করোনা মহামারির কারণে গত বছর বাংলাদেশ পুলিশের বড় সম্মেলন পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে এবার করোনা চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে কঠোর বিধি-নিষেধ অনুসরণের মধ্যে দিয়ে শুরু হলো পুলিশ সপ্তাহ-২০২২।
রোববার সকাল ১০ টায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহ-২০২২ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি প্যারেডে ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে পুলিশের বিভিন্ন কন্টিনজেন্ট এবং পতাকাবাহী দলের সুশৃঙ্খল, দৃষ্টিনন্দন প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করছেন।
পাঁচ দিনব্যাপী (২৩-২৭ জানুয়ারি) পুলিশ সপ্তাহের প্রতিটি অনুষ্ঠান যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনপূর্বক অনুষ্ঠিত হবে বলে আগেই জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সপ্তাহকে ঘিরে রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপসমূহ বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়েছে।
বার্ষিক পুলিশ প্যারেডে অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পুলিশ সুপার মো. ছালেহ উদ্দিন। তার নেতৃত্বে বিভিন্ন কন্টিনজেন্টের পুলিশ সদস্যরা প্যারেডে অংশ নিয়েছেন।
এবারের পুলিশ সপ্তাহের মূল প্রতিপাদ্য, ‘দক্ষ পুলিশ, সমৃদ্ধ দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ২০২০ সালে ১১৫ এবং ২০২১ সালে ১১৫ জনসহ মোট ২৩০ পুলিশ সদস্য একসঙ্গে পদক পাচ্ছেন এবছর। করোনার কারণে ২০২১ সালে পুলিশ সপ্তাহ অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এ বছর ২০২০ ও ২০২১ সালের পদক একসঙ্গে দেওয়া হচ্ছে।
পদকের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা, রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম), রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। পুলিশ সপ্তাহকে কেন্দ্র করে জাতীয় দৈনিক পত্রিকাগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হয়েছে।
পুলিশ সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে থাকছে, ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতির ভাষণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সম্মেলন, ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের সম্মেলন, ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে প্রধান বিচারপতির সম্মেলন, ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সম্মেলন, ঊর্ধ্বতন পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে আইজিপির সম্মেলন, শিল্ড প্যারেড, অস্ত্র ও মাদক উদ্ধার প্রভৃতি পুরস্কার বিতরণ, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে কর্মরত পুলিশ অফিসারদের পুনর্মিলনী ইত্যাদি।
পুলিশ সপ্তাহের বিভিন্ন অধিবেশনের মধ্য দিয়ে বিগত এক বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে পরবর্তী বছরের কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে।
পুলিশ সদর দফতরের একাধিক কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এবার পুলিশ সপ্তাহ ভিন্ন আঙ্গিকে করার প্রস্তুতি নেয় পুলিশ সদর দফতর।
করোনার সংক্রমণরোধে সরকারি বিধি-নিষেধ পরিপালনে পুলিশ সপ্তাহের মূল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক পুলিশ সদস্য, অতিথি ও গণমাধ্যম কর্মীদের বাধ্যতামূলক করোনার টেস্ট করতে হয়েছে। করোনার নেগেটিভ রিপোর্ট ছাড়া কেউ অংশ নিতে পারবেন না বলে আগেই জানানো হয়েছিল। কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে করোনা টেস্টের ব্যবস্থাও করেছে পুলিশ।
রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুলিশের ৯টি ইউনিট প্যারেডে অংশ নিচ্ছে। প্যারেডে অংশ নিতে ঢাকার বাইরে থেকে পুলিশের কোনো সদস্যকে আনা হয়নি করোনা মহামারির সতর্কতার কারণে। রেঞ্জ ডিআইজি (উপ-মহাপরিদর্শক), ৬৪ জেলার পুলিশ সুপার, মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শুধু উপস্থিত থাকার অনুমতি পেয়েছেন।
শুধু তাই নয়, প্রতিবছর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের দরবার অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সরাসরি নিজেদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন পুলিশ কর্মকর্তারা। সবশেষ ২০১৯ সালে দরবার হয়েছিল। তবে এবার করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে তা বাতিল করা হয়েছে। পুলিশের দাবি-দাওয়া প্রধানমন্ত্রীকে লিখিতভাবে জানানো হবে। পুলিশের পক্ষ থেকে নানা দাবির সঙ্গে প্রধান দাবি হিসেবে থাকছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে থেকেই পুলিশের জন্য আরেকটি অধিদফতর।
খুলনা গেজেট/এনএম