খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কুমিল্লায় অটোরিকশায় ট্রেনের ধাক্কায় নিহত বেড়ে ৭
  মানবতাবিরোধী অপরাধ : চিফ প্রসিকিউটর দেশে না থাকায় ফখরুজ্জামান ও সাত্তারের জামিন শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল আপিল বিভাগ

সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে হামলা-ব্যালাট ছিনতাই, আহত ১২

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন চলাকালে প্রতিপক্ষরা সভাপতি প্রার্থী ও নির্বাচন কমিশনারদের উপর হামলা চালিয়েছে। হামলায় ৬ জন নির্বাচন কমিশনারসহ ১২ জন আহত হয়েছে। এ সময় ছিনতাই করা হয়েছে নির্বাচনী ব্যালট পেপার। বৃহষ্পতিবার (১০ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আইনজীবী সমিতির প্রধান ভবনের দোতলায় এ ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে নির্বাচন কমিশনার ও প্রার্থীদের উপর হামলার ঘটনার পর জেলা প্রশাসকের পক্ষে আইন বহির্ভুতভাবে নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারিদের পক্ষে আইনজীবীরা বৃহষ্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দিতাকারি সায়েদুজ্জামান সাহেদ জানান, বৃহষ্পতিবার সকাল ৮টা থেকে সমিতির মূল ভবনের দোতলায় পুলিশের উপস্থিতিতে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন শুরু হয়। নির্বাচন চলাকালে সাংসদ অ্যাড. মুস্তাফা লুৎফুল্লাহ ভোট দেওয়ার কিছুক্ষণ পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অ্যাড. সালাউদ্দিন, অ্যাড.আ.ক.ম রেজোয়ানউল্লাহ সবুজ, অ্যাড. এখলেছার আলী বাচ্চু, অ্যাড নুরুল আমিন, অ্যাড. শাহানাজ পারভিন মিলি, অ্যাড. সেলিনা আক্তার শেলী, শাকিলা খাতুনসহ কয়েকজন ভোট কেন্দ্রে ঢুকে নির্বাচন কমিশনারদের উপর হামলা চালিয়ে ভোট বন্ধ রাখতে বলে। এসময় ভোট বন্ধ করতে আপত্তি করায় ছয়জন নির্বাচন কমিশনারকে মারপিট করা হয়। কেড়ে নেওয়া হয় ব্যালট পেপার। ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা হয় ব্যালট বক্স। এ খবর পেয়ে তিনি ও সভাপতি প্রার্থী অ্যাড. এম শাহ আলমসহ কয়েকজন সেখানে ছুঁটে যান। এঘটনার প্রতিবাদ করায় অ্যাড. এম শাহ আলমকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করেন অ্যাড. রেজোয়ানউল্লাহ সবুজ ও অ্যাড. নুরুল আমিন। পরে তাদের সহযোগিরা তাকে ও প্রার্থী আমিনুর রহমান চঞ্চলসহ কমপক্ষে ছয়জন আইনজীবীকে কিল, চড় ও ঘুষি মেরে আহত করেন। অ্যাড. এসএম হায়দার, শাকিলা খাতুন, শাহানাজ পারভিন মিলি, সেলিনা আক্তার শেলী দখল করে নেয় নির্বাচন কমিশনারদের চেয়ার। পরে অতিরিক্ত পুলিশ এসে পইিস্থতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পৌনে ১২টার দিকে জেলা প্রশাসক হুমায়ুন কবীরের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি নির্বাচন স্থগিত করার নির্দেশ দেন। পরে নির্বাচন কমিশনারদের নির্বাচন সংক্রান্ত সকল জিনিসপত্র জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দিতে বলা হয়। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া আইনজীবীদের উপর হামলার ঘটনায় মামলা করা হবে।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা আইসজীবী সমিতির সদস্য অ্যাড. শাহানাজ পারভিন মিলি বলেন, তারা হামলা করেননি। গঠণতন্ত্র বহির্ভুতভাবে অ্যাড. শাহ আলমসহ কয়েকজন নির্বাচন প্রক্রিয়া চালাচ্ছিল। সমিতির একজন সদস্য হিসেবে তিনি বাধা দিয়েছেন। এ ছাড়া অ্যাড. আমিনুর রহমান চঞ্চল, অ্যাড. কামরুজ্জামান ভুট্টো, অ্যাড. সিরাজুল ইসলাম (৫)সহ কয়েকজন আইনজীবী অ্যাড সালাহউদ্দিনের ল’ চেম্বারে হামলা চালিয়ে দরজার ছিটকানি ভাঙ্গচুর করেছে।

সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. মোস্তফা নুরুল আলম বলেন, প্রতিপক্ষরা তাদের উপর হামলা চালিয়েছে। ব্যালাট ছিনতাই করেছে। জেলা প্রশাসক আইন বহির্ভুতভাবে নির্বাচন বন্ধ করেছেন। তাদের উপর হামলার ঘটনায় মামলা করা হবে।

সাতক্ষীরার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বাপ্পি দত্ত রনি বলেন, সংঘাতের কারণে জেলা প্রশাসক মোঃ হুমায়ুন কবীরের নির্দেশে ভোটগ্রহণ বন্ধ করা হয়েছে। বিবাদমান দু’ গ্রুপকে আলোচনার মাধ্যমে ভোট গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ গোলাম কবীর জানান, আদালত চত্বরে উত্তেজনা থাকায় সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোঃ রেজা রশীদ জানান, আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সংঘাতের ঘটনায় নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যালট বক্স, অব্যবহৃত ব্যালট ও খাতাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র জব্দ তালিকার মাধ্যমে জমা নেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, জেলা আইনজীবী সমিতির ১১ সদস্যের মধ্যে গত ২৭ জানুয়ারি ৭ জন ও ৩০ জানুয়ারি একজন পদত্যাগ করায় নির্বাচন কমিশনারের পক্ষ থেকে কমিটি ভেঙে দিয়ে নির্বাচন আহবান করা হয়। একই সাখে একটি গ্রুপ এসএম হায়দার কে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করে ১৩ মার্চ নির্বাচন ঘোষণা করে। উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সাংসদ অ্যাড, মুস্তাফা লুৎফুল্লাহ ও সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি আলোচনা করে ২৪ ফেব্রুয়ারি আইনজীবী সমিতির সাধারণ সভার মাধ্যমে ছয় সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠণ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. মোস্তফা নুরুল আলমকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা করা হয়। ১১ টি পদের বিপরীতে ২৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বি নির্বাচনে অংশ নেন। এরমধ্যে ৮জন বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় জয়লাভ করেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ তিনটি পদে ১০ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে ১৩ মার্চ অপরগ্রুপের প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাড. এসএম হায়দার বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় গত ৮ মার্চ অ্যাড. আব্দুল মজিদকে (২) সভাপতি ও অ্যাড. আ.ক.ম রেজোয়ান উল্লাহ সবুজকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করেন।

 

খুলনা গেজেট/এএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!