সাতক্ষীরায় করোনা আক্রান্তের মূল কারণ সীমান্ত দিয়ে ভারত ফেরত নাগরিকের আগমন এবং ভারতীয়দের প্রবেশ। এজন্য সীমান্ত এলাকায় বাড়ানো হয়েছে বিজিবি’র নজরদারি। বিজিবিকেও বিশেষ ক্ষমতা দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা অবহিতকরণে মঙ্গলবার (১ জুন) সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল তার সম্মেলন কক্ষে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে করোনা ইউনিট ঘোষণা করা হয়েছে। আরও একটি ইউনিট বাড়ানো হবে। শুধুমাত্র সীমান্তে নজরদারী নয়, করোনা প্রতিরোধে সীমান্তের প্রতিটি গ্রামে একটি শক্তিশালী কমিটিও গঠন করা হবে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উপরও কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে।
মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত কল্পে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে রোগীর দর্শণার্থীদের প্রতিও কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হবে। সাতক্ষীরায় ৫টি বেসরকারি ক্লিনিককে করোনা রোগীর চিকিৎসায় অনুমতি দেওয়া হলেও ওই ক্লিনিক গুলোতে কোন করোনা ইউনিট নেই। তাই বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতেও সরকারি নিয়ম অনুযায়ী করোনা ইউনিট খুলে চিকিৎসা সেবা পরিচালনা করতে হবে। সাতক্ষীরাকে করোনামুক্ত করতে সকলকে সহযোগিতা করতে হবে।
করোনা ও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের এ দুর্যোগকালীন সময়ে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল।
মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাঃ হুসাইন শাফায়াত বলেন, সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় ভারতীয় নাগরিক এবং ভারত ফেরত বাংলাদেশী নাগরিকদের যাতায়াতের কারণে দিনদিন করোনার হটস্পট হয়ে উঠেছে। এজন্য সাতক্ষীরা সীমান্তের চোরাপথ দিয়ে অবৈধ লোকজনের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী উপজেলা সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, কালিগঞ্জ, দেবহাটা এবং শ্যামনগরের কৈখালি ইউনিয়ন সংলগ্ন সীমান্ত পাহারায় স্থানীয়ভাবে প্রতিরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে থাকছেন উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, বিজিবি প্রতিনিধি এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানবৃন্দ। প্রতিরক্ষা কমিটি সীমান্তের চোরাচালানী, মানুষ পাচারকারী এবং অবৈধ যাতায়াতকারীদের চিহ্নিত করবে। একইসাথে তাদের বাড়িঘর এবং চলাফেরার ওপর কড়া নজরদারি রাখা হবে। এছাড়া সীমান্ত গলিয়ে লোকজনের অবৈধ পারাপার রোধ করতে বিজিবি মাঠে রয়েছে।
তিনি জানান, ভোমরা বন্দর দিয়ে প্রতিদিন আসা ৩০০ পণ্যবাহী গাড়ির ৫ শতাধিক চালক ও হেলপার যাতে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে না পারে সে ব্যাপারেও বাধানিষেধ জারি করা হয়েছে। এদিকে করোনা সংক্রমন রোধে প্রত্যেককে মাস্ক ব্যবহার করে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশ লঙ্ঘন করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবে। বর্তমান করোনা সংক্রমনের হার কতটা তা নিশ্চিত করে আগামী ৩ জুনের পর থেকে সাতক্ষীরা জেলায় লকডাউনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
সিভিল সার্জন ডাঃ হুসাইন শাফায়াত জানান, গত ২২ মে’র পর থেকে সাতক্ষীরায় করোন সংক্রামন বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৩ মে করোনা সংক্রমণের হার ছিল ৩৮ শতাংশ। পরের দিন ২৪ মে এই হার বেড়ে দাঁড়ায় ৪১ শতাংশে। ২৫ মে আবারো কমে দাঁড়ায় ৪০ শতাংশে। ২৬ মে সংক্রমণের হার দাঁড়ায় ৪৬ শতাংশে। ২৭ মে শুন্য থাকার পরে ২৮ মে সংক্রমণের হার দাঁড়ায় ৪৩ শতাংশে। আর ২৯ মে সংক্রমণের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশে। ৩০ মে ৯১ জনের টেস্টের বিপরীতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ জন। এদিকে, ২৩ মে করোনায় একজন মারা গিয়েছিলেন।
বেশ কয়েকদিন বিরতির পরে রবিবার রাতে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রহিমা খাতুন নামের একজন বয়স্ক নারী মারা গেছেন। এনিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ৪৭ জন। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২০৯ জন। এছাড়া জেলায় ৯ হাজার ১১১ জনের করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৮৪ জন।
এসময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপী, সাবেক সভাপতি আবু আহমেদ, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম কামরুজ্জামান প্রমুখ।
খুলনা গেজেট/ এস আই