সাতক্ষীরায় বিরোধপূর্ণ একটি জমি দখল করতে গিয়ে এক যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। এসময় বাঁধা দিতে গিয়ে হামলার শিকার হয়ে এক নারীসহ চারজন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সাতক্ষীরা শহরতলীর বাঁকাল খেয়াঘাট জেলেপাড়ায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। আহতদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর যুবলীগ নেতার সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে রাতে ঝাটা মিছিল নিয়ে সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বাঁকাল জেলে পাড়ার হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী, পুরুষ ও শিশুরা। এসময় সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দোষীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেয় স্থানীয়রা।
বাঁকাল খেয়াঘাট এলাকার মণীন্দ্রনাথ বর বলেন, ‘তাদের গ্রামের পুলিন মাখালের তিন ছেলের মধ্যে পরিজিৎ মাখাল ও তাপস মাখাল অনেক আগেই ভারতে চলে গেছে। পুলিন মাখাল তার অংশের সকল জমি বিক্রি করে দেয়ায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে অপর ছেলে পরিতোষ মাখাল। এসময় পরিতোষ মাখাল বাজুয়ারডাঙ্গি শ্বশুরবাড়ি চলে যেতে চাইলে তার কাকা সুব্রত মাখাল তার একটি ঘরে তাকে (পরিতোষ) থাকতে দেয়। ইতোমধ্যে ২০০৭ সালে পুলিন মাখাল মারা যান।’
তিনি আরও জানান, পুলিন মাখালের কোন জমি না থাকার পরও তার কাছ থেকে ১৫ শতক জমি কেনার জন্য কোন চুক্তিপত্র ছাড়াই পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন মর্মে সম্প্রতি কাটিয়ার মুজিবর পেশকার দাবি করে আসছিলেন। একই সাথে পরিতোষ ও ভারতে বসবাসকারি তাপসকে বিবাদী করে আদালত থেকে মুজিবর ডিক্রী পেয়েছেন মর্মে স্থানীয়ভাবে প্রচার দেন।
একপর্যায়ে মার্চের শেষের দিকে যুবলীগ নেতাকে দিয়ে জীবননাশের হুমকি দিয়ে পরিতোষকে তাড়িয়ে রাতের আঁধারে তার ঘর দখলে নেয় মুজিবর রহমান। পরিতোষের কাকা সুব্রত মাখাল এর ঘর মুজিবর দখল করে নেওয়ায় স্থানীয়ভাবে ও আইনজীবী সমিতিতে কয়েকবার বসাবসি করা হলে শালিসের রায় মুজিবরের বিপক্ষে যায়। এরপরও ওই যুবলীগ নেতা বলেন যে, ঈদের পর বিষয়টি তিনি নিষ্পত্তি করবেন।
সাতক্ষীরা পৌর ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নারায়ন চন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘বৃহষ্পতিবার বাড়িতে সন্ধ্যা প্রদীপ দেওয়ার পরপরই ওই যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে কয়েকটি মোটরসাইকেলে ৩০/৪০ জন সন্ত্রাসী হাতে একই সাইজের লাঠি নিয়ে তাদের পাড়ার অহল্যা মাখাল, সহাদেব মাখাল, বলরাম মাখাল, ও নিরঞ্জন মাখালের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর চালায়। এতে বাঁধা দেওয়ায় অহল্যা, বলরাম, সহাদেব ও নিরঞ্জনকে পিটিয়ে জখম করা হয়। এ সময় লুটপাট করা হয় ঘরের মালামাল। স্থানীয়রা খবর পেয়ে ছুঁটে এলে হামলাকারিরা চলে যায়। আহত চারজনকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
তিনি আরো বলেন, ‘মুজিবরের পক্ষ হয়ে যুবলীগ নেতার এ ধরণের হামলার প্রতিবাদে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী, পুরুষ ও শিশু সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে ঝাঁটা মিছিল করে রাতে সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কঅবরোধ করে। এতে রাস্তার দু’পাশে কয়েক’শ গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। রাস্তা অবরোধকারীরা বারবার যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত নেতাকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান।
খবর পেয়ে সদর থানারভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানসহ পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে দোষীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে মুজিবর রহমান বলেন, ‘তিনি আদালত থেকে ডিক্রী পেয়ে জমি দাবি করায় পুলিন মাখালের ছেলে পরিতোষ স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়ে
দিয়ে তাকে দখলে দিয়ে গেছে। এখন সুব্রত মাখাল ওই জমি তার বলে দাবি করছে।’
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান হামলা ও ভাংচুরের ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘মুজিবরকে পরিতোষের ব্যবহৃত ঘর থেকে স্বপরিবারে বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত কোন পক্ষই ওই ঘরে উঠতে পারবে না। তবে যারা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা মামলা দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
খুলনা গেজেট/এনএম