সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে টানা মৌসুমী বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) বিকাল থেকে বুধবার (২৮ জুলাই) সকাল পর্যন্ত কয়েক ঘণ্টার ভারী বর্ষণে সাতক্ষীরার সদর, তালা, কলারোয়া, আশাশুনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাাবিত হয়েছে। এছাড়া পানিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরা পৌরসভার নিম্নাঞ্চল। এতে করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। ভেসে গেছে জমির ফসল, আমন বীজতলা, মাছের ঘের ও পুকুর।
সাতক্ষীরার সদর উপজেলার ধুলিহর, ফিংড়ি, ব্রহ্মরাজপুর, লাবসা, বল্লী, ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের অধিকাংশ বিলগুলোতে সদ্য রোপা আমন ও বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। শতাধিক মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া নিম্ন অঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম-সদস্য সচিব আলী নূর খান বাবুল বলেন, পৌরসভার পানি নিষ্কাশনে সুষ্ঠু ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে বছরের পর বছর ধওে জলাবদ্ধতায় নাকাল নিম্মাঞ্চলের হচ্ছে। গত দুইদিনের টানা মৌসুমী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরা পৌর শহরের রসুলপুর, মেহেদিবাগ, মধুমল্লারডাঙ্গী, বকচরা, সরদারপাড়া, পলাশপোল, কামালনগর, পুরাতন সাতক্ষীরা রাজারবাগান, বদ্দিপুর কলোনি, ঘুড্ডির ডাঙ্গি, পুরাতন সাতক্ষীরা, কাটিয়া মাঠপাড়া, মাছখোলা, ডাইয়েরবিল, রথখোলার বিলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। প্লাবিত এলাকার অনেক স্থানে কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
কলারোয়ার খোরদো এলাকার আইয়ুব হোসেন জানান, অধিক বৃষ্টিপাতের কারনে বেতনা (বেত্রবতী) নদীর উভয় পাশের বিল ও গ্রামগুলো পানিতে প্লাবিত হয়েছে। তালা উপজেলার পাটকেলঘাটা থেকে শিক্ষক মুজিবর রহমান জানান, কপোতাক্ষ নদের তীরে অবস্থিত বিভিন্ন গ্রাম ও বিল পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। দেয়াল ধ্বসে পড়ার ভয়ে অনেকে বাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। এসব এলাকার বিলগুলোতে সদ্য রোপা আপন ও বীজ তলার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া পানের বরজেরও ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
আশাশুনি উপজেলার দরগাহপুর এলাকার বাসিন্দা জুলফিকার হায়দার জানান, ভারি বর্ষণে এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর। ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের।
আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, আনুলিয়া, খাজরা, বড়দল, শ্রীউলা, আশাশুনি সদর, দরগাহপুর, কাদাকাটিসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পানিতে থৈ থৈ করছে। শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, কাশিমাড়ি, বুড়িগোয়ালিনী, কৈখালি, রমজাননগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা, মথুরেশপুর, ভাড়াশিমলাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের মাছের ঘের ও পুকুর পানিতে ডুবে গেছে বলে খবর দিয়েছেন স্থানীয়রা।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে মঙ্গলবার বিকাল থেকে বুধবার দুপুর পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ৭৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আগামী কয়েকদিন এভাবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেরর তথ্য কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, ভারি বর্ষণে জেলার নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে সদ্য রোপা আমন, আউশ বীজ তলার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের জরিপ করে ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপন করে তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যদি ভারি বর্ষণ থেমে যায়, তাহলে রোপা আমন ও বীজতলার তেমন ক্ষতি হবে না। তারপরও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল বাছেদ জানান, হঠাৎ ভারি বর্ষণের ফলে জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় মারাত্মক কোন ক্ষয়-ক্ষতির খবর আসেনি। এছাড়া অতি বর্ষণজনিত ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপনে কোন নির্দেশনা পাননি তারা।