খুলনা, বাংলাদেশ | ৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বাস-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে দুইজন নিহত
  মিরপুরে গ্যাস সিলিন্ডার লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারী-শিশুসহ দগ্ধ ৭
  সাবেক প্রধান বিচারপতির মৃত্যুতে আজ সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ বন্ধ

এক দফায় সরকারি দল ও বিরোধীরা ‍

গেজেট ডেস্ক

‘সরকারের পদত্যাগের এক দফা’ দাবিতে সমমনা দল ও জোটকে সাথে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা ও মহানগরে পদযাত্রা কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির এ ঘোষণার পরপরই পাল্টা ঘোষণা দিয়ে আওয়ামী লীগ বলেছে শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং শেখ হাসিনাই তাতে নেতৃত্ব দিবেন।

বুধবার নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ থেকে ‘সরকারের পদত্যাগের এক দফা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে দলের মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে তাদের এখন একটাই কাজ তাহলো বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া।

“যুগপৎ ধারায় বৃহত্তম গণআন্দোলনের এক দফা-ভোটাধিকার হরণকারী কর্তৃত্ববাদী, অবৈধ সরকারের পদত্যাগ। আর কোন দফা নেই। ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠার জন্য যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দিচ্ছি,” সমাবেশে এ বক্তব্য দিয়ে মি. আলমগীর আগামী ১৮ ও ১৯ জুলাই ঢাকাসহ সারাদেশে পদযাত্রার কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

বিএনপির সমমনা দলগুলোও আলাদাভাবে একই ঘোষণা ও কর্মসূচি প্রকাশ করেছে।

এদিকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘এক দফা’ ঘোষণার সময় বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে বক্তব্য রাখছিলেন দলটির সাধারণ ওবায়দুল কাদের।

বিএনপির এক দফার কথা উল্লেখ করে এর পাল্টা ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদেরও এক দফা- শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই নির্বাচন হবে এবং শেখ হাসিনাই নেতৃত্ব দিবেন”।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি জানে নির্বাচনে তারা হেরে যাবে। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তায় তারা ভেসে যাবে।

“আমাদের এক দফা সংবিধান সম্মত নির্বাচন। এ লক্ষ্যকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

আমরা কোনো বাধা দিবো না। কাউকে আক্রমণ করতে যাবো না। বিদেশী বন্ধুদের বলতে চাই – আপনারা চান সুষ্ঠু, অবাধ, ফেয়ার ইলেকশন। আমাদের লক্ষ্যও ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন। কিন্তু এতে যারা বাধা দিবে আমরা তাদের প্রতিহত করবো”।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “যাদের হাতে রক্তর দাগ তাদের সাথে আপোষ নয়, কোনো ডায়ালগ নয়”।

মানুষের ‘ভোটাধিকার’ আদায়ের দাবীতে বিএনপি নয়াপল্টনে তাদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করেছিলো।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে ‘ সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে’ সমাবেশ করেছে, যাকে ‘শান্তি সমাবেশ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন দলটির নেতারা।

তবে দল দুটি এমন এক সময়ে পাল্টাপাল্টি কাছাকাছি দুটি ভেন্যুতে সমাবেশ করছে যখন ঢাকা সফরে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয় সদস্যের নির্বাচনী অনুসন্ধানী মিশন।

এর আগে গত দশই ডিসেম্বর ঢাকায় নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চেয়েও পারেনি বিএনপি এবং তখন এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে দলটির কর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছিলো।

ওই ঘটনার জের ধরে তখন দলটির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেও আটক করেছিলো কর্তৃপক্ষ।

তবে এবার পুলিশ কিছু শর্ত দিলেও নয়াপল্টনেই দলটিকে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। একই সাথে ঢাকার বারটি জায়গা থেকে বিএনপির সমমনা দল ও জোটগুলো যুগপৎভাবে কর্মসূচি দিয়েছে।

যদিও উভয় কর্মসূচির কারণে তীব্র ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। অনেক জায়গায় দেখা গেছে তীব্র যানজট। আবার গণপরিবহন কম থাকায় পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে যেতে হয়েছে অসংখ্য মানুষকে।

বিএনপিকে বুধবারের এ সমাবেশকে সামনে রেখে ঢাকা ও আশেপাশের এলাকায় মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে।

মূলত সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর থেকেই বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে পুলিশ বা প্রশাসনের দিক থেকে বাধা কম দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এই নীতির আওতায় যে কোন বাংলাদেশি ব্যক্তি যদি সেদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য দায়ী হন বা এরকম চেষ্টা করেছেন বলে প্রতীয়মান হয় – তাহলে যুক্তরাষ্ট্র তাকে ভিসা দেয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যান্টনি ব্লিংকেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতি অনুযায়ী নতুন এ নীতির আওতায় পড়বেন বর্তমান এবং সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা, সরকার-সমর্থক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যবৃন্দ, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা, বিচারবিভাগ ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সদস্যরা।

আরও পড়ুন :   

এ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় ঘটে যায় এবং এরপর থেকেই বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোকে ঘিরে নমনীয় আচরণ করতে দেখা যায় প্রশাসনকে।

যদিও আজ সকাল থেকে ঢাকার প্রবেশমুখ গুলোতে যানবাহনে পুলিশী তল্লাশির অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা।

যাত্রীবাহী বাস চলাচলও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম থাকায় অসংখ্য মানুষকে পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। দুপুর বারটা নাগাদ ফাঁকা হয়ে যায় শাপলা চত্বর সহ মতিঝিল এলাকা।

দশটার পর থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির মিছিলগুলো নয়াপল্টনে আসতে শুরু করেছে। দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতিকৃতি ছাড়াও তাদের অনেকে সরকার বিরোধী শ্লোগান সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড বহন করছেন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সমাবেশে আসা কর্মী সমর্থকদের অনেকেই বহন করছেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি।

প্রসঙ্গত, বিএনপি ও সমমনা দলগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও পার্লামেন্ট বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।

দলটির নেতারা বলছেন যে বুধবারের সমাবেশ থেকেই সরকার বিরোধী ‘এক দফার আন্দোলন’ এর কর্মসূচির ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছেন।

দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে তারা আশা করছেন ঢাকা ও আশেপাশের এলাকা থেকে কয়েক লাখ সমর্থক এ সমাবেশে যোগ দেবেন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন যে তাদের সমাবেশেও কয়েক লাখ সমর্থক যোগ দিবে।

সব মিলিয়ে সমাবেশ দুটিতে উভয় দলের শক্তি ও সামর্থ্যের প্রদর্শনীর চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।

এর আগে গত ডিসেম্বরে ঢাকার গোলাপবাগের সমাবেশ থেকে দশ দফার ঘোষণা দিয়েছিলো বিএনপি। এসব দাবির মধ্যে ছিলো বর্তমান সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করে ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, ১৯৯৬ সালের সংবিধান সংশোধনের আলোকে নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন এবং খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের সাজা বাতিল।

এর পর গত ২৩ মার্চ বিএনপিকে নির্বাচন কমিশন সংলাপের আমন্ত্রণ জানালেও সেটি প্রত্যাখ্যান করে দলটি বলেছিলো যে তারা মনে করে ‘নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কোনো আলোচনা অথবা সংলাপ ফলপ্রসূ হবে না এবং তা হবে অর্থহীন’।

এ দাবিতে অনড় থেকে দলটি সাম্প্রতিক সংসদীয় উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অংশ নেয়া থেকেও বিরত থেকেছে।

এর আগে দলটি ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও অংশ নিয়েছিলো ২০১৮ সালের নির্বাচনে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতেই একটি দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যান দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।

বর্তমানে তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে কারাগারের বদলে গুলশানে নিজের বাসায় রয়েছেন। আর লন্ডনে থেকেই দলটির সাংগঠনিক কার্যক্রমে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিবিসি বাংলা।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!