খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  মার্কিন শ্রম প্রতিনিধি দল ঢাকা আসছে আজ

সম‌ঝোতার মাধ্যমে সরকা‌রের রাজস্ব ফাঁ‌কি!

ত‌রিকুল ইসলাম

খুলনার কয়রা উপ‌জেলার ঐতিহ্যবা‌হী আমা‌দী হাটের খাস আদা‌য়ের উন্মুক্ত নিলা‌মে সম‌ঝোতার গন্ধ পাওয়া গে‌ছে। ১৫ দি‌নের ব্যবধা‌নে প্রথম নিলা‌মের তুলনায় দ্বিতীয় নিলা‌মে স‌র্বোচ্চ দর চার ভাগ ক‌মে যায়। প্রথম নিলা‌মে সা‌ড়ে ছয় লাখ টাকা‌ ডাকা ব্যক্তি সম‌ঝোতার মাধ্যমে প‌রের নিলা‌মে তিনগুণ ক‌ম টাকায় হাট বু‌ঝে নেন।

সং‌শ্লিষ্ট সূ‌ত্র থেকে জানা যায়, ১৪৩১ স‌নে ইজারার সময় আমাদী হা‌টের সি‌ডিউল বি‌ক্রি না হওয়ায় প্রথম ছয় মাস খাস আদায় করা হয়। প্রথম ছয় মা‌সে আমাদী ইউনিয়ন ভূ‌মি অ‌ফি‌সের না‌য়ে‌বের মাধ্যমে ২ লাখ ৩৭ হাজার ২০০ টাকা খাস আদায় ক‌রা হয়। গত ১৬ অ‌ক্টোবর চল‌তি স‌নের পরবর্তী ছয় মা‌সের খাস আদা‌য়ের জন্য কয়রা উপ‌জেলা প‌রিষদ মিলনায়ত‌নে উন্মুক্ত নিলাম অনু‌ষ্ঠিত হয়। ওই নিলা‌মে স্বতঃস্ফুর্তভা‌বে ১৪ থে‌কে ১৫ জন ব্যক্তি অংশগ্রহণ ক‌রেন। অনু‌ষ্ঠিত নিলা‌মে স‌র্বোচ্চ দর উঠে ৮ লাখ ৫৮ হাজার টাকা। স‌র্বোচ্চ দরদাতা জুবা‌য়ের ডাক টে‌বি‌লে টাকা জমা না দি‌য়ে চলে যায়। পরবর্তী‌তে সরকারি কোষাগা‌রেও টাকা জমা না দেওয়ায় এবং দ্বিতীয় স‌র্বোচ্চ দরদাতাও হাট নি‌তে সম্মত না হওয়ায় নি‌লাম বা‌তিল হয়। পরবর্তী‌তে ৩০ অ‌ক্টোবর সা‌ড়ে পাঁচ মা‌সের জন্য দ্বিতীয়বা‌রের মত উন্মুক্ত নি‌লাম অনু‌ষ্ঠিত হয়। প্রথম নিলা‌মে তৈ‌য়েবুর রহমান না‌মের এক ব্যক্তি ৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা পর্যন্ত ডাক ও‌ঠেন। অথচ একই ব্যক্তি ১৫ দিন প‌রে অনু‌ষ্ঠিত দ্বিতীয় নিলা‌মে মাত্র ২ লাখ ২৬ হাজার টাকা ডাক দি‌য়ে স‌র্বোচ্চ দরদাতা হন এবং সরকা‌রি কোষাগা‌রে ভ্যাট ট্যাক্সসহ টাকা জমা দি‌য়ে হা‌টের দখল বু‌ঝে নেন। দ্বিতীয় নিলা‌মে মাত্র তিন জন ব্যক্তি অংশগ্রহণ ক‌রেন। তারা সক‌লে পাশাপা‌শি ব‌সেন এবং প্রতি‌যোগীতামূলক ডাক হয়‌নি ব‌লে নিলাম ক‌ক্ষে উপ‌স্থিতদের সূ‌ত্রে জানা যায়। এ নি‌য়ে জনম‌ণে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খা‌চ্ছে।

আমাদী হা‌টের বা‌র্ষিক সম্ভব্য ইজারা মূল্য ধরা হয় ১০ লাখ ৬৮ হাজার ১২৭ টাকা। প্রথম নিলা‌মে ডাক টে‌বি‌লে জামানত রাখা হয় ৫ হাজার টাকা আর দ্বিতীয় নিলা‌মে ডাক টে‌বি‌লে জামানত রাখা হয় ১ লাখ ৭ হাজার টাকা।

একটা সূ‌ত্রে জানা যায়, ২ লাখ টাকার বি‌নিম‌য়ে পরবর্তী নিলা‌মে সম‌ঝোতা হয়। এই টাকার ভাগ ক‌য়েকজন পায়।

প্রথম নিলা‌মে স‌র্বোচ্চ দরদাতা জুবা‌য়ের হো‌সেন ব‌লেন, জেদা‌জে‌দি বাঁধায় অ‌নেক বে‌শি টাকা ডাক ও‌ঠে। ছয় মা‌সের জন্য ভ্যাট ট্যাক্স দি‌য়ে ১০ লাখ ৭০ হাজার টাকা জমা দি‌তে হত। লোকসান হ‌বে ব‌লে টাকা জমা দেইনি। ডিফল্ডার হি‌সে‌বে সু‌যোগ না থাকায় প‌রের নিলা‌মে অংশগ্রহণ ক‌রি‌নি।

আমাদী হা‌টের খাস আদা‌য়ের দা‌য়িত্ব বু‌ঝে পাওয়া‌ তৈ‌য়েবুর রহমান জানান, দ্বিতীয়বা‌রের নিলা‌মের মাধ্যমে তি‌নি হাট পান। সব কিছু মি‌লে প্রায় ৫ লাখ টাকা লা‌গে। গত নিলা‌মে তি‌নি ৬ লাখ টাকা উঠার প‌রে আর ডা‌কেননি। গত নিলা‌মে জুবা‌য়ের ৬ লা‌খ টাকার হাট ১২ লাখ ডে‌কে না নি‌য়ে চ‌লে যায়। সা‌ড়ে ৮ লাখ ডাক‌লেও ভ্যাট ট্যাক্স সব মি‌লে প্রায় ১২ লাখ আসে।

কয়রা উপ‌জেলা সহকারী ক‌মিশনার (ভূ‌মি) বিএম তা‌রিক-উজ জামান ব‌লেন, প্রথমবা‌রের ডা‌কে যি‌নি স‌র্বোচ্চ দরদাতা হন, তি‌নি ডাকটে‌বি‌লে টাকা জমা দেন‌নি। এছাড়া ২য় স‌র্বোচ্চ দরদাতাও হাট নি‌তে সম্মত হন‌নি। স‌র্বোচ্চ দরদাতা ও ২য় স‌র্বোচ্চ দরদাতার বাইরে কাউকে দেয়ার নিয়ম না থাকায় বি‌ধি মোতা‌বেক পুনরায় উন্মুক্ত ডা‌কের ব্যবস্থা করা হয়। শর্তভ‌ঙ্গের ফ‌লে প্রথম ডা‌কের স‌র্বোচ্চ দরদাতার জামানত বা‌তিল ক‌রে সরকা‌রি কোষাগা‌রে জমা দেয়া হয়। বি‌ধি মোতা‌বেক প‌রিচ্ছন্নভা‌বে নিয়মানুযা‌য়ি দুইবার ডাক অনু‌ষ্ঠিত হয় এবং স‌র্বোচ্চ দরদাতা সরকা‌রি কোষাগা‌রে টাকা জমা দেওয়ায় তা‌কে হা‌টের দখল বু‌ঝে দেয়া হয়।

কয়রা উপ‌জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুলী বিশ্বাস ব‌লেন, বি‌ধি মোতা‌বেক যথাযথ নিয়মানুযা‌য়ি হা‌টের উন্মুক্ত ডাক অনু‌ষ্ঠিত হ‌য়ে‌ছে।

উল্লেখ্য, সর্ব‌শেষ ১৪২৯ স‌নে ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকায় ইজারা নেন ওই ইউনিয়‌নের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জু‌য়েল। এরপ‌রের দুই বছর ইজারার সি‌ডিউল বিক্রি না হওয়ায় খাস আদায় করা হ‌চ্ছে। ১৪৩০ স‌নে ৪ লাখ ৭০ হাজার একশ’ টাকা খাস আদায় ক‌রে সরকা‌রি কোষাগা‌রে জমা ক‌রা হয়।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!