সাতক্ষীরায় সাংবাদিক পরিচয়ে শ্যামনগর উপজেলাধীন সুন্দরবনসহ উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সুন্দরবনে কর্মরত মৎস্যজীবী থেকে শুরু করে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ নানা শ্রেনী পেশার মানুষের ভয়ভীতি দেখিয়ে এসব চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। তবে চিহ্নিত এসব চাঁদাবাজের সিংহভাগ নিজেদের সংবাদকর্মী পরিচয় দেয়ায় হয়রানির ভয়ে ঘটনার ‘শিকার’ ব্যক্তিরা ‘টু’ শব্দ পর্যন্ত করার সাহস পাচ্ছে না। মৎস্যজীবী ও সুন্দরবন উপকূলবর্তী এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে শ্যামনগর উপজেলার টেংরাখালী গ্রামের মরহুম আবুল কালামের ছেলে আব্দুর রউফ ও সুন্নত গাজীর ছেলে শাহিন হোসেনের কাছ থেকে ভেটখালী এলাকার এক যুবক নিয়মিতভাবে চাঁদা আদায় করছে। সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া শিকার করে জীবিকা নির্বাহকারী এ দুই মৎস্যজীবী বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে বনে প্রবেশ সত্ত্বেও ভুল তথ্য দিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর রোশানলে ফেলার হুমকি দিয়ে তাদেরকে চাঁদা দিতে বাধ্য করে।
এছাড়া একই এলাকার মৃত আনছার ঢালীর ছেলে আমিনুর ঢালীসহ আরও কয়েক মৎস্যজীবীর অভিযোগ, উপকুলবর্তী রমজাননগর এলাকায় সাংবাদিক পরিচয়দানকারী ওই যুবক ‘সুন্দরবনে প্রবেশ করতে হলে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে চলতে হবে’ এমন হুশিয়ারি দিয়ে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছে। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে দস্যুদের সাথে জড়িয়ে তাদেরকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের হুমকি দেয় বলেও অভিযোগ তোলেন তারা।
অপর এক জেলে নিশ্চিত করে বলেন, যে দুই-তিন সপ্তাহপূর্বে তারা সুন্দরবনে মাছ শিকারের সময় সাংবাদিক পরিচয়ে রায়মঙ্গল এলাকা থেকে শ্যামনগরের এক ব্যক্তি তাদের নৌকা থেকে মাছ উঠিয়ে নেয়। এসময় নৌ-পুলিশ পরিচয় দানকারী কয়েকজনের পাশাপাশি ভেটখালীর দুই যুবক ছিল বলেও ওই মৎস্যজীবী নিশ্চিত করেন। প্রায় বারো কেজি ওজনের মাছ দিতে অস্বীকার করার শুরুতে তাদেরকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয় বলেও অভিযোগ তার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই মৎস্যজীবী আরও বলেন, মাছ উঠিয়ে নেয়ার সাথে জড়িত সকলকে তিনি চিনতে পারলেও তাকে হয়রানির শিকার হতে হবে বিধায় তিনি তদন্ত কর্মকর্তা ছাড়া কারও কাছে সেসব চাঁদাবাজের নাম জানাবে না। কয়েক মৎস্যজীবীর অভিযোগ এসব চাঁদাবাজরা অনেক ক্ষেত্রে বনবিভাগের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মচারীসহ নৌ-পুলিশের ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে চাঁদা দিতে বাধ্য করে।
চিহ্নিত চাঁদাবাজদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়া এসব মৎস্যজীবীরা অভিযুক্তদের নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে বলেন, যদি বিষয়গুলি নিয়ে তদন্ত হয় তবেই কেবল তারা অভিযুক্তদের বিষয়ে মুখ খুলতে পারবে। অন্যথায় মুখ খুললে তাদের জন্য সুন্দরবনে প্রবেশ চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রমজাননগর ইউপি’র একজন সদস্য বলেন, স্থানীয় কিছু টাউট প্রকৃতির যুবক সাংবাদিক পরিচয়পত্রকে পুঁজি করে গোটা এলাকার জন্য মুর্তিমান আতংকে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় নৌ-পুলিশ ফাড়ীর নামেও তারা নিয়মিত চাঁদা আদায় করে বলেও তিনি দাবি করেন।
তিনি আরও বলেন, তার এলাকার অধিকাংশ মানুষ সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় দানকারী কিছু চাঁদাবাজের কারণে অসহায় মৎস্যজীবীরা উপার্জনের মোটা অংশ চাঁদা দিতে বাধ্য হওয়ায় তাদের কষ্টে জীবন যাপন করতে হেচ্ছ। অনেক ক্ষেত্রে বনদস্যুদের জড়িয়ে সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দিতে বাধ্য করা হয় বলেও তিনি জানান। দুর্যোগ কবলিত উপকূলীয় এসব জনপদের অসহায় মৎস্যজীবীদের এসব চিহ্নিত চাঁদাবাজদের হাত থেকে রক্ষায় গোপনে তদেন্তর দাবি জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় নেয়ারও দাবি করেন তিনি।
খুলনা গেজেট/এনএম