খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  বিচার বিভাগকে ঘুষ ও দুর্নীতিমুক্ত করার চেষ্টা হচ্ছে : ড. ইউনূস
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৩৮৯
  পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকেও আমরা ভারত থেকে ফেরত চাইব : প্রধান উপদেষ্টা

সাতক্ষীরার নিম্মাঞ্চল প্লাবিত, তলিয়ে গেছে ধানের বীজতলা, মাছের ঘের

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

টানা কয়েকদিনের স্বাভাবিক বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে জেলার নিম্মাঞ্চল। এতে সদ্য রোপা আমন ও আউশ ধানের বীজলা তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার, ভেসে গেছে হাজার বিঘা মাছের ঘের ও ফসলি জমি।

সাতক্ষীরার আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার (২ আগস্ট) সকাল ১০টা পর্যন্ত গত দুই দিনে ১৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা পৌরসভার নিচু এলাকায় পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার আশংকা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলা শহরের নিম্মাঞ্চলে বসবাসকারী শতাধিক পরিবার। বেশকিছু এলাকায় মানুষের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।

এদিকে বেতনা নদী তীরবর্তী এই বিলগুলোর পানি নদীতে যেতে পারছে না। এই পানি পৌরসভার দিকে এগিয়ে আসছে। অতিবৃষ্টিতে গ্রামাঞ্চলের সব পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে।

সাতক্ষীরা শহরের ইটাগাছা এলাকার আলীনুর খান বাবুল জানান, পৌরসভায় পানি নিষ্কাশনে যথাযথ ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় মানুষ বছরের পর বছর ধরে জলাবদ্ধতায় ভুগছে। গত দুই দিনের স্বাভাবিক বর্ষণে তলিয়ে গেছে পৌরসভার ইটাগাছা, কামাননগর, রসুলপুর, মেহেদিবাগ, মধুমোল্লারডাঙ্গী, বকচরা, সরদারপাড়া, পলাশপোল, পুরাতন সাতক্ষীরা, রাজারবাগান, বদ্দিপুর কলোনি, ঘুটিরডাঙি ও কাটিয়া মাঠপাড়াসহ বিস্তীর্ণ এলাকা।

তিনি আরও জানান, গুটিকয়েক লোক পৌরসভার মধ্যে অপরিকল্পিত মাছের ঘের করার কারণে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর এলাকার বাসিন্দা ডা. দিনেশ জানান, ধুলিহর, ফিংড়ি, ব্রহ্মরাজপুর, লাবসা, বল্লী, ঝাউডাঙা ইউনিয়নের বিলগুলোতে সদ্য রোপা আমন ও বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। পানি অপসারণের কোনো পথ না থাকায় বৃষ্টির পানি বাড়িঘরে উঠতে শুরু করেছে।

সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাণসায়ের খালও পানি টানতে পারছে না। প্লাবিত এলাকার কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে।

অতিবৃষ্টির ফলে গদাইবিল, ছাগলার বিল, শ্যাল্যের বিল, বিনেরপোতার বিল, রাজনগরের বিল, মাছখোলার বিলসহ কমপক্ষে ১০টি বিলে পানি থই থই করছে। এসব বিলের মাছের ঘের ভেসে গেছে।

এদিকে, বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে উপকুলীয় উপজেলা শ্যামনগর, কালিগঞ্জ ও আশাশুনিসহ জেলার সাতটি উপজেলার নিম্মাঞ্চল। সেখানে প্রধান রাস্তার ওপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এসব এলাকার মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে রোপা আমন ধানের বীজতলা। অনেক এলাকায় বীজতলার ধানের চারায় পচন ধরেছে। ফলে জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে অনেক কৃষকের। অনেকে আবার নতুন করে বীজতলা তৈরির জন্য বীজ ধান সংগ্রহের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন

আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামের কৃষক রুহুল আমিন জানান, তার এক বিঘা জমির ব্রি-১০ ধানের বীজতলা বৃষ্টির পানিতে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে আবার বীজতলা তৈরির জন্য তিনি বীজ ধান সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। কিন্তু ব্রি-১০ ধানের বীজ কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে তিনি এবার তার ৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, স্বাভাবিক বর্ষণে জেলার নিম্মাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে সদ্য রোপা আমন ও আউশ ধানের বীজ তলিয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের জরিপ করে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে গত দুই দিনে সাতক্ষীরায় ১৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সামনে এমন বৃষ্টিপাতের আরও সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!