সাতক্ষীরায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃক অপরিকল্পিত ভাবে সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের কোমরপুর হাজিখালি খালের মুখে নির্মিত স্লুইস গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশিত না হয়ে এলাকার জলাবদ্ধতার কারন হয়ে দাড়িয়েছে। ফলে পাউবো কর্তৃপক্ষ পরিবেশ ও জনস্বার্থকে উপেক্ষা করে অপরিকল্পিত স্লুইস নির্মাণ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপব্যয় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সাতক্ষীরা একটি অবহেলিত, দুর্যোগপূর্ণ, বন্যা কবলিত লবণাক্ত উপকূলীয় এলাকা। এ উপকূলীয় এলাকাকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন, কৃষি জমি সম্প্রসারণ ও লবণাক্ততার হাত থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড।
পাউবো সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-২ এর আওতায় পোল্ডার রয়েছে ৭ টি। এর মধ্যে পোল্ডার নং ২ ও ২ (সম্প্রসারণ) এর অধীনে রয়েছে সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া ও আশাশুনি উপজেলার কিয়াদংশ। পোল্ডার নং ২ ও ২ (সম্প্রসারণ) এর পূর্বে বেতনা নদী এবং দক্ষিণ-পশ্চিমে মরিচ্চাপ নদী দ্বারা বেষ্টিত। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হচ্ছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন ও লবণাক্ততা রোধ। এ প্রকল্পের আওতায় উপকৃত এলাকার জমির পরিমাণ ১১ হাজার ২৯৬ হেক্টর। এখানে বাঁধ রয়েছে ৬২ দশমিক ৯৫০ কিলোমিটার, স্লুইস গেট রয়েছে ২১ টি ও খাল রয়েছে ৬৫ দশমিক ২২০ কিলোমিটার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এলাকার পানি নিষ্কাষনের জন্য তিন বছর আগে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের কোমরপুর হাজিখালি খালের মুখে একটি স্লুইস গেট নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু বিগত তিন বছরে একফোটা পানিও বিল থেকে নদীতে নিষ্কাশন করতে পারেনি নতুন নির্মিত স্লুইস গেটটি। বরং বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বিলে ঢুকে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত করেছে।
সাতক্ষীরার দিকে দিকে যখন জলাবদ্ধতা পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে লক্ষ মানুষ তখন পানি নিষ্কাশনে কোন সুখবর না দিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড জনবিরোধী একের পর এক অপরিকল্পিত স্লুইস নির্মাণ করে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপব্যয় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড পরিবেশ ও জনস্বার্থকে উপেক্ষা করে নির্মাণ করেই যাচ্ছে স্লুইস গেট যা পানি নিষ্কাশনে কাজে লাগছে না।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের কোমরপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম সরদার বলেন, কলারোয়া থেকে সাতক্ষীরা সদর হয়ে আশাশুনি পর্যন্ত বেতনা নদীর দুই তীরের গ্রামগুলোর নিম্মাঞ্চল পানিতে ডুবে আছে। গত জুলাই মাসের তিনদিনের বৃষ্টিতে গ্রামের পর গ্রাম পানিতে ডুবে গেলেও পানি নিষ্কাশনের কোন উপায় হয়নি। তিন উপজেলার শতাধিক গ্রামের ঘরবাড়ি, কবরস্থান, রাস্তাঘাট ডুবে রয়েছে প্রায় একমাস। রান্না ঘরের চুলা ডুবে থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন হাজারো পরিবার। বাড়িতে যাতায়াত করতে রাস্তার উপর সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। কলারোয়া থেকে আশাশুনি পর্যন্ত বেতনার তীরে তীরে জলাবদ্ধতা। ফসল ও ঘর হারা মানুষের দুর্দশার অন্ত নেই।
একই গ্রামের নূর ইসলাম সরদার বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই ভেসে যায় আমাদের আয়ের উৎস মৎস্য ঘের। কয়েক বছর এভাবে চলতে থাকায় আমরা নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। এবছর সামান্য বৃষ্টিতে সব তলিয়ে যায়। এখনো গ্রামের পর গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত। তিন বছর আগে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে হাজিখালি বিলে স্লুইস গেট নির্মাণ করা হলেও গেটটি পানি নিষ্কাশনে কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না।
তিনি আরো বলেন, যেখানে বিল ছাড়া নদী উঁচু সেখানে স্লুইস গেট নির্মাণের মানে সরকারি টাকা লুটপাট করা ছাড়া আর কিছুই না। অপরিকল্পিত উন্নয়নের নামে চলছে সীমাহীন দুর্নীতি। কী দরকার ছিল দুই টাকা পুতে রাখার? যে স্লুইস গেট এক ফোটা পানি নিষ্কাশনের ক্ষমতা রাখে না, সেই স্লুইস গেট নির্মাণের কোন প্রয়োজন নেই। পানি নিষ্কাশন করতে হলে আগে নদী খনন করতে হবে। বেতনা নদীর আদি ম্যাপ অনুযায়ি সীমানা নির্ধারণ করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে দখলকারীদের হাত থেকে বেতনা নদীকে রক্ষা করতে না পারলে ডুবে মরতে হবে আমাদের।
স্থানীয় জাপা নেতা জাহাঙ্গীর কবির বলেন, বেতনা নদীর হাজিখালি বিলের খালের মুখে এক কোটি সাতাশি লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে যে স্লুইস গেটটি নির্মাণ করা হয়ে তা জনগণের জন্য কোন সুফল বয়ে আনতে পারছে না। আর কোনদিন পারবেও না। যদি নদীর আদি প্রবাহ ফিরিয়ে আনা না যায় তাহলে ওই স্লুইস গেট দিয়ে নদীতে না গিয়ে উল্টে লোকালয়ে ঢুকবে।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুর রহমান বাপী বলেন, আমি নতুন এসেছি। নতুন স্লুইস কোথায়, কয়টি, কত টাকায় নির্মিত হয়েছে তা আমার জানা নেই। বিষয়টি আমি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো।
খুলনা গেজেট/এএ