সাতক্ষীরায় প্রতিবেশীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সালিশ বৈঠকে মারপিটের ঘটনায় আহত গোলাম কুদ্দুস নামের এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত কৃষক গোলাম কুদ্দুস (৫৫) সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের মৃত জোহর আলীর ছেলে।
এ ঘটনায় কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, অভিযোগকারী প্রতিবেশী আমজাদ হোসেন ওরফে মনি ও তার ভাবি রাজিয়া খাতুন ওরফে মৌসুমিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ।
কলারোয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজ কিশোর পাল স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে জানান, আমজাদ হোসেন ওরফে মনি’র সাথে তার ভাবি রাজিয়া খাতুন ওরফে মৌসুমির অনৈতিক সর্ম্পকের বিষয় তুলে কৃষক গোলাম কুদ্দুস স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে গল্প করেন। বিষয়টি জানার পর আমজাদ হোসেন মনি ও তার ভাবি রাজিয়া খাতুন মৌসুমি প্রতিবেশী গোলাম কুদ্দুসের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন পরিষদে একটি অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রাম আদালতে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য চন্দনপুর ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলামের নির্দেশে শুক্রবার গোলাম কুদ্দুসকে নোটিশ করে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে পাঠানো হয়।
গ্রাম পুলিশ (চৌকিদার) দিলীপ ও আশোক তার বাড়িতে গিয়ে ডেকে আনার সময় কুদ্দুসের স্ত্রীর সাথে গ্রাম পুলিশদের বচসা হয়। একপর্যায় গ্রাম পুলিশ দিলীপ ও আশোক দু’জনে কুদ্দুসকে মারপিট করে। এতে অসুস্থ হয়ে পড়েন কৃষক গোলাম কুদ্দুস। এঘটনার পর আহত অবস্থায় কুদ্দুস বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে তার অবস্থার অবনতি হলে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, ‘নোটিশ করার পর চৌকিদার দিলীপ ও অশোক বাড়ি থেকে কৃষক গোলাম কুদ্দুসকে ধরে পরিষদে নিয়ে যায়। সেখানে সালিশ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম। গ্র্রাম আদালতের বিচারে গোলাম কুদ্দুসকে দোষী সাব্যস্ত করে লাঠি দিয়ে মারপিট করেন ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, চৌকিদার দিলীপ ও অশোক। এখন চেয়ারম্যানকে রক্ষা করার জন্য শুধুমাত্র দুই চৌকিদারের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে।’
এসআই রাজ কিশোর কলারোয়া হাসপাতালের প্রাথমিক রির্পোটের বরাত দিয়ে আরো জানান, মৃত গোলাম কুদ্দুস এর দেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য গোলাম কুদ্দুসের মরদেহ সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ও অভিযোগকারী মনি ও মৌসুমিকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গ্রাম পুলিশ দিলীপ ও অশোককে গ্রেফতারে পুলিশ অভিযানে রয়েছে।
কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুনীর উল গীয়াস জানান, এঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ও দুই অভিযোগকারীকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
খুলনা গেজেট/এনএম