খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রীতি ম্যাচ : মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারাল বাংলাদেশ, সিরিজ শেষ হলো ১-১ সামতায়
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ

সাতক্ষীরার প্রাণ প্রাণসায়ের খাল পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার প্রাণ প্রাণসায়ের খাল এখন পৌরবাসীর ময়লা ফেলার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। খালে যত্রতত্র ইচ্ছামতো ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের ময়লা আবর্জনা। ফলে দখল আর দূষণে খালটি এখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। পৌরবাসীর সাঙ্গে সুলতানপুর বড়বাজার ও এর আশেপাশের কিছু ব্যবসায়িদের অসচেতনতার কারণে ভরা যৌবন নিয়ে এক সময়কার প্রবাহমান সাতক্ষীরা শহরের প্রাণসায়ের খাল এখন যৌবন হারিয়ে ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। সবকিছু দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সাতক্ষীরার শহরের নারিকলেতলা থেকে সুলতানপুর বড়বাজার পর্যন্ত এলাকা জুড়ে প্রাণসায়ের খালের পূর্বপাশে খালধার বরাবর গড়ে উঠেছে অসংখ্যা দোকানপাট ও বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। থানা মসজিদের রেখে একেবারে খালের ধার ঘেষে গড়ে উঠেছে বেশকিছু অস্থায়ী কাপড়ের দোকান। এসব অস্থায়ী দোকানের উচ্ছিষ্ট ময়লা ফেলা হচ্ছে খালে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সুলতানপুর বড়বাজার এলাকায়। এখানে পুরো বাজারে সমস্ত ময়লা আর্বজনার পাশাপাশি বাজারে জবাই করা পশুর মলসহ উচ্ছিষ্ট অংশ ফেলা হচ্ছে প্রাণসায়ের খালে।

প্রতিদিন এই বাজারে ছাগল, ভেড়া ও গরু মিলে প্রায় ত্রিশের অধিক পশু জবাই করা হয়। এসব পশুর সব ময়লা ফেলা হয় খালে। সাথে রয়েছে মাছের ভাঙ্গা ককশীটের অংশ। বিশেষ করে সুলতানপুর বড়বাজার এলাকা থেকে কেষ্ট ময়রার মোড় হয়ে সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল জলিল এর বাড়ি পর্যন্ত পুরো খাল জুড়ে ময়লা ফেলার কারণে খালের তলদেশ ভরাট হয়ে উঠেছে। এসব ময়লা আর্বজনা পচা দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। আর এ দুর্গন্ধ থেকে বাঁচার তাগিদে নাক চেপে রাস্তা পার হচ্ছেন মানুষজন। বিশেষ করে সকালে প্রাতভ্রমণকারিদের সবচেয়ে বেশি সমস্যা পাহাতে হয়।

সকালে প্রাতভ্রমণকারিদের একজন ওকালত আলী সানা বলেন, প্রতিদিন সকালে খালপাড়ের এ সড়ক দিয়ে কয়েকশো মানুষ হাঁটাহাঁটি করেন। কিন্তু খালে ফেলা ময়লা আর্বজনার পঁচা গন্ধের কারণে মাঝে মাঝে তাদের নাক চেপে ধরে দিয়ে চলাচল করতে হয়। খালের আশপাশের বাসিন্দারা ছাড়াও বড় বাজারের ব্যবসায়ী ও অন্য ব্যবসায়ীরা ময়লা ও আবর্জনা ফেলে দুর্গন্ধময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। এতে সাতক্ষীরা শহরের পরিবেশ অনেক দূষিত হয়ে পড়েছে।

পলাশপোল এলাকার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম জানান, সুলতানপুর বড়বাজারের পশু জবাইয়ের উচ্ছিষ্ঠ অংশসহ বিভিন্ন ময়লা খালে ফেলার কারণে শহরের কেষ্ট ময়রার মোড় থেকে বড়বাজার ব্রীজ পর্যন্ত খালের তলদেশ ভরাট হয়ে উঠেছে। মাত্র বছর তিনেক আগে খনন করা খাল এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে খালের স্বাভাবিক পানি প্রবাহ। আর প্রবাহ না থাকায় এখন পুরো খালের পানি পঁচে কালো হয়ে দূগন্ধ ছড়াচ্ছে। যা পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরুপ। তিনি প্রাণসায়ের খালের যত্রতত্র ময়লা আর্বজনা ফেলা বন্ধ করতে সাতক্ষীরা পৌরসভা সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

মানবাধিকারকর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত বলেন, বড়বাজারের ব্যাবসায়িসহ পৌর সভার কিছু সংখ্যাক নাগরিকের অসচেতনতার কারণে সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহমান প্রাণসায়ের খালটি এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। ইচ্ছামত যেখানে সেখানে ফেলা হচ্ছে ময়লা আর্বজনা। প্রাণ সায়ের খালকে যারা ভাগাড়ে পরিণত করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।
সুলতানপুর বড়বাজার মৎস্য ব্যাসায়ি সমিতির সভাপতি আব্দুর রব বলেন, বাজারের পাশে খালে ময়লা আর্বজনা না ফেলার জন্য ব্যবসায়িদের বলা হয়েছে। এরপরও অনেকে ময়লা ফেলছেন। আমরা চেষ্টা করছি যাতে কেউ আর ময়লা না ফেলে। তবে আগের চেয়ে ময়লা ফেলা এখন অনেক কমেছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র ফিরোজ হাসান বলেন, বেশকিছুদিন আগে পৌর সভার পক্ষ থেকে খালের সেওলা উঠিয়ে ফেলা হয়েছে। মানুষ যাতে খালটিতে ময়লা– আবর্জনা না ফেলে, সেজন্য বারবার বলা হচ্ছে। কিন্তু কেউ শুনছে না। জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলাপ করেছি। খুব দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, প্রাণ সায়ের খালপাড়ের বাসিন্দা ও দোকানদারদের নোটিশ করে নিষেধ করা হবে। তারা না শুনলে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় দেখছেন না। খাল রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গতঃ ১৮৫০ সালের দিকে সাতক্ষীরার জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরী নদীপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবিধা ও শহরের শ্রীবৃদ্ধির জন্য খালটি খনন করেন। মরিচ্চাপ নদের সঙ্গে বেতনা নদীর সরাসরি যোগাযোগ রক্ষার জন্য সাতক্ষীরা শহরের ওপর দিয়ে ১৪ কিলোমিটার এ খাল খনন করা হয়। খুলনা, বরিশাল, ঢাকা, কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থানের সঙ্গে প্রধান যোগাযোগের মাধ্যম ছিল এ খাল। এ খালের মাধ্যমে সহজ হয়ে উঠেছিল জেলার অভ্যন্তরীণ যোগাযোগও। জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরীর নাম অনুসারে খালটির নামকরণ করা হয় প্রাণ সায়ের খাল।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!