পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কায় দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানান, শনিবার রাত ১১টার দিকে লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। এটি আরও ঘনীভূত হয়ে রোববার নিম্নচাপে এবং পরে গভীর নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিতে পারে।
দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার মধ্যে আন্দামান সাগরে শনিবার বেলা ২টার পর ওই লঘুচাপটি সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নিলে এর নাম হবে ‘ইয়াস’ (yaas)। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপে ঘূর্ণিঝড়ের নামের তালিকায় এ নামটি দিয়েছে ওমান।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ হয়ে পরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে এবং ঘূর্ণিঝড়টি ২৬মে নাগাদ ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে পৌঁছাতে পারে।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ মোকাবেলায় এবারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে তিনগুণ আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকার।
উপকূলীয় সম্ভাব্য দুর্গত এলাকায় শতভাগ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার চেষ্টাও থাকবে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান জানিয়েছেন।
মহামারীর মধ্যে গত বছর মে মাসে বাংলাদেশে যে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছিল, তার নাম ছিল ‘আম্পান’। অতীতের অভিজ্ঞতার কাজে লাগিয়ে ঝড়ের কারণে নতুন করে সংক্রমণ যাতে সৃষ্টি না হয় সে বিষয়েও বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, প্রায় ১৫ হাজার আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সবার জন্য মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখা হবে। কোভিড রোগী থাকলে তাকে আইসোলেশনে রাখতে হবে। আক্রান্ত কেউ যেন সুস্থ মানুষের মাঝে না আসতে পারে, সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা রাখা হবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, “লঘুচাপটি এখনও হাজার কিলোমিটার দূরে রয়েছে। তাই এক নম্বর দূরবর্তী সংকেত দেওয়া হয়েছে। নিম্নচাপ হওয়ার পর ধীরে ধীরে উপকূলের দিকে এলে সংকেত বাড়ানো হবে।”
সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকাকে গভীর সাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। যারা এখন গভীর সাগরে রয়েছে, তাদের সোমবারের মধ্যে উপকূলের কাছাকাছি চলে আসতে বলা হয়েছে।
তাপপ্রবাহে অস্বস্তিকর গরম
ঘূর্ণিঝড়ের আগে দেশের বিস্তীর্ণ এলাকায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে। শনিবার ফেনীতে দেশের সর্বোচ্চ ৩৮.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল।
আবহাওয়া অফিস বলছে, রাঙ্গামাটি, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও পাবনা জেলাসহ ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে।
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় এবং কুষ্টিয়া অঞ্চলে অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
খুলনা গেজেট/এনএম