রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়ন অপেক্ষার কথা বলার পরও আজ হচ্ছে সাতক্ষীরা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন। শনিবার (৭ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান এড: শেখ সাইদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারি প্রার্থীদের একাংশ তালেব-মামুন পরিষদ এটি প্রহসনের নির্বাচন দাবি করে তা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে এ নির্বাচনকে ঘিরে এক পক্ষের দাবি নির্বাচন স্থগিত করতে হাইকোর্টের নির্দেশ রয়েছে। তবে সে দাবি নাকচ করেছেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান এড: সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, নির্বাচন স্থগিতের কোন পেপার্স আমাদের কাছে আসেনি। উড়ো কথায় আমরা নির্বাচন বন্ধ রাখতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, তিন সহস্রাধিক শ্রমিকের সংগঠন এটি। বারবার নির্বাচন পেছালে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা শান্তিপ্রিয়। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করা হয়েছে। এখন ভোট গ্রহণ চলছে বলে জানান তিনি।
অপরদিকে সাতক্ষীরা জেলা বাস মিনিবাস কোচ, মিনি বাস, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতে স্থগিত হওয়ায় আজ ৭ মে শনিবার উক্ত নির্বাচন করেছেন নির্বাচন কমিশন-এমন দাবি শ্রমিকদের একাংশের নেতাদের। তারা জানান, রেজিস্ট্রার অব ট্রেড ইউনিয়ন, খুলনার পরিচালক স্বাক্ষরিত একপত্রে সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে বিচারাধীন মামলায় পরবর্তী নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করা সমীচীন মর্মে প্রতীয়মান হয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা যায়, গত ৫ মে রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়ন, খুলনার পরিচালক স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়েছে, সাতক্ষীরা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন, রেজি: নং-খুলনা-৫৫০ এর নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে শেখ রবিউল ইসলাম মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ৪০৩৭/২০২২ রীট দায়ের করেন। উক্ত রীটের প্রেক্ষিতে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের ৩১-০৩-২০২২ তারিখের আদেশে ২ এপ্রিল ২০২২ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের উপর ৩ মাসের স্থগিতাদেশ প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত স্থগিত আদেশের বিরুদ্ধে জনৈক জাহিদুর রহমান মহামান্য আপীল বিভাগে আবেদন করেন। তার প্রেক্ষিতে মহামান্য আপীল বিভাগ ১৮-০৪-২০২২ তারিখের আদেশে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের ৩১-০৩-২০২২ তারিখের আদেশের উপর আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত আদেশ প্রদান করেন। অতঃপর দরখাস্তকারীপক্ষ শেখ রবিউল ইসলাম উক্ত আদেশ পরিবর্তন করে স্টাটাসকো এর প্রার্থনা করলে মহামান্য আপীল বিভাগ বিষয়টি শুনানীর জন্য আগামী ৩০-০৫-২০২২ তারিখে দিন ধার্য করেন।
রেজিস্টার অব ট্রেড ইউনিয়ন খুলনার পত্রে আরো বলা হয়েছে, সাতক্ষীরা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন, রেজি: নং-খুলনা-৫৫০ এর নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে মামলা বিচারাধীন যার ধার্য তারিখ আগামী ৩০-০৫-২০২২। বিষয়টি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। এমতাবস্থায়, সাতক্ষীরা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন, রেজি: নং-খুলনা-৫৫০ এর নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগে বিচারাধীন মামলার পরবর্তী নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করা সমীচীন মর্মে এ দপ্তরের নিকট প্রতীয়মান হয়।
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান এড. শেখ সাইদুর রহমান, সদস্য এড. রফিকুল ইসলাম ও এড. সাহেদ জানান, গত ৩১-৩-২০২২ তারিখে হাইকোর্টে ৬৭ নং পিটিশনের প্রেক্ষিতে নির্বাচন স্থগিত হয়েছিল। কিন্তু ১৮-০৪-২০২২ তারিখে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালতের এপিলেট ডিভিশনে ৬৭ নং পিটিশন ভাকেট করে দেয়। গত ২ এপ্রিল এর বন্ধ হওয়া নির্বাচন ৭মে অনুষ্ঠিত হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্ত মোতাবেক আজ ৭মে শনিবার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখ নপর্যন্ত ভোটাররা শান্তিপূর্নভাবে তাদেও ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন।
এদিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারি একাংশের প্রার্থীরা জানান, শুক্রবার বিকালে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান এড: সাইদুর রহমান মৌখিকভাবে আমাদের জানান যে, শনিবার নির্বাচন হবে না। তার এ ঘোষণা শুনে অনেক প্রার্থী ওইদিন সন্ধ্যায় কেউ ঢাকায়, কেউ বরিশালে, কেউ খুলনায় গিয়েছেন। ৩৬জন প্রার্থীর দাবি এই নির্বাচন বন্ধ করে অশ্রমিকদের বাদ দিয়ে এবং বাদ পড়া প্রকৃত শ্রমিকদের সমন্বয়ে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করা। কিন্তু সে দাবি উপেক্ষা করে প্রার্থীদের বিভ্রান্ত করে প্রহসনের নির্বাচন করছেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান এড: সাইদুর রহমান। তারা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান এড: সাইদুর রহমানের মৌখিক ঘোষণায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রমিকদের একাংশের নেতারা।
এদিকে ভুয়া শ্রমিক সমন্বয়ে ভোটার তালিকা প্রণয়ন করায় এবং কিছু প্রকৃত শ্রমিক ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়ায় তা সংশোধন করত: নির্বাচনের তারিখ পুনরায় নির্ধারণ করার দাবি জানিয়ে নির্বাচন বর্জন করেছেন তালেব-মামুন পরিষদ। গতকাল ৬ মে আবু তালেব ও শেখ মামুনুর রশিদ স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এ খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।