দেশের সমুদ্র ও উপকূলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সততা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালনে কোস্টগার্ডের প্রতিটি সদস্যকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলেছেন, ‘বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের যা প্রয়োজন, সরকার তা-ই করবে।’
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মঙ্গলবার বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সদর দপ্তরে বাহিনীর ২৭তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।
এ সময় সততা, দেশপ্রেম ও ঈমানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে কোস্টগার্ড সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘দেশের সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন বলে আমি আশা করি। এ বাহিনীর ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং আপনাদের সার্বিক কল্যাণে প্রয়োজনীয় যা যা করা দরকার, অবশ্যই আমাদের সরকার তা করে যাবে।’
বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখে বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জনের বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের যে সম্পদ আছে সেই সম্পদ আর্থ সামাজিক কাজে লাগুক, সেটাই আমাদের বেশি প্রয়োজন, গুরুত্বপূর্ণ। নদীমাতৃক বাংলাদেশ, সেই দেশকেও নিরাপদ করার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একান্তভাবে দরকার। সেজন্য কোস্টগার্ড এই দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের এ অঞ্চলটা, বিশেষ করে বে অব বেঙ্গল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেখান থেকে আমাদের অবশ্যই চিন্তা করতে হবে যে, আমাদের এই অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষা করা প্রয়োজন এবং সেদিকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়াও দরকার।’
দক্ষিণাঞ্চলে আরও একটি শিপইয়ার্ড করার পরিকল্পনার কথা জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে আরেকটি আকাঙ্ক্ষা আছে যে, আমরা আরেকটি শিপইয়ার্ড করতে পারব দক্ষিণাঞ্চলে। সেটা হয়তো ভবিষ্যতে আমরা দেখব। জায়গা আমরা দেখে রেখেছি।’
কোস্টগার্ডের আধুনিকায়নের বাহিনীর বহরে উন্নত প্রযুক্তির জাহাজ হোভারক্রাফট, দ্রুত গতির বোট যুক্ত হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘হোভারক্রাফট আমাদের নাই। আমি মনে করি হোভারক্রাফটে খুব দ্রুত যেকোনো অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব। এ ছাড়া গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের যোগাযোগে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর সঙ্গে ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ সমুদ্রে বসেও যেন যেকোনো তথ্য আদান-প্রদান করা যায়, এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তা করা যাবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভবিষ্যতে নতুন দায়িত্ব পালনে আরও সক্ষমতা বাড়াতে কোস্টগার্ডকে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি। বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের নিজস্ব জনবল নিয়োগ কার্যক্রম ও ফোর্স পুনর্গঠনের মাধ্যমে বাহিনীর সক্ষমতা অর্জনে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’
কোস্টগার্ডের উন্নয়নের গত ১৩ বছরে বিভিন্ন আকারের ৭৭টি জাহাজ ও জলযান নির্মাণ ও সংযোজন করা হয়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান।
তিনি বলেণ, ‘বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড ও খুলনা শিপইয়ার্ড- সেখানে কোস্টগার্ডের জন্য দুটি এনশিওর পেট্রল ভেসেল, দুটি ফ্লোটিং ক্রেন, দুটি টাক বোট, ১৬টি বোট তৈরি করা হয়েছে। কোস্টগার্ডের ভেসেল ও জাহাজ নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে গজারিয়ায় একটি ডকইয়ার্ডও নির্মাণ করা হচ্ছে। নিজস্ব ডকইয়ার্ডে জাহাজ তৈরির সক্ষমতা আমাদের আত্মবিশ্বাসকে আরও সুদৃঢ় করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা, মাদক চোরাচালান, জাটকা নিধন বন্ধ করা, ডাকাত দমনে কোস্টগার্ডের সক্ষমতা বাড়ছে বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী উপকূলে নিয়মিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির জন্য কোস্টগার্ডকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, ‘বৃক্ষরোপণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি আমাদের পরিবেশ রক্ষায়ও সহায়ক হবে। কাজেই একাজটা অব্যাহত রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলব। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, সেই মর্যাদা ধরে রেখে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলব।’
খুলনা গেজেট/এনএম