খুলনা, বাংলাদেশ | ৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৯ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ইউনাইটেড হাসপাতালের চেয়ারম্যানসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
  ৪০তম ব্যাচের ক্যাডেট এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত
ভারতে পালিয়ে থাকা সাজু ও শাওনকে ফিরিয়ে আনার দাবি

সাতক্ষীরার কলেজছাত্র গৌতম হত্যা মামলায় ৪ আসামির ফাঁসি ঝুলে আছে আপিলে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরার চাঞ্চল্যকর মেধাবী কলেজ ছাত্র গৌতম সরকার হত্যার ঘটনা বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) আট বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার চার আসামির ফাঁসির কার্যকারিতা ঝুলে আছে উচ্চ আদালতে আপিলে। চাঞ্চল্যকর এ মামলার চার আসামির বিরুদ্ধে আদালত ফাঁসির আদেশ দেয়। এদের মধ্যে দুই আসামির পলাতক রয়েছে। নিহতের ১০৮ বছরের বৃদ্ধা ঠাকুরমা কামিনী দাসী সরকার জীবদ্দশায় এই হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর দেখার জন্য প্রহর গুনছেন।

এদিকে ফাঁসির দন্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মহাদেবনগর গ্রামের সাজু শেখ ও শাওন ভারতে পালিয়ে গেলেও তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে বাড়ির পাশের রুহুল আমিনের দোকানে টিলিভিশনে খেলা দেখার সময় ঘোনা ইউপি সদস্য গনেশ সরকারের ছেলে মাহমুদপুর সীমান্ত ড্রিগী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র গৌতম সরকারকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে সন্ত্রাসীরা। মুক্তিপনের টাকা না পেয়ে গালের মধ্যে গুলের কৌটা ঢুকিয়ে মুখে ক্রস টেপ মেরে হাত ও পা বেঁধে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় গৌতমকে। পরে পার্শ্ববর্তী মোখলেছুর রহমানের নির্মাণাধীন বাড়ির পুকুরের পানির মধ্যে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে দেহে ১২টি ইট ঝুলিয়ে লাশ গুম করার চেষ্টা করা হয়।

খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ১৫ ডিসেম্বর দেবহাটা উপজেলার বহেরা খাস খামার এলাকা থেকে একটি রাম দা সহ আলী আহম্মেদ শাওন ও শাহাদাত হোসেনকে আটক করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ি ১৬ ডিসেম্বর গনেশ সরকার বাদি হয়ে ভাড়ুখালির শাহাদাৎ হোসেন, দেবহাটার বহেরা গ্রামের আলী আহম্মেদ শাওন, সদরের মহাদেবনগরের সাজু শেখ, নাজমুল হাসান, কবিরুল ইসলাম মিঠু ও মহসিন আলীর নাম উল্লেখ করে থানায় একটি অপহরণ ও হত্যা মামলা দায়ের করেন।

গ্রেপ্তারকৃত শাওনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ি নাজমুল হাসান, সাজু শেখ ও মহসিনকে জনতার সহায়তায় আটক করা হয়। ১৭ ডিসেম্বর পুলিশ গৌতমের লাশ উদ্ধার করে। ওই দিন গনেশ সরকার বাদি হয়ে নুর আহম্মেদ মুক্ত, ওমর ফারুক ও জামসেদের নাম উল্লেখ করে থানায় সম্পুরক এজাহার দাখিল করেন।

গ্রেপ্তারকৃত শাহাদাৎ ও নাজমুল হোসেন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক এসএম আশরাফুল আলম ২২ এপ্রিল শাহাদাৎ, নাজমুল, নূর আহম্মদ মুক্ত, ওমর ফারুক, সাজু হোসেন, ফজিলা খাতুন,মহসিন আলী, কবিরুল ইসলাম মিঠু, আলী আহম্মেদ শাওন ও জামসেদ আলীর নামে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। পরে একে একে মামলার সকল আসামী জেল হাজতে যায়। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আবেদন করে জামিন নিয়ে আলী আহম্মেদ শাওন পালিয়ে যায়। জামিন মুক্তি পেয়ে স্বপরিবারে পালিয়ে যায় সাজু শেখ।

মামলার বিচারকার্য শেষে ২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার শাহাদাৎ হোসেন, সাজু শেখ, নাজমুল হোসেন ও আলী আহম্মেদ শাওনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করার নির্দেশ দেন। শাওন ও সাজু পলাতক থাকলেও জেল হাজতে থাকা শাহাদাৎ ও নাজমুল মহামান্য হাইকোর্টে দন্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন।

গণেশ সরকার জানান, উচ্চ আদালতে বিচারের যে জট তাতে তিনি জীবদ্দশায় ছেলে হত্যা মামলার আসামিদের শাস্তি দেখে যেতে পারবেন বলে মনে করেন না। তবে সপরিবারে ভারতে পালিয়ে থাকা সাজু শেখ ও আলী আহম্মেদ শাওনকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার যদি ব্যবস্থা না নেয় তাহলে তারা কোনদিনও বিচারের আওতায় আসবে না।

এদিকে কলেজ ছাত্র গৌতমের অষ্টম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে বুধবার সন্ধ্যায় নিজ বাড়িতে ছোট আকারে স্মরনসভা শেষে ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

খুলনা গেজেট/ এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!