খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  আইপিএল নিলামে অবিক্রিত মোস্তাফিজুর রহমান, ভিত্তিমূল্য ছিলো ২ কোটি রুপি
  ইসকন নেতা চিন্ময় দাসকে বিমান বন্দরে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি
  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড
ভোট বর্জন, কেন্দ্র দখল : স্থগিত এক‌ কে‌ন্দ্রে

সাতক্ষীরায় বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ২১ ইউপি’র ভোট গ্রহণ সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় ভোটারদের কেন্দ্র যেতে বাধা প্রদান, কেন্দ্র দখলের চেষ্টা, ভোট কেটে নেয়া, প্রার্থী ও এজেন্টদের মারপিট করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, ভোট গ্রহণ স্থগিত এবং স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে তালা ও কলারোয়া উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ। এখন চলছে গণনা।

তালা ও কলারোয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে টানা বৃষ্টির কারণে সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণের শুরতেই অধিকাংশ কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি একেবারেই ছিল না। কিন্তু বৃষ্টি কমলে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে আসা শুরু করেন। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভোট কেন্দ্র গুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি বেড়ে যায়। বেলা ১১ টার দিকে তালার মহান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা দেখা গেছে ভোটাররা দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে ভোট দিচ্ছেন। এসময় পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটার উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়।

এদিকে কলারোয়া উপজেলার কয়লা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল ইসলাম মোল্লা কেন্দ্র থেকে মারপিট করে নির্বাচনী এজেন্টদের বের করে দেয়া, প্রতিবাদ করায় তাকেও মারপিট করা ও বুকে অস্ত্র ধরা সহ বিভিন্ন অভিযোগে ভোট বর্জন করেছেন। সোমবার সকাল সাড়ে দশটায় রফিকুল ইসলাম তার নিজস্ব বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ভোট বর্জন এই ঘোষণা দেন।

এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, সকাল হতেই চারটি কেন্দ্র থেকে তার নির্বাচনী এজেন্টের বের করে দেয়া হয়। কেন্দ্রের ব্যালট বক্স দখল করে নৌকা প্রতীকে সীল মেরে নেওয়া হয়েছে। আমার একজন এজেন্টের বুকে প্রকাশ্যে অস্ত্র ধরে তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। এছাড়া সাধারণ ভোটারদেকে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধাগ্রস্ত করছে নৌকার প্রার্থীর লোকজন।

অপরদিকে অনিয়মের অভিযোগে কেড়াগাছি ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের কেড়াগাছি ভোট কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরে বন্ধ হয়ে যায়। রাতেই নৌক প্রতীকে সিল মেরে ব্যালট কেটে বাক্সে ঢোকানোর অভিযোগে এই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়।

কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জুবায়ের হোসেন চৌধুরী বলেন, ব্যালটে ছাপ্পা মারার অভিযোগে এই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে।

এছাড়া কেড়াগাছি ইউনিয়নের হঠাৎগঞ্জ ও পশ্চিম বোয়ালিয়া কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীও লোকজন ভোট প্রদানে বাধাগ্রস্থ হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটারদের ঢুকতে বাধা দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শহিদুল ইসলাম। তিনি বলে,‘সোনাবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আমার নিজের বাড়ির এলাকার কেন্দ্র। এই কেন্দ্রে সমর্থক ভোটারদেরকে ভোট কেন্দ্রে ঢুকতে দিচ্ছে না নৌকার প্রার্থীর লোকজন ও আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়া ইউনিয়নের আরো কয়েকটি কেন্দ্রে আমার ভোটরদের যেতে দেয়া হচ্ছে না। ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার পথে বিভিন্ন স্থানে তাদেরকে বাধা দিয়ে ফেরত দেয়া হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে আমার কর্মী সমর্থকদেও হুমকি দেয়া হচ্ছে।’ স্থানীয় প্রশাসনকে বিষয়টি অবহিত করার পরও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

অপদিকে তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের শ্রীমন্তকাঠী, দোহার, মক্তব ও জালালপুর কেন্দ্রে গোলযোগের খবর পাওয়া গেছে। সকালে মক্তব কেন্দ্রের দু’টি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলে পুলিশ দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে জানা গেলেও প্রশাসন গুলি চালানোর ঘটনা অস্বীকার করেছে। তবে কেন্দ্রে বোমা ফেলে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।

এছাড়া শ্রীমন্তকাটি কেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীর এজেন্ট মিন্টু গাজী, হাবিবুর ফকির ও আসাদুলকে মারপিট করেছে নৌকা প্রার্থীর লোকজন বলে অভিযোগ উঠেছে । এর আগে সকালে শ্রীমন্তকাটি কেন্দ্রের পাশে নৌকার কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন জানান, তালার জালালপুর ইউনিয়নের ১নং মক্তব কেন্দ্রের পাশে বোমা বিস্ফোরণ করে কেন্দ্র দখলে নেয়ার চেষ্টা করে নৌকা প্রতীকের কর্মীরা। এসময় তারা হাতুড়ি ও লাটি-সোটা নিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। পরে র‌্যাব সদস্যরা উপস্থিত হয়ে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এঘটনায় নৌকা প্রতীকের কর্মী আজহার হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ। এছাড়া কানাইদিয়া ওয়ার্ডে হাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন সুজিত কাগুজি নামের এক যুবক।

তালা থানার ওসি মেহেদি রাসেল জানান, জালালপুর ইউনিয়নের দোহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১১টার নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মফিদুল হক লিটুর কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে বাবুল হোসেন ও ইমদাদুল হক নামের দু’পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। তাদেরকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া আটক গুলিবিদ্ধ সুজিত কাগুজিকে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা চলছে বলে জানান ওসি।

এছাড়া তালার ১০নং খেশরা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী রাজিব হোসেনের বাড়ির পাশের কেন্দ্র দখল করে নৌক প্রতীকে ভোট কেটে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে নৌকার প্রার্থী রাজিব হোসেন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ভোর রাত থেকে শুরু হওয়া মুসলধারে বৃষ্টির কারণে সকালে ভোট গ্রহণ কিছুটা বিঘ্নিত হলেও বেলা বাড়ার সাথে ভোট কেন্দ্র গুলো ভোটারদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে। চলতে থাকে ভোট গ্রহণ। প্রায় অধিকাংশ কেন্দ্র গুলোতে নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। তবে প্রার্থীদের কর্মী সমর্থকদের মধ্যে দিনভর ধাওয়া -পাল্টা ধাওয়া ও ভোটদানে বাধা দেয়ার ঘটনায় সাতক্ষীরার তালা ও কলারোয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

খুলনা গেজেট/এএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!