খুলনা, বাংলাদেশ | ২৯ মাঘ, ১৪৩১ | ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  অপারেশন ডেভিল হান্টে ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে গ্রেপ্তার আরও ৬০৭
  কর্মকর্তা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযুক্তদের অনুসন্ধান-তদন্ত বিঘ্নিত হবে না: দুদক

সাগর-রুনি হত্যার ১৩তম বার্ষিকী আজ, যে কারণে তদন্ত শেষ হয়নি

গেজেট ডেস্ক

সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তরের আগের ছয় বছর কার্যত কোনো তদন্ত হয়নি। এ সময় তদন্তকারী সংস্থা র‍্যাব আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া নিয়ে কেবল সময়ই চেয়েছে। এর আগের ছয় বছর, অর্থাৎ ২০১২–১৮ পর্যন্ত র‍্যাবের তদন্তের ফল ছিল ‘শূন্য’।

এ মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিগত সময়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে এমন অভিমত দিয়েছেন। তদন্ত সংস্থা পিবিআই এখন এ হত্যার ঘটনায় ডিএনএ প্রতিবেদনে পাওয়া সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে খুঁজছে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া ফ্ল্যাট থেকে মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সরওয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আজ সেই জোড়া খুনের ১৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে।

র‍্যাব যা করছিল

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিলে এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় র‍্যাব। পরে বিভিন্ন সময়ে রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমান, বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী পলাশ রুদ্র পাল ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবিরকে গ্রেপ্তার করে। রুনির সঙ্গে মুঠোফোনে তানভীরের কথা বলার সূত্র ধরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বনানী থানার একটি হত্যা ও ডাকাতি মামলায় গ্রেপ্তার মিন্টু, বকুল মিয়া, কামরুল হাসান ওরফে অরুণ, রফিকুল ইসলাম ও আবু সাঈদকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাঁদের মধ্যে তানভীর, নিরাপত্তা কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির, নিরাপত্তাকর্মী রুদ্র পাল ও মিন্টু জামিনে মুক্ত আছেন।

হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি, বঁটি, ছুরির বাঁট, সাগরের হাত বাঁধা ওড়না ও রুনির পরনের কাপড় ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছিল র‍্যাব। পাশাপাশি সাগর-রুনির ভাড়া বাসার ভাঙা গ্রিলের অংশ, ঘটনাস্থলে পাওয়া চুল, ভাঙা গ্রিলের পাশে পাওয়া মোজা, দরজার লক, দরজার চেইন ও ছিটকিনির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সেখানে পাঠানো হয়। হত্যায় সন্দেহভাজন কয়েক ব্যক্তির ডিএনএ নমুনাও যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল। পরে এসব পরীক্ষার প্রতিবেদন র‍্যাবের কাছে আসে। হত্যার ঘটনায় বিভিন্ন পর্যায়ের মোট ১৬০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‍্যাব; কিন্তু খুনি শনাক্তের জন্য কার্যকর (ক্লু) সূত্র পায়নি।

হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি, বঁটি, ছুরির বাঁট, সাগরের হাত বাঁধা ওড়না ও রুনির পরনের কাপড় ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগারে পাঠিয়েছিল র‍্যাব। পাশাপাশি সাগর-রুনির ভাড়া বাসার ভাঙা গ্রিলের অংশ, ঘটনাস্থলে পাওয়া চুল, ভাঙা গ্রিলের পাশে পাওয়া মোজা, দরজার লক, দরজার চেইন ও ছিটকিনির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য সেখানে পাঠানো হয়।

মামলার নথিপত্র বিশ্লেষণ করে তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বশেষ গত বছরের ১৫ অক্টোবর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমার দিন ধার্য ছিল; কিন্তু প্রতিবেদন জমা দেয়নি র‌্যাব। র‍্যাবের তদন্তকালে প্রতিবেদন জমার তারিখ পেছায় ১১২ বার।

সাগর-রুনি হত্যা মামলায় র‍্যাবের সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন ভূঞা। তিনি বলেন, তাঁর আগে র‍্যাবের আরও সাত কর্মকর্তা এ মামলা তদন্ত করেছেন।

ছয় বছর মামলাটির তদন্ত না হওয়ার প্রসঙ্গে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মেজর লুৎফুল হাদী বলেন, উল্লেখিত সময়ে (২০১৮–২৪) র‍্যাবের তদন্ত চলমান ছিল। এর আগের ছয় বছরে খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটন করা না গেলেও র‍্যাব কাজ করেছে।

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে। পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছিলেন, ‘তদন্তে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি এ বিষয়ে ইতিবাচক তথ্য দিতে পারব বলে আশা করছি।’

দুই বছর পর ২০১৪ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মহীউদ্দীন খান আলমগীর। ওই সময় তিনি হত্যার রহস্য উন্মোচনের সুনির্দিষ্ট তারিখও ঘোষণা করেছিলেন।

খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটন হওয়ার মতো এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে টাস্কফোর্স আদালতের নির্দেশমতো কাজ করছে।

ডিএনএ মেলাতে সন্দেহভাজনদের খুঁজছে পিবিআই

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি সাগর ও রুনির হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিল তাঁদের একমাত্র সন্তান সাড়ে চার বছর বয়সী মিহির সরওয়ার মেঘ। এখন সে এ লেভেল পাস করেছে। হত্যার ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেন। প্রথমে এ মামলা তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানা–পুলিশ। চার দিন পর মামলার তদন্তভার ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালত র‍্যাবকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে গত ৪ নভেম্বর র‍্যাবের কাছ থেকে মামলার নথিপত্র বুঝে নেয় পিবিআই। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল হক।

এর আগে গত বছরের ২৩ অক্টোবর এ মামলার তদন্তে চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। টাস্কফোর্সকে মামলার তদন্ত ছয় মাসের মধ্যে শেষ করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

টাস্কফোর্সের প্রধান ও পিবিআইয়ের প্রধান মো. মোস্তফা কামাল বলেন, খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটন হওয়ার মতো এখন পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে টাস্কফোর্স আদালতের নির্দেশমতো কাজ করছে।

সূত্র জানায়, তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর পিবিআই নথিপত্র নিয়ে বিশ্লেষণ ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তারা তদন্ত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগার থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রুনিকে পেছন থেকে ডান হাত দিয়ে পেটের ডান পাশে কোপ দেওয়া হয়েছে। তাঁর পরনের টি–শার্টে ওই ব্যক্তির ডিএনএ পাওয়া গেছে। সবুজ রঙের ওড়না দিয়ে সাগরের হাত–পা বাঁধা ছিল। সেখানে আরেকজনের ডিএনএ পাওয়া গেছে। পিবিআই এখন অজ্ঞাতপরিচয় ওই দুই ব্যক্তির ডিএনএ মেলাতে সন্দেহভাজনদের খুঁজছে।

পিবিআই জানায়, সাগর-রুনির সঙ্গে কারও ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সম্পত্তিগত, পেশাগত শত্রুতার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাঁদের সঙ্গে কারও বিরোধ ছিল না। তাঁরা কর্মজীবনে কখনো হুমকি পাননি। গ্রেপ্তার তানভীর সাংবাদিক রুনির পূর্বপরিচিত হলেও তিনি খুনের সঙ্গে জড়িত নন।

মামলার বাদী ও রুনির ভাই নওশের আলম বলেন, ‘পিবিআই আমার সঙ্গে কয়েকবার কথা বলেছে। সবকিছু মিলিয়ে মনে হচ্ছে, সরকার ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে পারবে। তবে তদন্তের ফল না পাওয়া পর্যন্ত আশাবাদী হতে পারছি না।’

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!