চট্টগ্রাম নগরে সমুদ্রঘেঁষা এলাকা দক্ষিণ কাট্টলী। এই এলাকার অন্যতম ব্যস্ত রানী রাসমনী মাছের ঘাটে প্রতিদিন নিলামে বিক্রির জন্য মাছ তোলেন জেলেরা। ইলিশ, লইট্টা, পোপাসহ নানা জাতের সামৃদ্রিক মাছ কিনতে এখানে আসেন ক্রেতারা। গত এক সপ্তাহে এ ঘাটে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। সামুদ্রিক মাছের তুলনায় এ ঘাটে রুই, কাতলা ও মৃগেল বেশি দেখা গেছে। সমুদ্রে জাল ফেললেই রুই, কাতলাসহ মিঠাপানির সব মাছ উঠে আসছে বলে জানান জেলেরা।
জেলেরা বলছেন, সম্প্রতি চট্টগ্রামের আশপাশের এলাকা বন্যাকবলিত হওয়ার পর এমন ঘটনা ঘটছে। ফেনী ও নোয়াখালী এলাকায় বাঁধ ভেঙে সাগরে ভেসে গেছে শত শত পুকুর ও খামারের মাছ। জাল ফেলার পর এখন সেসব মাছই ধরা পড়ছে। সাগরে ধরা পড়ার কারণে সব মাছই মৃত হিসেবে ধরেছেন জেলেরা। ঘাটে এসে সস্তায় তাঁরা সেসব মাছ বিক্রি করে দিচ্ছেন।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাসমনী ঘাট ঘুরে দেখা গেছে, মাছের আড়তগুলোতে রুই মাছের নিলাম হচ্ছে। এক মণ মাছ বিক্রি হয়েছে পাঁচ হাজার এক শ টাকায়। কেজি দরে এসব মাছ বিক্রি হয়েছে ২৪০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত। জেলেদের ভাষ্য, গত এক সপ্তাহ ধরে সাগরে পুকুর ও চাষের মাছ বেশি ধরা পড়ছে।
স্থানীয় জেলে সাধন জলদাস বলেন, বন্যার শুরু থেকেই সাগরে হঠাৎ পুকুরের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। গত কয়েক দিনে এ মাছের পরিমাণ কমেছে। শুরুর কয়েক দিন বিপুল পরিমাণে মাছ ধরা পড়েছে। মাঝে কিছু মৃত মাছ ভেসেও উঠেছিল।
জেলা মৎস্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলায় ছোট-বড় পুকুর-দিঘির সংখ্যা ৮৭ হাজারের বেশি। চিংড়ির ঘের রয়েছে ১ হাজার ১৫০টি। সম্প্রতি বন্যায় জেলার প্রায় ১৭ হাজার জলাশয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার টন মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়া প্রায় ১৪ লাখ পোনা ও দুই লাখ চিংড়ির লার্ভা ভেসে গেছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ প্রথম আলোকে বলেন, জলাশয় প্লাবিত হওয়ায় এসব মাছ সাগরে চলে গেছে। চট্টগ্রামে মৎস্য খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৯০ কোটি টাকা। সবচেয়ে বেশি; ১৪২ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে মীরসরাই উপজেলায়।