খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড
৯ মাসে হত্যার শিকার ৬ শিশু

সাতক্ষীরায় সামাজিক কুসংস্কার ও দারিদ্র্যের কারণে বেড়েছে শিশু হত্যা

রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা

বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, সামাজিক কুসংস্কার, দারিদ্র্য ও বিচার না হওয়ায় সাতক্ষীরায় বেড়েছে শিশু হত্যা। এছাড়া ঘটনার সঠিক তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শস্তি না হওয়ায়ও এসব হত্যার ঘটনা বাড়ছে।

সাতক্ষীরায় গত নয় মাসে ছয় শিশু বিভিন্নভাবে হত্যার শিকার হয়েছে। বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, সামাজিক কুসংস্কার, দারিদ্র্য ও বিচার না হওয়ায় সাতক্ষীরায় বেড়েছে শিশু হত্যা। গতবছর অক্টোবর মাস থেকে চলতি জুলাই মাসে ১৫ তারিখ পর্যন্ত সাতক্ষীরায় পারিবারিকভাবে হত্যার শিকার ৬টি শিশু আলোচনা এসেছে। এছাড়াও রাস্তার পাশ থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয় আরও এক শিশুকে। নিহত শিশুদের মধ্যে অধিকাংশই কন্যা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৩ জুলাই মঙ্গলবার আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের গুনাকরকাটি ব্রিজের উপর থেকে একটি শিশুকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। শিশুটিকে জীবিত উদ্ধার করলেও তার মাথায় গুরুতর আঘাতের কারণে রক্তক্ষরণ হয়। তাকে ভর্তি করা হয় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে। হাসপাতালের ডাক্তারদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে ৫ ঘন্টা পর নবজাতক শিশুটি মারা যায়। ঘটনা সাথে জড়িতদের পরিচয় পাওয়া গেলেও আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের খবর পাওয়া যায়নি।

এর আগে ১২ জুলাই সোমবার সাতক্ষীরা শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জে পারশেখালী গ্রামের পুকুর থেকে ১মাস বয়সী শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওইদিন দুপুরে শিশুটির মা আফরোজা খাতুন ঘুমিয়ে পড়লে তাকে কে বা কারা পুকুরে ফেলে দেয় বলে জানানো হয়। পুকুর থেকে শিশুটির মরাদেহ উদ্ধার করা হলেও ঘটনার কোন ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ।

গত ২ জুন সাতক্ষীরায় তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামের চতুর্থ সন্তান মেয়ে হওয়ায় স্বামী ভৎসনা জন্য আট দিন বয়সী সন্তানকে পুকুরে ফেলে হত্যা করা হয়। হত্যার অভিযোগে মাকে আটক করলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।

গত ১ এপ্রিল সাতক্ষীরার কলারোয়ার লাঙ্গলঝাড়ায় সন্তানের যৌন নির্যাতনের বিচার না পেয়ে দুই ছেলে-মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেন মা মাহফুজা খাতুন (৩২)। নিহত দুই শিশু হলো, মাহফুজ (৯) ও মোহনা (৫)। এঘটনায় মামলা দায়ের করা হলেও আজও পর্যন্ত কোন আসামী গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

গত বছরের ২৮ নভেম্বর সাতক্ষীরা সদর উপজেলার হাওয়ালখালীতে অপুষ্টি নিয়ে জন্মগ্রহণ করা শিশুকে হত্যা করে বাবা-মা। ১৫ দিন বয়সী ওই শিশুর লাশ বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ওই শিশুর বাবা-মাকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের ওই শিশুর হত্যার দায় স্বীকার করে তার বাবা-মা।

একই বছরের ৪ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কালিগঞ্জ উপজেলার গোলখালী এলাকার রাস্তার পাশে একটি ব্যাগের মধ্যে থেকে একটি শিশুকে উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। নবজাতক শিশুটিকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে ভর্তি করা হয়। ডাক্তারের ভাষ্য মতে মাত্র ৩-৪ ঘণ্টা আগে শিশুটির জন্ম। প্রশাসনের সহযোগিতায় পরে শিশুটিকে এক শিক্ষক দম্পতিকে দত্তক দেয়া হয়।

এ বিষয়ে নাগরিক নেতা এড. ফাহিমুল হক কসিলু বলেন, করোনার কারণে মানুষ অনেকটা ঘর মুখি। আবার অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছে সে কারণে পারিবারিক সহিংসতা বেড়ে যাচ্ছে। আবার এসব ঘটনার সঠিক তদন্ত  এবং দৃষ্টান্তমূলক শস্তি না হওয়ায়ও এসব হত্যার ঘটনা বাড়ছে।

তিনি এসব ঘটনায় সুনির্দিষ্ট মামলার মাধ্যমে সঠিক বিচারের দাবি জানিয়ে আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে বিবাহপূর্ব যৌন সম্পর্ক পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোনো অবিবাহিত মেয়ে অন্ত:সত্ত্বা হয়ে পড়লে বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে পরিবারের সদস্যরা আইন তুলে নেন নিজেদের হাতে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মা আর তার সন্তানকে খুন হতে হয়।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়াচ্ছে মানুষ। বিয়ের আগেই শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে। আমরা এমন এক সমাজে বাস করি, যেখানে আমাদের ছেলে-মেয়েদের হাতে মোবাইল ফোন আছে, তারা পশ্চিমা সিনেমা দেখছে। কখনো কখনো তারা সমাজের নিষেধ না মেনে প্রেমে জড়াচ্ছে, যা খুশি তাই করছে। কিন্তু পরিবার যখন বিষয়টি জানতে পারছে, ততদিনে হয়ত মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়েছে। সামাজিক কুসংস্কার ও দারিদ্র্যের কারণেও হত্যার শিকার হচ্ছে শিশুরা। বিশেষ করে কন্যা শিশুরা কুসংস্কারের বলি হচ্ছে। সব মিলিয়ে সাতক্ষীরায় শিশু হত্যার ঘটনাগুলো সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!