থেকে সৈয়দ দিদার বখত এমপি হন। পরবর্তীতে প্রতিমন্ত্রী হয়ে এলাকার দৃশ্যমান উন্নয়নের কিছু স্বাক্ষি রেখে গেছেন তিনি। যার ফলে অনেকেই দল-বেদল না দেখেই ব্যক্তি দিদারকে পছন্দ করছেন। জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মী ছাড়াও অন্যান্য দলের ভোটাররা তাকে ভোট দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। দিদার বখত তালার ছেলে। আঞ্চলিকতার কারণে তালার মানুষ তাকে কোন দল না দেখে ভোট দিতে পারে।

কলারোয়ার বাটরা গ্রামের আজিবর রহমান বলেন, কলারোয়ায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এখন চরমে পৌছেছে। সেখানে সীমান্তজুড়ে জাতীয় পার্টির একটি রিজার্ভ ভোট রয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের সরদার মুজিব গত বারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ভালোই ভোট পেয়েছিলেন। তারও একটি ভোটব্যাংক রয়েছে আসনটিতে। তালা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ নূরুল ইসলাম ১৮ সালে নৌকার মনোনয়র পাওয়ার পর মহাজোটের কারণে শেষ-মেষ তাকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। তারও একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে তালা এলাকায়। সব মিলিয়ে এবার লাঙ্গলের প্রার্থী সৈয়দ দিদারের ভাগ্য খুলতে পারে বলে তার ধারনা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলোরোয়ার যুগিখালীর একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, কলোরোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কলারোয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টুর সাথে অনেক আগে থেকেই চরম বিরোধ রয়েছে নৌকার প্রার্থী স্বপনের। লাল্টুর সমর্থকদের অনেকেই ইতিমধ্যে নৌকার বিপক্ষে মাঠে নামতে দেখা গেছে। ফলে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে জয়লাভ করা কঠিন হতে পারে। নৌকার প্রার্থী স্বপনের বাড়ি কলারোয়াতে। সেখানেই যদি স্বপন ভোটের মাঠ ঠিক না করতে পারে তাহলে তার জন্য জয়ী হওয়া কঠিন হবে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী জাফরউল্লাহ বলেন, কলারোয়া ও তালায় নৌকার যে ভোটব্যাংক রয়েছে তাদিয়ে এককভাবে নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করা সম্ভব। কিন্তু নৌকার ভোট আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ভাগাভাগি হলে নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করে আনা বেশ কঠিন হবে।

নৌকার প্রার্থী ফিরোজ আহমেদ স্বপন বলেন, আমার দলের নেতা-কর্মীরা বিপক্ষে যারা অবস্থান নিয়েছে তাদের নিয়ে আমি শংকীত নই। তাদের কর্মকান্ড দেখে আমার হাঁসি পায়। এসব বিরোধীতা নদীর স্রোতের সাথে ভেসে যাবে। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী সৈয়দ দিদার বখত বলেন, শুধু জাতীয় পার্টি নয়, সব দলের ভোট আমি পাবো। এমনকি আওয়ামী লীগের অংসখ্য ভোটার আমার জন্য মাঠে কাজ করছে। ইনশাল্লাহ এবারের নির্বাচনে আমিই জয়ী হবো।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!